৫০ হাজার টাকা পেনশন পেতেন মা ৷ তাঁর মৃত্যুর পরও নিয়মিত পেনশন তুলে গিয়েছে ছেলে শুভব্রত ৷ বেকার ছেলে ঘরে বসে বসে ৫০ হাজার টাকা আদায়ের লোভ সামলাতে পারেনি ৷ সেকারণেই মায়ের মৃতদেহ গত প্রায় তিন বছর ধরে আগলে রেখেছিল সে ৷
এফসিআইয়ের প্রাক্তন কর্মী বীণা মজুমদার প্রায় তিন বছর আগে বেহালার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান। তাঁর স্বামী গোপালচন্দ্র মজুমদারও ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার আধিকারিক ছিলেন। স্ত্রী-র মৃত্যুর পর আর সৎকার করেননি। ৯০ বছর বয়সী গোপালচন্দ্রবাবুর কথাতেও অসংলগ্নতা ধরা পড়ে। তাঁর বিশ্বাস ছিল, ছেলেই স্ত্রীকে বাঁচাবেন। এরপরই শুভব্রত বেরিয়ে এসে আমাদের প্রতিনিধিকে আটকান। ঘরে ঢুকতে বাধা দেন। বাধা পেয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বেহালা থানার পুলিশকে খবর দেন নিউজ ১৮ বাংলার প্রতিনিধি। তারপরই ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ। আসেন ডিসি সাউথ ওয়েস্ট ডিভিশন। কিন্তু, পুলিশকেও প্রথমে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন বীণাদেবীর ছেলে। কিছু না পেয়ে ফিরে যায় পুলিশ।
advertisement
কিছুক্ষণ পর আবার ঘরে ঢোকে পুলিশ। এবার খোঁজ মেলে বীণা মজুমদারের দেহ। তালাবন্ধ একতলার একটি ঘরের ফ্রিজারের মধ্যে রাখা ছিল তাঁর দেহ। পেটের নাড়িভুঁড়ি বের করে রাসায়নিক মিশিয়ে দেহ সংরক্ষণ করে রাখা হয়। জানা গিয়েছে, বেকার শুভব্রত দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন মেডিক্যাল জার্নাল নিয়ে পড়াশোনা করতেন। কীভাবে দেহ সংরক্ষণ করতে হবে সে বিষয়েও চর্চা করতেন তিনি। শুভব্রতকে থানায় নিয়ে গিয়েছে পুলিশ। এদিকে, শুভব্রতর আরও একটি কীর্তি সামনে এসেছে। জানা গিয়েছে, দু’বছর ধরে লাইফ সার্টিফিকেট দেখিয়ে মায়ের পেনশনের টাকা তুলত ছেলে।
এই ঘটনায় হার মেনে যাবে রবিনসন স্ট্রিটও। রবিনসন স্ট্রিটের পার্থ দেও হয়তো শিউরে উঠতেন এই দৃশ্য দেখলে। প্রায় তিন বছর আগে মৃত মায়ের দেহ অবিকৃতভাবে বিশাল ফ্রিজারের মধ্যে বিভিন্ন রাসায়নিকের সাহায্যে রেখে দেওয়া ছিল। বেহালার ২৫ নম্বর জেমস লং সরণির ঘটনা। তারাতলার খুব কাছেই এই ঠিকানা। প্রশস্ত রাস্তার দোতলা বাড়ি। নিউজ ১৮ বাংলার কাছে খবর ছিল একতলায় দেহ রাখা আছে। দীর্ঘক্ষণ ডাকাডাকির পর এক বৃদ্ধ নেমে আসেন। যিনি এই বাড়ির কর্তা গোপালচন্দ্র মজুমদার । তিনি ফুড কর্পোরেশন ইন্ডিয়ার অফিসার ছিলেন। তাঁর স্ত্রী বীণা মজুমদারও ছিলেন এক অফিসে। তাঁদের একমাত্র সন্তান শুভব্রত।
বাবাকে চেপে ধরলে তিনি স্বীকার করেন প্রায় তিন বছর আগে স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। বেহালার বেসরকারি হাসপাতালেই মৃত্যু হয়। তারপর থেকে মৃত স্ত্রীকে আবার বাঁচিয়ে তুলবেন ছেলে, এমনই বিশ্বাস ছিল গোপালচন্দ্রবাবুর । যদিও অসক্ত বৃদ্ধ মানসিকভাবে বিধ্বস্ত। সংবাদমাধ্যমকে দেখে নানারকম কথা বলতে থাকেন। প্রথমে তিনি বলেন, ছেলে নেই দিল্লিতে আছে। বেহালা থানায় খবর দেওয়ার পর পুলিশ আসে ৷ পুলিশ এলে শুভ দরজা খোলে না। অনেক পরে খোলে। সেসময় দুর্বোধ্য ভাষায় কথা বলতে থাকে। একতলার তালাবন্ধ ঘর খুলতে রাজি হয় না সে। পুলিশ চাপ দিয়ে খোলে। দুটি আলাদা ঘরে দুটি ফ্রিজার। তার একটিতে ছিল মায়ের অবিকৃত দেহ। বুক চেড়া। নাড়িভুঁড়ি বের করে সেলাই করে রাসায়নিক দিয়ে সংরক্ষণ করে রাখা ছিল দেহ। শুভকে এরপরই আটক করে পুলিশ ৷