সূত্রের খবর, গত কয়েকদিন ধরেই লাগাতার যাদবপুর মেন হস্টেলের একাধিক ছাত্রকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছিল পুলিশ৷ ঘটনার দিন ঠিক কী হয়েছিল, কী ভাবে ঘটনাটি ঘটল, কারা কারা সেই সময়ে সেখানে উপস্থিত ছিল, এই সব নিয়েই পড়ুয়াদের কাছে জানতে চাইছিলেন তদন্তকারীরা৷ জানা গিয়েছে, তার মধ্যে চার জনের বয়ানে কিছু অসঙ্গতি আসে৷ তাঁদের মঙ্গলবার রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ করে গ্রেফতার করা হয় এদিন সকালে৷ আর অন্যদিকে সুন্দরবন ও রাজ্যের আরও একটি জায়গা থেকে ২ জনকে গ্রেফতার করা হয়৷
advertisement
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে ধৃতদের নাম মহম্মদ আসিফ অফজল আনসারি, বয়স ২২৷ আসিফ পশ্চিম বর্ধমানের উত্তর আসানসোলের বাসিন্দা৷ যাদবপুরের ইলেক্ট্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র৷ মেন হস্টেলের A2 ব্লকের ৮৪ নম্বর ঘরের আবাসিক৷ দ্বিতীয় জনের নাম মহম্মদ আরিফ, বয়স ১৮, বাড়ি জম্মুতে৷ যাদবপুরের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র৷ হস্টেলের A2 ব্লকের ৯৬ নম্বর রুমে থাকত৷
তৃতীয় জন হলেন, অঙ্কন সরকার, বয়স ২০৷ বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার নারায়ণপুরে৷ ইনিও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র৷ থাকত A2 ব্লকের ৭৬ নম্বর রুমে৷ বুধবার যাদবপুরের এক প্রাক্তনীকেও আটক করা হয়েছে৷ অসিত সর্দার এবছরই সংস্কৃত বিভাগ থেকে স্নাতক হয়েছেন৷ অসিতের বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলিতে৷
আরও পড়ুন: ঘটনার আগে তিন ঘণ্টা ধরে সিনিয়রদের ঘরে…! যাদবপুর কাণ্ডে রেডারে প্রাক্তনী সহ আরও ৪
ইতিমধ্যেই যাঁদের গ্রেফতার করা তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করেই এই ৬ জনের কথা জানতে পারেন তদন্তকারীরা৷ জানা গিয়েছে, ঘটনার দিন নবাগত ছাত্রটিকে চা খাইয়ে সিনিয়রদের ঘরে নিয়ে যান ধৃত সৌরভ চৌধুরী৷ সেখানেই উপস্থিত ছিলেন এই ধৃত মহম্মদ আরিফ-সহ বাকিরা৷ অভিযোগ, ওই ঘরেই প্রায় ৩ ঘণ্টা ছিলেন প্রথম বর্ষের ওই পড়ুয়া৷
তদন্তকারীরা মনে করছেন, ওই তিন ঘণ্টায় ছাত্রটির উপরে এমন কিছু মানসিক নির্যাতন চালানো হয়, বা অত্যাচার করা হয়, যার জেরে সে সেই ঘর থেকে পড়িমড়ি করে বেরিয়ে যায় এবং কোনও ভাবে পড়ে যায়৷ তবে গোটা বিষয়টিই এখনও তদন্ত সাপেক্ষ৷ সবকটি বিষয়ই পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে খতিয়ে দেখছে পুলিশ৷
সূত্রের খবর, এর আগে মহম্মদ আরিফ এই ছাত্রটি দাবি করেছিলেন, ঘটনার দিন প্রথম বর্ষের ওই পড়ুয়াকে তিনি বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাঁর হাত ছাড়িয়েই সে ঝাঁপ মারে হস্টেল থেকে। সেই সময় রীতিমতো ঘামে ভিজে জবজবে ছিল ওই ছাত্র৷ তার জেরেই পিছলে গিয়েছিল আরিফ নামের ওই কাশ্মীরি ছাত্রের হাত৷ কিন্তু, কেন নগ্ন এবং ঘর্মাক্ত ছিল ওই ছাত্র?
তদন্তে জানা গিয়েছে, ঘটনার পরেই অভিযুক্তেরা হস্টেলের সিকিওরিটি গার্ডকে মূল দরজা বন্ধ রেখে, ছোট দরজা খুলে দিতে বলে৷ তারপরে একটি অটো ও একটি ট্যাক্সিকে ডাকা হয়৷ ট্যাক্সিটি আগে পৌঁছলে তার পিছনের সিটে ওই আহত রক্তাক্ত পড়ুয়াকে নিয়েই হাসপাতালে যান আরিফ, সৌরভ সহ অন্যান্যরা৷
তবে এরই মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ফাঁস হয়েছে আরও একটি চ্যাট৷ যদিও সেই চ্যাটের সত্যতা যাচাই করেনি নিউজ ১৮ বাংলা৷ সেই চ্যাটের কথোপকথন অনুযায়ী, ছাত্রটি নীচে পড়ে যাওয়ার পরেও অন্তত ১৫-২০ মিনিট সে সেইভাবেই সেখানে ছিল৷ এর মধ্যেই বসেছিল রাজনৈতিক সংগঠন ‘কালেক্টিভের’ জেনারেল বডি মিটিং৷ অভিযোগ, সেই মিটিংয়েই ছাত্র নেতা অরিত্র মজুমদার ওরফে আলু গোটা বিষয়ের তথ্য প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করেন, বন্ধ করে দিতে বলেন হস্টেলের মূল গেট৷ উপস্থিত সকলকে নির্দেশ দেন, তাঁরা যাতে হস্টেলের কোনও কথা বাইরের কাউকে না বলে, হস্টেলের সমস্যা হস্টেলেই মেটাতে হবে৷
প্রসঙ্গত, এই আলু-র নাকি ব্যাপক প্রতিপত্তি ছিল মেন হস্টেলে৷ তাঁর ভয়ে রীতিমতো কাঁটা হয়ে থাকত সবাই৷ ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এই প্রাক্তনীর দাপট এতটাই ছিল নাকি যে ঘটনার পরেও কেউ এই বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি৷ তবে এই অরিত্র ওরফে আলু সহ একাধিক অভিযুক্ত ছাত্রের এখনও কোনও খোঁজ পায়নি পুলিশ৷ ঘটনার পরেরদিন অর্থাৎ, বৃহস্পতিবার যাদবপুর ক্যাম্পাসে শেষবার দেখা গিয়েছিল এই ‘আলু’কে৷ এরপর তাঁকে ফোন করলেও যোগাযোগ করা যাচ্ছে না৷ এমনকি, তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি তাঁর সংগঠনের অন্যান্য নেতারাও৷