শ্রীরামপুরের সাংসদের এই সিদ্ধান্তে তৃণমূলের অন্দরে রীতিমতো ঝড় উঠেছে৷ কেন কল্যাণ মুখ্যসচেতকের পদ থেকে ইস্তফা দিলেন, তা নিয়েই শুরু হয় জল্পনা৷ কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের সঙ্গে সংঘাতের জেরেই কল্যাণের এই সিদ্ধান্ত কি না, তা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়৷
কেন তিনি পদ ছাড়লেন, সে বিষয়ে মুখ খুলেছেন কল্যাণ নিজেই৷ শ্রীরামপুরের সাংসদ বলেন, ‘মমতাদি অভিযোগ করেছেন লোকসভায় সমন্বয় ঠিক মতো হচ্ছে না, ফলে আঙুল তো আমার দিকে তোলা হচ্ছে৷ তাই আমি ছেড়ে দিলাম৷ শুধু তাই নয়, কল্যাণ অভিযোগের সুরে আরও বলেন, দিদি বলছেন ঝগড়া করছে৷ যাঁরা আমাকে গালাগাল দেয় আমি কি সহ্য করব? দলকে জানিয়েছি, দল তাঁর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ না করে উল্টে আমাকেই দোষারোপ করছে৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভাল ভাব দল চালাক৷ লোকসভায় ভাল করে দল চলুক৷’ তিনি যে মহুয়া মৈত্রের করা মন্তব্যের ক্ষুব্ধ এবং দল ব্যবস্থা না নেওয়ায় হতাশ, তা গোপন করেননি কল্যাণ৷
advertisement
আরও পড়ুন: সরলেন সুদীপ, অভিষেককে গুরুদায়িত্ব দিলেন মমতা! সাংসদদের সঙ্গে বৈঠকে বিরাট ঘোষণা তৃণমূলনেত্রীর
কল্যাণের আরও অভিযোগ, আইনজীবী হিসেবে সুপ্রিম কোর্টে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলা দেখতে হয় তাঁকে৷ আবার সংসদেও মুখ্যসচেতকের দায়িত্ব সামলাতে হয়৷ ক্ষুব্ধ এবং হতাশ কল্যাণ বলেন, ‘সব দায় দায়িত্ব কি একা নেবো? সংসদে কেউ থাকেন না৷ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় অসুস্থ দিনের পর দিন আসেন না, কাকলি মাঝেমধ্যে থাকেন৷ কেউ কেউ শাড়ি পরে সেজেগুঁজে এসে নরেন্দ্র মোদি মুর্দাবাদ বলে চলে যান৷ আমাকে রাজ্য সরকারের মামলা সামলাতে হবে, এসএসসি, ওবিসি মামলা সব দেখতে হবে, আবার সাড়ে দশটা থেকে সংসদে থাকতে হবে, এটা তো হয়না৷’
ক্ষুব্ধ কল্যাণ আরও জানিয়েছেন, ডেপুটি স্পিকার এবং লোকসভায় দলের উপনেতা কাকলি ঘোষ দস্তিদারকে তিনি বলে এসেছেন, এবার থেকে সংসদে যেন তাঁকে পিছনের সারিতে কোনও আসন দেওয়া হয়৷
তবে কল্যাণ দাবি করেছেন, তাঁর পদত্যাগের সঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দলনেতা হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার কোনও সম্পর্ক নেই৷ শ্রীরামপুরের সাংসদ বলেন, দিদি যখন ঠিক করেছেন অভিষেক যোগ্য তাহলে নিশ্চয়ই সমন্বয় ভাল হবে৷ আমি কোনও অন্যায় কথা মানতে পারব না৷ তাতে রাজনীতি ছাড়তে হলে ছেড়ে দেবো৷ অভিষেকের সঙ্গে আমার কোনও মতবিরোধ নেই৷ আমার সঙ্গে যথেষ্ট ভাল সম্পর্ক৷
অভিমানী কল্যাণকে বলতে শোনা যায়, মমতা বন্দ্যেপাধ্যায় যেদিন বলবেন, রাজনীতি ছেড়ে দেব৷ দিদি বলেছেন, লোকসভায় সমন্বয় হচ্ছে না, আমি আমার দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছি৷
সূত্রের খবর, এ দিনের বৈঠকের শুরুতেই লোকসভায় দলের কয়েকজন সাংসদের মধ্যে চলা ব্যক্তিগত সংঘাতের বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তিনি এমনও মন্তব্য করেন, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় দলনেতার দায়িত্বে থাকার সময় এরকম হত না৷ এমন কি, লোকসভায় তৃণমূলের কাজকর্ম দেখার ভার কাকলি ঘোষ দস্তিদার এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেন তৃণমূলনেত্রী৷ এই বৈঠকের পরই পদ ছাড়েন কল্যাণ৷