কলকাতা: সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সংঘাত আরও বাড়ল। আগেই সাংসদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়েছিল রাজভবন। মঙ্গলবার হেয়ার স্ট্রিট থানায় শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। তবে, তারপরে সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফেও এসেছে পাল্টা হুঁশিয়ারি৷ পাশাপাশি, রাজভবনের তরফে তাঁর বিরুদ্ধে যেসব ধারায় মামলা করা হয়েছে সেগুলি কোনওটাই প্রযোজ্য নয় বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন আইনজীবী কল্যাণ। সেইসঙ্গে বোসের বিরুদ্ধে দ্বিচারিতা-সহ রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্টতা, রাজ্যের বিরুদ্ধে ‘উস্কানিমূলক মন্তব্য’, ‘ভাগাভাগির রাজনীতি’ করার মতো গুরুতর অভিযোগ এনেছেন সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। কল্যাণ জানিয়েছেন, সি ভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে তিনি থানায় অভিযোগ করবেন।
advertisement
রাজভবনের এই আইনি পদক্ষেপের খবর প্রকাশ্যে আসার পরেই স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে পাল্টা তোপ দেগে কল্যাণ বলেন, ‘‘একটা চিঠি দেওয়া মানেই এফআইআর নয়।’’ নিজের অবস্থানে অনড় থেকে রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসকে বেনজির আক্রমণ করে সাংসদ বলেন, ‘‘রাজ্যপাল নিজেই উস্কানিমূলক কথা বলেছেন এবং রাজভবন যে সমস্ত ধারার উল্লেখ করেছে, সেগুলি আসলে রাজ্যপালের ক্ষেত্রেই প্রয়োগ করা উচিত। উনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে লোক খ্যাপাচ্ছেন।’’
আরও পড়ুন: ‘মা-কে খুন করে দিত, ভারত না থাকলে…,’ মোদির প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ শেখ হাসিনার ছেলের
রবিবার সকাল থেকে সাংসদ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সাংবাদিক মিলিয়ে ১০০ জনের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল রাজভবনের সিংহ দুয়ার। শুধু তাই নয়, সাংসদের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে রাজভবন থেকে কড়া বিবৃতিও জারি করা হয়। শুধু তাই নয়, রাজভবনে বোমা-গুলি খোঁজার জন্য রাজ্যপাল নির্দেশও দিয়েছেন। সেই মোতাবেক বোম্ব স্কোয়াড ও পুলিশ দিয়ে রাজভবনে তল্লাশি করান রাজ্যপাল। রবিবারই রাজভবন সূত্রে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল, সাংসদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগও দায়ের করা হবে। সেই মতো মঙ্গলবার জানা যায় সাংসদের নামে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে।
রাজভবনে অস্ত্র ও বিস্ফোরক মজুত থাকার অভিযোগ তুলে তৃণমূল সংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় যে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছিলেন, তার বিরুদ্ধে একাধিক ফৌজদারি ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে রাজভবনের তরফে। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার বিভিন্ন ধারা অনুযায়ী, শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদের বিরুদ্ধে যে অপরাধের অভিযোগ দায়ের হয়েছে, তাতে সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদণ্ডের সম্ভাবনা রয়েছে। রাজ ভবনের পক্ষে জারি করা বিবৃতিতে এমনটাই বলা হয়েছে।
কল্যাণের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলি গুরুতর ও জামিন অযোগ্য বলেও রাজ ভবনের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হেয়ার স্ট্রিট থানায় ই মেল করে এই অভিযোগ জানানো হয়েছে। ভারতীয় ন্যায় সংহিতা আইনের যে সব ধারায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে, সেগুলি হল ১৫১ ও ১৫২,১৯৭, ১৯৬ এ,১৯৬ বি, ৩৫৩ -১ বি ও ৩৫৩ সি, ৩৫৩-২। রাজ ভবনের পক্ষ থেকে ই-মেল করা অভিযোগে ধারাগুলি উল্লেখ করা হয়েছে। মূলত দেশের ঐক্য, সংহতি এবং সার্বভৌমত্বের প্রতি আঘাত, মানুষকে ভুল বোঝানো এবং হিংসা ছড়ানো সহ একাধিক অভিযোগ করা হয়েছে কলকাতা পুলিশের কাছে।
সোমবারই রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস স্পষ্ট করে বলে দিয়েছিলেন সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এই ধরনের ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মন্তব্য রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, পুলিশি ব্যবস্থা এবং সাংবিধানিক পদমর্যাদার উপর সরাসরি আঘাত করে। শনিবার শ্রীরামপুরের সংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মন্তব্যের পর সোমবার দুপুরে রাজ্যপাল কলকাতায় ফিরে এসে পুলিশের আধিকারিক, কেন্দ্রীয় বাহিনীর সদস্য, বম্ব স্কোয়াডকে ডেকে রাজভবন চত্বরে তল্লাশির নির্দেশ দেন। যদিও রাজ্যপাল পরে জানান, রাজভবনে আপত্তিকর বা সন্দেহজনক কিছুই মেলেনি। তার পরেই মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজভবনের পক্ষ থেকে কলকাতা পুলিশের হেয়ার স্ট্রিট থানায় শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানো হয়েছে৷ তবে রাজ ভবনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতা পুলিশের কোনও প্রতিক্রিয়া এখনও পাওয়া যায়নি৷
