পড়শিদের উৎসাহে প্রথম প্রতিমা যখন গড়লেন তখন দ্বাদশ শ্রেণী। শুরুর দিনের কথা বলতে গিয়ে এবার থামলেন সুকুমার। প্রতিমা গড়ার আনন্দ যেমন ছিল, তেমন ছিল অভাবের সংসার। নাম না জানা এমন কাউকে কেন প্রতিমা গড়ার অর্ডার দেবে পুজো কমিটিগুলো? এই টানাপোড়েনের মধ্যেই কলেজ ও মূর্তি গড়ার কাজ চলতে থাকল। কিন্তু সেই ভাবে উপার্জন নেই। সংসারের চাপ আসতে থাকে, লক্ষ্য হয়ে ওঠে চাকরি পাওয়ার তাগিদ। শুরু হয় একের পর এক চাকরির পরীক্ষা দেওয়ার প্রস্তুতি। তবে বন্ধ হয়নি খড়-মাটি নিয়ে মূর্তি গড়ার কাজ। হাত পাকতে শুরু করে। এক মৃৎশিল্পীর সহযোগী হয়ে কাজ শুরু হয়ে যায় । এরই মাঝে বাড়িতে এসে পৌঁছয় নিয়োগ পত্র।
advertisement
আরও পড়ুন- কলকাতায় শেষবারের মতো আসছেন ‘পদ্মের উমা’! অপেক্ষা করছে বড় চমক, বলছেন উদ্যোক্তারা
গাড়ি নিয়ে জেমস লং সরণি দিয়ে ছুটছেন, কোনও এক সিগন্যালে ওয়াকিটকি হাতে দাঁড়িয়ে সুকুমার। সুকুমার মণ্ডল, ২০০৯ সালে কলকাতা পুলিশে চাকরি পান তিনি। ট্রেনিং শেষে প্রথম বছর কয়েক রিজার্ভ ফোর্সে ছিলেন। ডিউটি করতেন কলকাতা পুরসভায়। পরবর্তীতে ট্রাফিক গার্ডে কনস্টেবল পদে নিজের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। বর্তমানে কর্মরত জেমস লং সরণি ট্রাফিক গার্ডে। রোজ সেই ডিউটি সামলে বাড়ি ফিরে ঢুকে পড়েন বাঁশদ্রোণির ৩০ ফুট এলাকার নিজের স্টুডিওতে। সেখানেও এবার তৈরি হচ্ছে ছ’টি দুর্গা প্রতিমা।
ফি বছর কম বেশি পাঁচ থেকে সাতটি দুর্গা গড়েন সুকুমার। তবে করোনা পরবর্তী সময়ে বাজার মন্দা। তবে যে হাতে ওয়াকিটকি, সেই হাতেই তুলি- হচ্ছে চক্ষুদান। দুটো ভিন্ন জগৎ কি ভাবে মেলাতে পারেন সুকুমার? নিজেই বললেন সেই কথা। সাদা উর্দি পরতেই শৃঙ্খলা কর্তব্যবোধ এই বিষয় চলে আসে, আর এই স্টুডিওতে ঢুকলে যখন তুলি হাতে তুললেই মন শান্ত হয়।শুধু দুর্গা প্রতিমা নয়। কালী জগদ্ধাত্রী থেকে সরস্বতী, গণেশ কিছুই বাদ নেই। সারা বছরই চলতে থাকে মূর্তি গড়ার কাজ। এক দিকে কঠোর শৃঙ্খলার বাহিনীর কর্তব্য অন্যদিকে শিল্প- দুই নিয়েই আগামী পেরোতে চান সুকুমার।