শুক্রবার সন্ধের পরপরই হঠাৎ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় খড়্গপুরের বিজেপি বিধায়ক হিরণের একটি ছবি ভাইরাল হতে শুরু করে। ভাইরাল হওয়া ছবিতে দেখা যাচ্ছে, পশ্চিম মেদিনীপুরের তৃণমূল কংগ্রেসের দায়িত্ব প্রাপ্ত নেতা অজিত মাইতির পাশে বসে রয়েছেন খড়্গপুরের বিজেপি বিধায়ক। আর তাঁদের মাঝখানে তৃণমূল কংগ্রেসের দলীয় প্রতীক। আর এই ছবি ভাইরাল হতেই শুরু হয়ে গিয়েছে তীব্র জল্পনা।
advertisement
আরও পড়ুন: এবার কি তৃণমূলে 'ঘর ওয়াপসি'? বিজেপি বিধায়ক হিরণের ভাইরাল ছবি ঘিরে জোর শোরগোল!
প্রসঙ্গত, চলতি মাসের ১০ জানুয়ারি বিশেষ সূত্র মারফত খবর চাউড় হয়েছিল, বিজেপির দুই বিধায়ক তৃণমূল কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার সঙ্গে দেখা করেছেন৷ যদিও তাঁরা কারা, সে বিষয়ে উচ্চবাচ্য করেননি তৃণমূলের কোনও নেতা। এমনকি, তৃণমূল কংগ্রেস শিবির গোটা বিষয়টি নিয়ে কার্যত মুখে কুলুপ এঁটে বসেছিল।
তবে হিরণের ছবি ভাইরাল হওয়ার পরেই মুখ খুলেছেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। কুণালের দাবি, হিরণের ছবিটি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের ক্যামাক স্ট্রিটের অফিসে তোলা। তবে, পাশাপাশি তিনি এ-ও জানান, হিরণের 'ঘরেফেরা'র বিষয়ে সিদ্ধান্ত দলের শীর্ষ নেতৃত্বই নেবেন। পাশাপাশি, তাঁর কটাক্ষ, তৃণমূল যদি ৫ মিনিটের জন্যেও দরজা খোলে তাহলে গোটা বঙ্গ বিজেপি-ই উঠে যাবে।
আরও পড়ুন: ত্রিপুরায় 'একলা চলো' নীতি তৃণমূলের, ভোটের আগে প্রচারে মমতা-অভিষেক
যদিও ভাইরাল হওয়া ছবিটি পুরনো বলে দাবি করছেন বিজেপি নেতৃত্ব। এমনকি, এই বিষয়ে নজর কেড়েছে সন্ধে ৮ টা বেজা ৪৯ মিনিটে করা বিজেপি বিধায়ক হিরণের একটি তাৎপর্যপূর্ণ পোস্ট। পুরনো একটি ভিডিও ট্যুইট করে বিধায়ক ক্যাপশন দিয়েছেন, 'এটি একটি পুরনো ভিডিও, আজকে পোষ্ট করলাম'। সঙ্গে লেখা 'জয় শ্রী রাম', 'ভারত মাতা কি জয়'।
এরপরেই বিজেপি সমর্থকদের কমেন্টের বন্যা বয়ে গেছে পোস্টের নীচে। অনেকেই দাবি করেছেন, এই পোস্ট করে হিরণ বোঝাতে চেয়েছেন, যে ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে তা, পুরনো ছবি, আজ পোস্ট করা হয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্য করতে শোনা যায়নি বিজেপি বিধায়ককে।
অভিনেতা থেকে নেতা হয়ে ওঠা হিরণের রাজনীতিতে হাতখড়ি কিন্তু তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের হাত ধরেই। দীর্ঘদিন তৃণমূল কংগ্রেসের সহ সভাপতি ছিলেন হিরণ। তবে একুশের নির্বাচনের আগে হঠাৎ করেই ফুলবদল করতে দেখা যায় তাঁকে। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার পরে তাঁকে খড়্গপুর লোকসভা কেন্দ্রের টিকিট দেয় বিজেপি। ভোটে জয়ীও হন হিরণ।
কিন্তু, রাজনীতির অন্দরে কানাঘুঁষো খবর, সাম্প্রতিক অতীতে বিজেপি-র সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে হিরণের। আর এই দূরত্ব বাড়ার অন্যতম কারণ, পশ্চিম মেদিনীপুরের ভূমিপুত্র তথা বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষের সঙ্গে তাঁর মতানৈক্য। যদিও প্রকাশ্যে কেউ-ই কারও বিরুদ্ধে মুখ খোলেননি কখনও।
এর মধ্যেই হিরণের এই ছবি ভাইরাল হওয়ায় নতুন করে জল্পনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরে জনসভা করবেন অভিষেক বন্দোপাধ্যায়। রাজনীতির কারবারিদের প্রশ্ন, তবে কি সেখানে সভাতেই যোগ দেবেন হিরণ?
এর আগে তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিক নেতা-নেত্রী দাবি করেছিল, বিজেপির একাধিক নেতা-বিধায়ক-সাংসদ তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন৷ এমনকি, অভিষেক বন্দোপাধ্যায়কে কাঁথির সভা থেকে বলতে শোনা গিয়েছিল, "দরজা খুলব। ৫ সেকেন্ডের জন্য খুলব?" এবার কি তেমনই কোনও ঘটনা ঘটতে চলেছে। যদিও পোস্ট পুরনো না নতুন, তা নিয়ে দড়ি টানাটানি শুরু হয়ে গেল ঘাযফুল এবং পদ্ম শিবিরের মধ্যে।