সাংবাদিক সম্মেলনে এদিন শিক্ষামনত্রী অষ্টম শ্রেণীর সিলেবাসে ছোট্ট পরিবর্তনের কথা ঘোষণা করেন ৷ বলেন, ‘সিঙ্গুর আন্দোলনের পাশাপাশি পাঠ্যপুস্তকে ঠাঁই পাবে তেভাগা আন্দোলনও ৷ অষ্টম শ্রেণিতে পড়ানো হবে এই দুই আন্দোলনের ইতিহাস ৷’ চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকেই নতুন বই পাঠানো হবে স্কুলে স্কুলে ৷
সিঙ্গুরের মত তেভাগাও চাষীদের আন্দোলন ৷ সময়টা ১৯৪৬-৪৭ ৷ স্বাধীনতার পর পরই ব্রিটিশ আমলে শুরু হওয়া চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথার বিরুদ্ধে ফসলের ন্যায্য অধিকার পেতে আন্দোলন শুরু করেন চাষীরা ৷ কিষাণ সভা অর্থাৎ বর্তমানের CPI পার্টির নেতৃত্বে চলে আন্দোলন ৷ জমিতে উৎপাদিত মোট ফসলের তিন ভাগের দুইভাগ পাবে চাষী, এক ভাগ পাবে জমির মালিক- এটাই ছিল তেভাগা আন্দোলনকারীদের দাবি । এর আগে বর্গাপ্রথায় জমির সমস্ত ফসল মালিকের গোলায় উঠত এবং ভূমিহীন কৃষক বা ভাগ-চাষীর জন্য উৎপন্ন ফসলের অর্ধেক বা তারও কম বরাদ্দ থাকত। যদিও ফসল ফলানোর জন্য বীজ ও শ্রম দুই দিতেন চাষীরা ।
advertisement
এরপরই দৃশ্যপট পরিবর্তন ৷ ২০০৬ সাল, টাটা প্রকল্পের জন্য সরকারের অধিগৃহীত জমি ফেরত চেয়ে আন্দোলন শুরু করেন চাষীরা ৷ এর এক দশক পর ২০১৬ সালে ৩০ অগাস্ট সুপ্রিম কোর্টে শেষ পর্যন্ত জয় পায় সিঙ্গুরের চাষীরা ৷ এরপরই কৃষকদের হৃত জমি পুনরুদ্ধারের এক দশকের বাস্তব লড়াইকে এবার পাঠ্যবইয়ের অন্তর্ভুক্ত করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন শিক্ষামন্ত্রী ৷
জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড, মে দিবসের শ্রমিক আন্দোলনের সঙ্গেই সিঙ্গুরের কৃষক আন্দোলনের তুলনা করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এই জয়ের পিছনে রয়েছে দশ বছরের রক্ত ঝরা আন্দোলন ৷ জোর করে কৃষকের বহু ফসলি জমি কেড়ে নেওয়ার পর যেভাবে সমাজের সর্বস্তরে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে শিক্ষনীয় ৷
জমিহীনদের জন্য লড়াই করতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন তাপসী মালিক সহ ১৪ জন ৷ জমিহারা কৃষকদের অধিকার চেয়ে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তাঁর সেই কর্মকান্ড, সর্বোপরি আন্দোলনের সমস্ত কর্মসূচি বিস্তারিত পড়া উচিত পড়ুয়াদের বলে দাবি জানান শিক্ষামন্ত্রী ৷
এরপরই সিলেবাস কমিটির কাছে কৃষকদের জয়কে পাঠ্যক্রমে আনার আবেদন করে শিক্ষা দফতর ৷
৩১ অগাস্ট, ২০১৬ , এই দিনই সিঙ্গুরের জমি অধিগ্রহণকে অবৈধ ঘোষণা করে ঐতিহাসিক রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট। অধিগৃহীত জমি কৃষকদের ফেরানোরও নির্দেশ দেয় সর্বোচ্চ আদালত। ঐতিহাসিক রায়ের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সিঙ্গুর আন্দোলনকে সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করার কথা ঘোষণা করেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ঠিক হয়, অষ্টম শ্রেণির ইতিহাসের বইয়ে অর্ন্তভুক্ত হবে সিঙ্গুরের কৃষক আন্দোলন। তবে আলাদা অধ্যায় হিসেবে নয়। তেলঙ্গানা, চিপকোর মতো কৃষক আন্দোলনের পাশাপাশি সিলেবাসে থাকবে সিঙ্গুর ও তেভাগা আন্দোলন।