একইসঙ্গে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে যে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে তারও সমাধান পাওয়া যাবে ৷ এই মামলা চলাকালীনই টেট পরীক্ষার ফলপ্রকাশে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল আদালত ৷ ফলে কাল মামলার রায়দানের পরই জানা যাবে কবে বেরবে টেটের রেজাল্ট ৷
২০১৬ সালের ৩১ মার্চের পর অপ্রশিক্ষিত টেট প্রার্থীদের নিয়োগের বিরোধিতা করে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছিলেন কিছু প্রশিক্ষিত টেট পরীক্ষার্থী ৷ সেই মামলার শুনানি শেষেই এদিনই টেট পরীক্ষার রায়দানের কথা ছিল ৷ কিন্তু ২০০৯-র পর থেকে টেট প্রশিক্ষণকেন্দ্রের বেশিরভাগই স্বীকৃতিহীন ছিল বলে আজ আদালতে জানায় রাজ্য। বিচারপতির পালটা প্রশ্ন, রাজ্য স্বীকৃতিহীন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আইনত কী ব্যবস্থা নিয়েছে? মামলার শুনানি শেষ হলেও নতুন করে ওঠা এই সব প্রশ্নের ভিত্তিতে রায়দান আপাতত স্থগিত রাখেন বিচারপতি সিএস কারনান। শীঘ্রই রায়দান হবে , জানালেন বিচারপতি।
advertisement
রাজ্যে প্রাথমিক শিক্ষক পদে প্রশিক্ষণহীনদের নিয়োগের আশা শেষ। ২০১৫-এ প্রাথমিক শিক্ষক পদে প্রশিক্ষণহীনদের নিয়োগে জন্য কেন্দ্রকে চিঠি দেয় রাজ্য। ছাড়পত্র দেয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক। ২০১৬-র ৩১ মার্চের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে বলে কেন্দ্র। সময়সীমা পেরিয়ে গেলে প্রশিক্ষণহীনদের নিয়োগের বিরোধিতা করে মামলা দায়ের করা হয়। বুধবার হাইকোর্টে সেই মামলার চূড়ান্ত রায়দানের কথা ছিল।
নিয়মে বদল, পুজোর আগেই রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগ
কিন্তু নতুন করে ওঠা কিছু প্রশ্নের ভিত্তিতে পিছিয়ে যায় রায়দান। শুনানির সময়ে রাজ্যের আইনজীবীর যুক্তি ---
------২০০৯-র পর ৪৩৭ টি টেট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের বেশিরভাগই স্বীকৃতিহীন ছিল
------সেই সব কেন্দ্রের পড়ুয়াদের শংসাপত্রও বৈধ নয়
----- ২০১৫-য়ে টেটের বিজ্ঞপ্তি জারির সময় তাই প্রশিক্ষিত প্রার্থীর অভাব ছিল
রাজ্যের যুক্তিতে পাল্টা প্রশ্ন করেন বিচারপতি সিএস কারনান, ২০০৯-র পর থেকে রাজ্য সরকার এই স্বীকৃতিহীন প্রতিষ্ঠানগুলির বিরুদ্ধে আইনত কী ব্যবস্থা নিয়েছে?
জবাবে সরকারি আইনজীবী জানান,
--এখন রাজ্য সরকারের অনুমোদিত স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান আছে
----- কোর্স শেষ করতে সময় লাগবে আরও ২ বছর
-----২০১৭-র মধ্যে পর্যাপ্ত সংখ্যক প্রার্থী প্রশিক্ষিত হয়ে যাবেন
মামলাকারীর আইনজীবীরা এতে তীব্র বিরোধিতা করেন। আর এই সব প্রশ্নের ভিত্তিতে রায়দান আপাতত স্থগিত রাখেন বিচারপতি সিএস কারনান।
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত টেট উত্তীর্ণরা চাকরিতে অগ্রাধিকার পাবেন। তারপরেও শূন্যপদ থাকলে প্রশিক্ষণহীনরা নিযুক্ত হবেন। হাইকোর্টে জানিয়েছিলেন রাজ্যের আইনজীবী। তবে এই ঘোষণার পর প্রাইমারি টেট মামলায় বড়সড় ধাক্কা খেলেন প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীরা ৷ টেট নিয়ে কেন্দ্রের দেখানো পথেই ঘুরে আসতে হল রাজ্যকে।
শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রতিধ্বনিই এর আগের দিন শোনা যায় হাইকোর্টে বিচারপতির গলায়। আজ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, মামলা তুলে নিলেই রাজ্যে ৬৫ হাজার শিক্ষক নিয়োগ করবে সরকার। আর এদিন কলকাতা হাইকোর্টে টেট মামলায় বিচারপতির মন্তব্য, মামলার জন্য ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সব পক্ষ। জরুরি ভিত্তিতে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ প্রয়োজন। এরপরই ৩১শে অগাস্ট মামলার রায় দেবে বলে জানায় আদালত ।
‘রাজ্য শিক্ষক নিয়োগের চেষ্টা চালাচ্ছে’-পার্থ চট্টোপাধ্যায়
তার আগে মামলাকারীকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের সঠিক সংখ্যা জানিয়ে হলফনামা দিতে বলে আদালত। কিন্তু এদিন ফের প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয় ৷ ২০১৫-এ আবেদনকারীদের মধ্যে যতজন প্রশিক্ষিত প্রার্থী ছিল, তার থেকে বর্তমানে প্রশিক্ষণপ্রার্থীদের সংখ্যা অনেক বেড়েছে ৷ এরপরই বিচারপতি টেট মামলার রায়দান স্থগিত রাখার কথা ঘোষণা করেন ৷
২০১৫-এ টেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের সবার আগে চাকরি দেবে সরকার। এরপর শূন্যপদ থাকলে প্রশিক্ষণহীনদের চাকরি দেওয়ার ব্যাপারে ভাবা হবে। নথি অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ১৯ হাজার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রার্থী রয়েছেন। ৪০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ করবে রাজ্য।