৬ মাস সময় পেলেই সব কিছু বদলে দিতাম বলে মন্তব্য করলেও, সেই মিঠুনই আফসোস করে বলেন, ”আমি হতাশ। কিছুই করতে পারছি না। রাজ্যের পরিস্থিতি খুবই খারাপ। আসলে, সিস্টেমটাই খারাপ হয়ে গিয়েছে। সরকার ও প্রশসনের সর্বস্তরে চুরি, দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে। আইএএস, আইপিএস’রাও দুর্নীতিগ্রস্থ। ফলে, রাজনৈতিক পরিবর্তন হলেও, প্রকৃত পরিবর্তন হওয়া খুবই কঠিন।
advertisement
বিজেপির ছাত্র সংগঠন এবিভিপি-র অনুষ্ঠানে খুব স্বাভাবিক কারণেই উঠে এসেছে রাজ্যের শিক্ষা দুর্নীতির প্রসঙ্গ। এই প্রসঙ্গে মিঠুন আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, রাজ্য ও আপামর বাঙালি ছাত্র সমাজকে পেছনের দিকে ঠেলে দিতে এটা কোনো গভীর রাজনৈতিক চক্রান্ত হতে পারে। ইতিহাসের কথা মনে করিয়ে মিঠুন বলেন, ”এটা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে হয়েছে। একটা দেশ, একটা জাতি, একটা প্রজন্মকে শেষ করে দিতে, ধ্বংস করে দিতে সেই প্রজন্মের শিক্ষাকে নিশানা করা হয়েছে। এ রাজ্যে সেটাই হচ্ছে। এর চেয়ে বড় অপরাধ ( ক্রাইম) আর কিছু হতে পারে না। কারণ, পড়াশুনো করলে, শিক্ষিত হলে, তুমি প্রশ্ন করবে, প্রতিবাদ করবে। তাই, কোনো দেশ, জাতি বা প্রজন্মকে ধ্বংস করতে হলে সবার আগে তার এডুকেশন, শিক্ষাকে ধ্বংস করো।”
আরও পড়ুন: ওড়িশার হাসপাতালে ১৭০০ জনের লম্বা লাইন! কী ঘটল এমন? এক আবেদনই দারুণ ফল
প্রতিবাদী বাঙালির অতীত নিয়েও হতাশা ঝরে পড়েছে মিঠুনের গলায়। মিঠুন বলেন, বাংলায় যখনই কিছু হয়েছে, আমরা জেগেছি। রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ হয়েছে। গণতন্ত্রে প্রতিবাদই আসল। সেই প্রতিবাদ এখন আমরা করতে পারছি না। এরপরেই, বুদ্ধিজীবীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন,” যারা একসময় প্রতিবাদে সামনের সারিতে থাকতেন, সঠিক ভাবেই থাকতেন। এখন তাদের দেখা যায় না। তারা জেনে শুনেই প্রতিবাদে গলা মেলান না। আসলে বুদ্ধিজীবীরা এখানে বিক্রি হয়ে গিয়েছেন। তাদের আত্মা বিক্রি হয়ে গিয়েছে। জিনিস বিক্রি হলে, তা আবার কেনা যায়। কিন্তু, আত্মা বিক্রি হলে তা কেনা যায় না।”
আরও পড়ুন: আতঙ্কে মোড়া রাত পেরিয়ে ২৯ জনকে নিয়ে হাওড়ায় এল রিলিফ ট্রেন! কী পরিস্থিতি তাঁদের?
২০১৪ থেকে রাজ্যে পরিবর্তনের ডাক দিয়ে এ রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করলেও, এখনও সেই লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। রাজনৈতিক মহলের মতে, উত্তরপ্রদেশ ও গো বলয়ের রাজনৈতিক সংস্কৃতি দিয়ে বাঙালির মনজয় চেষ্টা এর অন্যতম কারণ। বিজেপির এই সংস্কৃতি বাঙালি কখনও গ্রহণ করেনি। নানা সময়ে অমিত শাহ থেকে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতরা রাজ্যের বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে আলাদা করে বৈঠক করেছেন। কাছে টানার চেষ্টা করেছে পদ্ম শিবির। কিন্তু, সেভাবে সফল হয়নি। মিঠুনকে দলে টেনে, দলের কোর কমিটিতে রেখে বিশেষ করে বাংলায় তার সেলিব্রেটি ইমেজকে কাজে লাগাতে চায় বিজেপি। যদিও, অমর্ত্য সেনের মতো বিশিষ্ঠজনদের সঙ্গে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ও রাজ্যের বিজেপি নেতৃত্বের আচরণে বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের প্রতি বিজেপির মনোভাব নিয়ে সংশয় আরও বেড়েছে।
সম্ভবত, বিজেপির এই ‘বুদ্ধিজীবী রসায়ন’ মাথায় রেখেই মিঠুন বলেন, ”আমি বিজেপিকে সমর্থন করতে বলি না। মানবিক কারণে তারা অন্তত মানুষের পাশে তো দাঁড়াতেই পারেন।” কিন্তু, বাংলার বুদ্ধিজীবীদের জন্য এই আবেদন জানানোর মঞ্চ থেকেই বুদ্ধিজীবীদের ‘আত্মা বিক্রি হয়ে গেছে’ বলে মিঠুনের এই কটাক্ষ নতুন করে বিতর্কের সূত্রপাত করল বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।