পুরীর মতো কাঠের রথ নয়। জগন্নাথ, বলরাম বা সুভদ্রার মতো আলাদা আলাদা রথ নয়। এখানে রথ হল একটিই। এখানে রথ হল লোহার। ১৩৬ বছরের পুরানো সেই রথই এখনও পুজো হয়ে আসছে হুগলি জেলার মাহেশে। মাহেশের রথযাত্রা উৎসব ৬২৪ বছরের পুরানো। প্রায় ৫০ ফুট উচ্চতার এই রথ আগে কাঠের ছিল। যদিও দীর্ঘ দিন ধরে সেই রথ পুজিত হতে হতে কাঠের সেই রথে ক্ষয় ধরতে শুরু করে। শ্যামবাজারের বসু পরিবারের সাথে মাহেশের অধিকারী পরিবারের দীর্ঘ দিনের যোগাযোগ। তারা জগন্নাথ মন্দিরের সেবক। তারা ইচ্ছা প্রকাশ করেন নতুন রথ তৈরি করে দেবেন। ১৩৬ বছর আগে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় কাঠের রথ বদলে ফেলা হবে। তখনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় কাঠের বদলে রথ হবে লোহার। সেই রথ এখনও যা পুজিত হয়ে আসছে৷
advertisement
১৩৬ বছরের এই রথ সেই সময় তৈরি করতে খরচ হয়েছিল ২০ হাজার টাকা। মাহেশের এই রথ পরিচিত নীলাচল নামে। শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু একাধিকবার এই রথ যাত্রায় অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি মাহেশের নাম দেন নব নীলাচল। সেই অনুযায়ী মাহেশের রথ পরিচিত নীলাচল রথ নামে। মন্দিরের প্রধান সেবায়েত সৌমেন অধিকারী জানিয়েছেন, "ঐতিহাসিক এই রথ যাত্রায় রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব অবধি যোগদান করেছিলেন। এই রথের প্রতিটি অংশে ইতিহাস জড়িয়ে আছে।" এই রথে প্রতি বছর জগন্নাথ, বলরাম, সুভ্রদা'কে বসানোর পরে একটি বিশেষ পুজো করা হয়। সেই পুজো দামোদর পুজো নামে খ্যাত।এখানে রথ পুজো হয়। তিন তলা এই রথে যেখানে অন্যান্য বছর জগন্নাথ-বলরাম-সুভ্রদা'কে বসানো হয়, এবার সেখানে রথের নীচে একটি ছবি রাখা হয়েছে। সেখানেই সকলে পুজো দিচ্ছেন। তবে রথকে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। রথের রশিতে টান না পড়লেও তার পুজোয় কোনও ফাঁক রাখতে চায় না মাহেশের অধিকারী পরিবার। শুধু রথ নয়, বিশেষ দিনে বিশেষ ভোগ নিয়েও মাহেশে ভক্তদের উৎসাহ আছে। রথ যাত্রায় এখানে ভোগ হিসেবে থাকে পোলাও, খিচুড়ি, আলুরদম, ধোঁকার ডালনা, পনীর ও পায়েস। সোজা রথ থেকে উল্টো রথ অবধি প্রতিদিন নানা রকমের পদ রান্না করে দেওয়া হয় জগন্নাথ-বলরাম-সুভ্রদা'কে।