কামারহাটি, বরাহনগর, হালিশহর, দমদম সহ রাজ্যের ৬০টি পুরসভায় গ্রুপ C, D সহ একাধিক পোস্টে বেআইনি ভাবে নিয়োগের অভিযোগ উঠে এসেছে৷ কিন্তু, জানেন কি, এই দুর্নীতির গোটা বিষয়টা সামনে এসেছিল সামান্য একটা ডাস্টবিন থেকে৷ শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে তল্লাশি করতে গিয়ে অন্যতম অভিযুক্ত অয়ন শীলের সল্টলেকের অফিসের ডাস্টবিন থেকে উদ্ধার হয়েছিল পুর নিয়োগ সংক্রান্ত ওএমআর শিট সহ আরও নানা গুরুত্বপূর্ণ নথি৷
advertisement
প্রসঙ্গত, অয়ন শীলের সংস্থাই শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষার ওএমআর শিট তৈরি করেছিল৷ ওই সংস্থাই তা মূল্যায়নের দায়িত্বেও ছিল৷ পুর নিয়োগেও তাই৷ উক্ত সংস্থাটিকে প্রশ্নপত্র ছাপানো থেকে শুরু করে ওএমআর শিট মুদ্রণ ও স্ক্যানিং এবং চূড়ান্ত মেধা তালিকা তৈরির মতো সমস্ত কাজের বরাত দেওয়া হয়েছিল। অভিযুক্তরা অর্থের বিনিময়ে বেশ কয়েকটি পুরসভায় বেশ কিছু অযোগ্য প্রার্থীদের অবৈধ নিয়োগে সহায়তা করেছিল বলে অভিযোগ।
এবার এই বেআইনি নিয়োগে পুর প্রধান বা নেতাদের কোনও যোগ ছিল কি না, সেটাই তদন্ত করে দেখতে চায় সিবিআই৷ পাশাপাশি, পুরমন্ত্রী হিসাবে পুর নিয়োগে দুর্নীতির বিষয়টি ফিরহাদ হাকিমের গোচরে ছিল কি না, সেটাও জিজ্ঞাস্য তদন্তকারীদের৷
আরও পড়ুন: বড় বিপাকে মদন! তল্লাশির পাশাপাশি চলছে জিজ্ঞাসাবাদ, দক্ষিণেশ্বরের বাড়িতেও CBI
সিবিআই সূত্রের দাবি, শিক্ষক নিয়োগের মতো পুরসভাতেও ইঞ্জিনিয়র থেকে শুরু করে টাইপ রাইটার, ঝাড়ুদার, সমস্ত স্তরেই নাকি বিক্রি হয়েছে চাকরি৷ জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত অয়ন শীলের ডায়েরিতে সাংকেতিক চিহ্ন অনুসারে লেখা ছিল কয়েকজনের নাম। আর তাঁর মধ্যেই মদনের নামও সাংকেতিক ভাষায় লেখা ছিল বলে অভিযোগ৷ সেই কারণেই এদিন কামারহাটির তৃণমূল বিধায়কের বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালানো হয় বলে জানা গিয়েছে৷
পাশাপাশি, কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গিয়েছে, অয়ন শীল মদন মিত্রের ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসাবে পরিচিত ছিলেন৷ এই তথ্য কি সঠিক? চিনলেও কতদিন ধরে, কতটা ভাল করে অয়ন শীলকে চিনতেন মদন? সূত্রের খবর, এদিন জিজ্ঞাসাবাদে এই সমস্ত প্রশ্নই মদন মিত্রের কাছ থেকে জানতে চাইতে পারেন গোয়েন্দারা৷
তদন্তকারীদের দাবি, পুরসভার অন্দরে কর্মীরাদের একাংশই এজেন্ট হিসাবে কাজ করতেন। পোস্টের গুরুত্ব অনুযায়ী ছিল চাকরির দর৷ ৫ থেকে ৬ লক্ষ টাকার বিনিময়ে এক একটি চাকরি ‘বিক্রি’ হতো। এই এজেন্টরা কীভাবে কার নির্দেশে কাজ করত? কোথায় কার কার কাছে গিয়েছে সেই টাকা? তারই শিকড়ে পৌঁছতে চাইছেন গোয়েন্দারা৷
রবিবার সকাল পৌন ১০টা থেকে ৯টা বেজে ৫০ মিনিট নাগাদ মদন মিত্রের ভবানীপুরের বাড়িতে পৌঁছয় ৬ সদস্যের সিবিআই দল৷ বাইরে থেকে সশস্ত্র বাহিনী দিয়ে ঘিরে ফেলা হয় গোটা বাড়ি৷ বাইরে থেকে পরিচারক-পরিচারিকা তো বটেই বাড়ি সদস্য ছাড়া কাউকেই ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না বাড়ির ভিতরে৷ গোটা বিষয়টি ঘিরেই আঁটোসাঁটো নিরাপত্তা ব্যবস্থা৷
আরও পড়ুন: নিয়ে নেওয়া হল ফিরহাদের ফোন, আইনজীবীদের বাড়িতে ঢুকতে বাধা, আটকানো হল মেয়েকেও
বাড়িতে তল্লাশি চালানোর পাশাপাশি, এদিন সকাল ১১টা নাগাদ মদন মিত্রকে জিজ্ঞাসাবাদও শুরু করেন আধিকারিকেরা৷ শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত করতে গিয়ে অভিযুক্ত অয়ন শীলের সল্টেলেকের অফিসের ডাস্টবিন থেকে উদ্ধার হয়েছিল পুর নিয়োগের ওএমআর শিট সহ আরও নানা নথি৷ সেই সব নথির ভিত্তিতে টাকার বদলে চাকরির অভিযোগ তোলে ইডি৷ আদালতে পুর নিয়োগ দুর্নীতির বিষয়টি জানানোও হয়৷ এর পরেই বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে শুরু হয় তদন্ত৷ পরবর্তীকালে পুর নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে এফআইআর দায়ের করার পরে আলাদা করে তদন্ত শুরু করে তদন্ত৷