মুম্বাই থেকে সবে মাত্র কলকাতার উপকণ্ঠে বরানগর সিঁথির মোড়ে এক চিলতে ফ্ল্যাটে থাকতে শুরু করেছিলেন নবম শ্রেণীর ঋষভ রায় এবং তার বাবা,মা। আর তার মাঝেই বিপর্যয়। হঠাৎ করেই ঋষভের জ্বর আসে,তাপমাত্রা ১০২ এর ওপরে,সঙ্গে পেটে যন্ত্রণা। এক আত্মীয়ের সূত্রে দেরি না করে ই এম বাইপাসের পাশের ফর্টিস হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ সুমিতা সাহার কাছে ঋষভকে নিয়ে যান বাবা মা। চিকিৎসক প্রথমে সাধারণ প্যানক্রিয়াসের সমস্যা বলে ঋষভকে ভর্তি করেন। এক দিন কাটতেই চিকিৎসকের অভিজ্ঞ চোখে ব্যাপারটা ঠিক লাগেনি। তিনি কয়েকটি প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেন এম আই এস সি (MISC) রোগে আক্রান্ত ঋষভ। চিকিৎসক সুমিতা সাহা জানান,' ঋষভ এবং তার পরিবার দ্রুত আমাদের কাছে আশায় অনেকটা সুবিধা হয়েছে যদি কয়েক দিন দেরি করে আসত, তবে সত্যি কি হত বলা যায়না!'
advertisement
এম আই এস সি কি রোগ? মাল্টি সিস্টেম ইনফ্লেমেটরি সিনড্রোম ইন চিল্ড্রেন গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা WHO শিশুদের মধ্যে এই রোগের কথা জানায়। মূলত উপসর্গহীন বা অল্প উপসর্গযুক্ত করণা আক্রান্ত হওয়ার পর বা করোনা মুক্ত হওয়ার সাধারণত দু মাসের মধ্যে এই রোগ ধরা পড়ে। একদিনের বেশি উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর,বমি, পেটে যন্ত্রণা,মাথা ব্যথা,ডায়রিয়া, চোখ লালচে হয়ে যাওয়া,গায়ে গোটা বেরোনো,হৃদস্পন্দন অত্যধিক বেড়ে যাওয়া,খুব দ্রুত নিশ্বাস নেওয়া কারণ --এটার কারণ এখনো জানা যায় নিতবে করোনা এর জন্য ইমিউনিটি সিস্টেমে মারাত্মক সমস্যা হয়সতর্ক বার্তা --দ্রুত ধরা পড়লে শিশু সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠে।দেরি হলে শিশুর হার্ট,লিভার,ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।খুব কম ক্ষেত্রে যদিও শিশুর এই অঙ্গগুলো সম্পূর্ণ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা,এমনকি মৃত্যু অব্দি হতে পারে।
একমাত্র সন্তান ঋষভ হাসপাতালে দশ দিন আইসি ইউ তে। ভয়ে সিঁটিয়ে গেলেও চিকিৎসকের ওপর পূর্ণ আস্থা ছিল তার পরিবারের। ঋষভ বাড়ি ফেরার পর তাই ওই চিকিৎসককে ঈশ্বরের অন্য রূপ বলছেন তারা। ঋষভের মা আত্রেয়ী রায় চোখের জল মুছতে মুছতে বলেন,' একমাত্র ছেলের অবস্থা দেখে হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে গেছিল, ফর্টিস হাসপাতালের চিকিৎসক নার্স থেকে শুরু করে ওয়ার্ডবয়রা প্রত্যেকে যেভাবে সাহায্য করেছে, সেই ঋণ কোনদিন ভুলবো না। বিশেষত চিকিৎসক সুমিতা সাহাযেভাবে আমার ছেলেকে যেভাবে পুনর্জন্ম দিল,তার জন্য কৃতজ্ঞতা জানানোর কোনও ভাষা নেই।'
আর একসময় ইঞ্জিনিয়র হওয়ার স্বপ্ন দেখা ঋষভ হাসপাতালের বেডে শুয়ে মৃত্যুকে খুব কাছ দেখার পরে সুস্থ হয়ে এখন শুধুমাত্র চিকিৎসকই হতে চায়। যে তার প্রাণ বাঁচিয়েছে,সেই চিকিৎসককে তার রোল মডেল করে এগোতে চায় ঋষভ। গড়িয়া বিডি মেমোরিয়াল স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র ঋষভ রায় বলেন,' হাসপাতালের বেডে শুয়ে যখন অক্সিজেনের মাত্রা কমতে শুরু করেছিল, তখন শুধু ভাবছিলাম,আমি কি আর বেঁচে ফিরব? কিন্তু সব সময় চিকিৎসক সুমিতা সাহা যেভাবে আমাকে অভয় বাণী দিয়েছিল তাতে আগামী দিনে আমি মনে করি আমি যদি ঐরকম চিকিৎসা করতে পারি ভবিষ্যতে, তবে আমার জীবন সার্থক হবে।'
চিকিৎসকরা যদিও বলছেন,বাড়িতে নিজে কোনোভাবেই চিকিৎসা নয়,দোকান থেকে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে শিশুকে খাওয়ানো নয়,বরং দ্রুত চিকিৎসকের দ্বারস্থ হলে কোন ভয়ের কারণ নেই। শিশু বিশেষজ্ঞ সুমিতা সাহা বলেন,'আমরা সব সময় রোগীকে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করি।তবুও যখন মাঝে মাঝে পারি না তখন আমাদেরও মনে কষ্ট হয়। আর এই ঋষভকে সুস্থ করে বাড়ি ফেরানো আমার কাছে চ্যালেঞ্জ ছিল।আপনার প্রত্যেকটি সচেতন থাকি এবং নিজে নিজে যদি বাড়িতে চিকিৎসা না করি তবে নিঃসন্দেহে আমরা এই করোনাকে জয় করতে পারব।'
ABHIJIT CHANDA