আলিপুর আদালতের সামনে এ দিন একের পর এক অভিযোগ তোলে সিবিআই৷ সিবিআই-এর তরফ থেকে অভিযোগ করা হয়, ‘শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি করা হয়েছে পরিকল্পনা করে৷’’ পার্থ চট্টোপাধ্যায়, এসপি সিনহা, সুবীরেশ ভট্টাচাৰ্য, কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়, প্রদীপ সিং, প্রসন্ন রায়, অশোক সাহাকেও সোমবার আলিপুর জাজেস কোর্টে পেশ করা হয়। এ দিন বিচারক সিবিআই-এর তদন্তকারী অফিসারদের ডাকেন। বিচারক প্রশ্ন করেন, ‘চার্জশিট হয়েছে? তদন্তের বিষয়ে বলুন।’ সিবিআই তদন্তকারী অফিসার মলয় দাস বলেন, ‘‘আমরা তাঁদেরই গ্রেপ্তার করেছি, যাঁদের দুর্নীতিতে যোগ পাওয়া গিয়েছে। সৌমিত্র সরকারের নাম এফআইআর-এ থাকা সত্ত্বেও, আমরা গ্রেফতার করিনি। কারণ এখনও নির্দিষ্ট কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।’’ তখন বিচারক বলেন, ‘আর তদন্তর দরকার নেই?’ তদন্তকারী অফিসার বলেন, ‘‘তদন্ত প্রয়োজন আছে। বেআইনিভাবে নিয়োগ হয়েছে।’’ বিচারক এর পর বলেন, ‘‘আর কত সময় লাগবে?’’ সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসার বলেন, ‘‘অন্তত ছ’মাস তো লাগবেই। প্রতিদিন তদন্তের চিত্র বদল হচ্ছে। কেস ডায়েরি দেখলে বুঝতে পারবেন।’’
advertisement
আরও পড়ুন : বাড়ছে মৃত্যু, সংক্রমণ! কোন জেলায় কত ডেঙ্গি আক্রান্ত, দেখে নিন এক ঝলকে!
কেস ডায়েরি দেখার পর বিচারক বলেন, ‘‘কেস ডায়েরিতে দেখা যাচ্ছে ওএমআর শিটে ১৭ পেয়েছিলেন, তাঁদের ৫৭ করে দেওয়া হয়েছে। বেআইনিভাবে নিয়োগ হওয়া, প্রার্থীদের বয়ান দেখান।’’ এর পর সিবিআইয়ের পক্ষ থেকেও চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করেন সিবিআই-এর আইনজীবী বলেন আদালতের কাছে, ‘‘প্রতিদিন নতুন নতুন তথ্য বেরিয়ে আসছে। প্রত্যেকেরই ভূমিকা আছে। তদন্ত এখনও শেষ হয়নি।’’ বিচারক বলেন, ‘‘চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। তদন্ত অনন্ত কালের জন্য চলতে পারেনা।’’ সিবিআইয়ের আইনজীবী বলেন, ’’প্রতিদিন নতুন তথ্য আসছে।বহু প্রমাণ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। কিছু তথ্য প্রমান এখনও জোগাড় করা বাকি আছে। সিবিআই আইনজীবি বলেন, ‘‘৩৫০ জন ক্যান্ডিডেট-এর মধ্যে ১০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। বাকি আছে ৩৪০ জন। এঁরা হাইকোর্টে মূল মামলার পিটিশন দাখিল করেছিলেন। বহু চাকরি প্রার্থীর পরিবার, জীবন নষ্ট হয়েছে৷ ফলে এই পর্যায়ে জামিন দেওয়া যাবে না অভিযুক্ত ধৃতদের। তদন্ত এখনও চলছে। এখনও আরও গ্রেফতার বাকি আছে।’’
এদিন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আইনজীবী বলেন, ‘‘রাজনৈতিক কী বিষয় আছে, তা আমি বলতে পারব না। কিন্তু প্রমাণের আগেই চোর বলে দেওয়া হচ্ছে। একটা মামলায় (গ্রুপ সি ) চার্জশিট হয়েছে। এসএসসি নবম দশম মামলায় তিনি সিবিআই দফতরে হাজির হয়েছিলেন। সব সহযোগিতা করেন। সিবিআই ছেড়ে দেয়। সেদিন ধরেনি মানে তিনি সহযোগিতা করেছেন। এর পর নবম দশমের চার্জশিট হয়েছে, পার্থ নাম নেই। তার মানেই প্রমান নেই। কিন্তু অন্য একটি এসএসসি মামলায় তাঁর নাম রয়েছে।’’
পার্থর আইনজীবী আরও বলেন, পাঁচজনের উপদেষ্টা কমিটিতে ছিলেন না পার্থ চট্টোপাধ্যায়। উপদেষ্টা কমিটির কর্মকাণ্ডের মধ্যে এমআইসি (মানে পার্থ) কোনও ষড়যন্ত্রয়ে সামিল এ রকম তথ্য আসেনি এখনও। প্রমাণ হওয়ার আগে আমি (পার্থ ) চোর নই, জানান পার্থর আইনজীবী। এর কিছুক্ষণ পর পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমি সিবিআই-এর বক্তব্য শুনব, আমি এখন যাব না।’’ আইনজীবীকে লক্ষ্য করে বলেন, ‘‘আমি বসতে পারি?’’ আইনজীবী বলেন, ‘‘আপনি সামনে দিকে এসে বসুন।’’ এরপর আইনজীবীর পিছনের বেঞ্চে বসেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন আইনজীবীকে, ‘‘তুমি বলছো না কেন? সরকার তো অনুমোদন দেয়নি (চার্জশিট)। এটা বলছো না কেন?’’ আইনজীবী বলেন, ‘এটা সিবিআই-এর বিশেষ আদালত নয়। বলে এখানে লাভ নেই।’’ পার্থ বলেন, ‘‘ওটা ( চার্জশিটের অনুমোদন ) তো বলতে হবে।’’
এদিন পার্থ চট্টোপাধ্যায় কোর্টে থেকে বার করে লক আপে আনার সময় পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে সৌগত রায়ের মন্তব্য প্রসঙ্গে জিগ্যেস করা হলে বলেন, ‘‘দলের সঙ্গে আছি। সবাই ভাল থাকুন। দু-পক্ষের সওয়াল জবাব শুনে আদালত ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।’’
ARPITA HAZRA
