সন্ধে সাড়ে ছ'টা নাগাদ জাদুঘর চত্বরে প্রথম গুলি চলে৷ কয়েক মিনিটের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় পার্ক স্ট্রিট থানা এবং নিউ মার্কেট থানার পুলিশ৷ পরের পর গুলির শব্দে তখন এলাকায় রীতিমতো আতঙ্ক, ছোটাছুটি৷
পরিস্থিতি বুঝে নিয়ে অপারেশনের জন্য বিশেষ দল তৈরি করে ফেলে কলকাতা পুলিশ৷ ঘটনাস্থলে পৌঁছয় কলকাতা পুলিশের কম্যান্ডো বাহিনী৷ জাদুঘরে পৌঁছন নগরপাল বিনীত গোয়েল৷ বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরে নগরপালের নেতৃত্বে সিাইএসএফ-এর বারাকের ভিতরে প্রবেশ করেন কম্যান্ডোরা৷ দলের ছিলেন ডিসি সেন্ট্রাল রূপেশ কুমার, জয়েন্ট সিপি ক্রাইম মুরলিধর শর্মারাও৷ তৈরি রাখা হয় বিপর্যয় মোকাবিলা দলকেও৷
advertisement
সূত্রের খবর, সিআইএসএফ বারাকের ভিতরে ঢুকে প্রথমে পুলিশ বাহিনী বুঝতে পারেনি আততায়ী কোথায় রয়েছে৷ হ্যান্ড মাইক ব্যবহার করে তাঁকে আত্মসমর্পণের জন্য বলা হয়৷ কিছুক্ষণ পরে পুলিশ কর্তারা বুঝতে পারেন, বারাকের ভিতরে একটি ঘরের ভিতরে বসে রয়েছেন অভিযুক্ত কনস্টেবল অক্ষয় কুমার শর্মা৷ তখনও তার হাতে ধরা একে ৪৭ রাইফেল৷
এর পরেই হ্যান্ড মাইক ব্যবহার করে দূর থেকে অক্ষয়কে বোঝানোর কাজ শুরু হয়৷ অক্ষয় জানায়, সে পুলিশের সঙ্গে সামনাসামনি কথা বলতে চায়৷ নিজের কিছু ক্ষোভের কথাও জানায় ওই সিআইএসএফ জওয়ান৷ কিন্তু শর্ত দেয়, কোনওরকম অস্ত্র ছাড়া তার কাছে যেতে হবে পুলিশ কর্তাদের৷
অক্ষয়ের এই শর্তে রাজি হয় পুলিশ৷ কিন্তু এই কথোপকথনের মধ্যেই ওই ঘরটি ঘিরে ফেলে পুলিশের কম্যান্ডোরা৷ পুলিশ কর্তারা অক্ষয়ের কাছে গেলে সে যদি কোনওভাবে ফের হামলা চালায়, এই আশঙ্কা থেকেই চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়ে রাখে কম্যান্ডো বাহিনী৷ শেষ পর্যন্ত অবশ্য কার্যত প্রাণের ঝুঁকি নিয়েই অক্ষয়ের কাছে গিয়ে তাঁকে নিরস্ত্র করেন পুলিশকর্তারা৷ এর পরেই তাকে ওই ঘর থেকে বের করে এনে পুলিশের গাড়িতে তোলা হয়৷ বেরিয়ে যাওয়ার সময় সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে হাতও নাড়ায় অভিযুক্ত জওয়ান৷ কেন সে এই কাণ্ড ঘটালো, আপাতত অক্ষয়কে জেরা করে সেটাই জানার চেষ্টা করছে পুলিশ৷ তবে রক্ত না ঝরিয়েই সশস্ত্র সিআইএসএফ জওয়ানকে বাগে এনে প্রশংসা কুড়োচ্ছে কলকাতা পুলিশের অপারেশন মোজো৷
মোজো শব্দটির বাংলা অর্থ করলে দাঁড়ায় জাদু বা অলৌকিক শক্তি৷ যেহেতু কলকাতা জাদুঘরে এই ঘটনা ঘটেছে এবং অস্ত্রের ব্যবহার না করেই শুধুমাত্র কথার জাদুতে বুঝিয়ে সুঝিয়ে অভিযুক্তকে বাগে আনাই ছিল লক্ষ্য, সম্ভবত সেই কারণেই এই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে 'অপারেশন মোজো'৷
সহ প্রতিবেদন- মানস বসাক