১৭ মে নারদ কাণ্ডে চার ওজনদারের গ্রেফতারি থেকে তাঁদের জামিন মঞ্জুর পর্যন্ত কোনও কিছুই সঠিকভাবে হয়নি, অভিযোগ সিবিআই-র।নিজাম প্যালেসের বাইরে বিক্ষোভ, পাথর ছুঁড়ে বিশৃঙ্খলা তৈরি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে, দাবি সলিসিটর জেনারেলের। সিবিআই আদালতে আইনমন্ত্রী-সহ অন্যান্য পদাধিকারীদের পৌঁছে যাওয়া আর তারপর ৪ ওজনদারের জামিন। এমন ঘটনায় ধারণা তৈরি হয়ে গেছে এমনটা করলে যে কারও জামিন সম্ভব, এই ধারণা ভাঙতেই সিবিআই বৃহত্তর বেঞ্চের কাছে আবেদন করেছে ১৭ মে সিবিআই বিশেষ আদালতে সমস্ত বিচারপ্রক্রিয়া বাতিল করার। সোমবার এই নিয়ে ৫ দিন শুনানি হল হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চে।ফিরহাদ হাকিম ও সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি এ দিন সওয়ালে বলেন, সিবিআই ভিড়তন্ত্র (মোবোক্রাসি) চাদরের আড়ালে বাকি সব ইস্যুকে বাদ দিতে চায়। তবে এ দিনও বৃহত্তর বেঞ্চের চার বিচারপতির প্রশ্নবাণে জর্জরিত হতে হয় তাঁকে।
advertisement
ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল প্রশ্ন ছুঁড়ে জানতে চান, সিবিআই অফিসের বাইরে প্রতিবাদ কোনও সাধারন মানুষের নয়। সিবিআই অফিসে প্রতিবাদ ছিল কিছু সমর্থকের, যারা সাংবিধানিক পদে আসীন তাঁদের সমর্থকদের। কেন আইনমন্ত্রী সিবিআই কোর্ট চত্বরে যাবেন? কোর্টের বাইরে তিনি ছিলেন না, কিন্তু তিনি রইলেন সিবিআই কোর্ট চত্বরে। সচরাচর কি তিনি সিবিআই আদালত চত্বরে যান? প্রশ্নের ঝাঁঝ বাড়িয়ে বিচারপতি সৌমেন সেন জানতে চান, আইনমন্ত্রীর মতন প্রভাবশালী ব্যক্তি সিবিআই কোর্ট চত্বরে গিয়ে বিচারপ্রক্রিয়ায় কোনও প্রভাব খাটাননি, এটাকে কীভাবে ব্যাখা করবেন। উত্তরে সিনিয়র অ্যাডভোকেট অভিষেক মনু সিংভি জানান, একজন ক্যাবিনেট মন্ত্রী অন্যজন ৫০ বছরেে এমএলএ। তাই তাঁদের সমর্থনে বেরিয়ে আসেন বিধায়করা। বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় জানতে চান, মামলাকারী (সিবিআই) দেখলেন অন্যপক্ষ জজের চেম্বারে গিয়েছেন, সেখান থেকে বেরিয়ে আসছেন আবার সে নিজেও (সিবিআই) আটকে আছে অফিসে, তাহলে তার ধারণা হবে না বিচার পক্ষপাতদুষ্ট? অথবা এই ধারণা হবে না বিচারক প্রভাবিত?
উত্তর দিতে গিয়ে অভিষেক মনু সিংভি আদালতে জানান, সিএম ও অন্যান্য পদাধিকারীদের তরফে এক রাজনৈতিক কর্মকান্ডের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া ছিল ১৭ মে-র ঘটনা। তবে এই স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া কোর্টের বিরুদ্ধে নয় এটা ছিল সিবিআই বিরুদ্ধে। গণতন্ত্রে এমনটা হতেই পারে। আমরা গর্বিত আমাদের দেশের বর্ধনশীল গণতন্ত্র নিয়ে। এর জন্যই এখানে বিল্ডিং বা হাইওয়েজ তৈরিতে সময় লাগে চিনের থেকেও বেশি। আমরা ১০-১২ বছর পিছিয়ে গণতন্ত্রের জন্যই। অস্বস্তি বাড়িয়ে বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডনের প্রশ্ন করেন, যেসব মন্ত্রীরা পাঁচ দিন আগে শপথ নিলেন তাঁরা যদি গিয়ে বিরোধিতা করেন জনমানসে কী তার প্রভাব পরবে না? বিক্ষোভের প্রয়োজনীয়তা কোথায় ছিল? অভিষেক মনু সিংভির উত্তর, মুখ্যমন্ত্রী বা বাকি মন্ত্রীরা আইনে আস্থা নেই বলে বিক্ষোভ দেখাননি। বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে সিবিআইয়ের বিরোধিতা করে। তাঁদের সহকর্মীরা একসঙ্গে তাই বোঝাতে গিয়েছিলেন।
মঙ্গলবার ফের নারদ মামলার শুনানি কলকাতা হাইকোর্টে। তবে এ দিন কিছুটা অস্বস্তি রাজ্যের জন্যও। অ্যাডভোকেট জেনারেল রাজ্যের হলফনামা দাখিলের কথা জানালে, ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি জানান, "রাজ্যের হলফনামা এই মুহূর্তে অপ্রয়োজনীয়।" সিবিআই-র হয়ে সওয়াল করা সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতাও তীব্র বিরোধিতা করেন রাজ্যের হলফনামার। অ্যাডভোকেট জেনারেলের যুক্তি দেন, ১৭ মে নিজাম প্যালেসের আইন শৃঙ্খলা জনিত বিষয় নিয়েই হলফনামা। আপাতত রাজ্যের হলফনামাকে পাশে রেখেই শুনানি এগোবে জানিয়েছে বৃহত্তর বেঞ্চ।
ARNAB HAZRA