১৯০৯ সালে কলকাতায় প্রথম ট্যাক্সি আসে চৌরঙ্গী রোড এর এখন যেখানে ফ্রাঙ্ক রস ওষুধের দোকান সেখানে ছিল ফরাসি শেভিজাঁ কোম্পানির অফিস। তারাই প্রথম ট্যাক্সি আনে কলকাতায়। চৌরঙ্গী থেকে ছেড়ে মিটার ওয়ালা দুই সিলিন্ডারের ছোট্ট "charron" গাড়ি গুলো চেপে মাত্রর দুজন যাত্রী গন্তব্যে যেতে পারতেন। তখন টকটকে লাল রঙের এই ট্যাক্সি গাড়িগুলোর ভাড়া ছিল মায়ের প্রতি আট আনা। এর কয়েক বছরের মধ্যেই ইন্ডিয়াান মোটর ট্যাক্সি ক্যাব এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কম্পানি ব্যবসা শুরু করে যাত্রীরা ভালবেসে এ কম্পানি বলতো কারন ট্যাক্সি নাম্বার শুরু হতো এ অক্ষর দিয়ে। এই কোম্পানির কাছে ৮০ -৯০ টি ট্যাক্সি ছিল তাদের ম্যালেন স্ট্রিটের গ্যারেজে। প্রথমদিকে ড্রাইভার হিসেবে বাঙালিরাই থাকতো কিন্তু পরে শিখেদের বহাল করা হয়।
advertisement
ইংরেজ আমলের অনেক ব্যবসার মতো এই ব্যবসা ও স্বাধীনতার পর থেকে বন্ধ হয়ে যায়৷ ঠিক সেই সময় ১৯৫৭ সালে হিন্দুস্তান মোটর কোম্পানি নির্মাণ করে অ্যাম্বাসেডর গাড়ি। এই গাড়ির সুবিধা হল এখানে ৪ জন যাত্রী বসতে পারেন এবং তাদের সঙ্গে মালপত্র গাড়ির পিছনে রাখতে পারেন। কিছু বছরের মধ্যেই এই গাড়িগুলো খুুুব জনপ্রিয় হয়৷ তখন কলকাতার ট্যাক্সির রং ছিল কালো এবং হলুদ। কালো ট্যাক্সিগুলি শহরের বুকে চলত আর হলুদ ট্যাক্সিগুলি যেত শহর থেকে দূরে দূরে। কিন্তু কালক্রমে কালো ট্যাক্সি হারিয়ে গিয়ে এখন শহরে শুধু হলুদ ট্যাক্সির আনাগোনা।
ট্রাফিক কন্ট্রোল বোর্ডের অনেক আপত্তি সত্ত্বেও যেমন সরিয়ে দেওয়া যায়নি হাতে টানা রিকশা, ট্রাম, তেমনি সরিয়ে দেওয়া যায়নি হলুদ ট্যাক্সি। আজকাল আধুনিক যুগেও অ্যাপ ক্যাবের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রয়ে গিয়েছে হলুদ ট্যাক্সি৷ আধুুনিক বাজারে প্রতিযোগিতার সঙ্গে সঙ্গে অনেক পরিবর্তন ও ঘটে গিয়েছে।
পাঁচ বছর হয়ে গেল হিন্দুস্তান মোটর কোম্পানি ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছে কিন্তু কলকাতার আইকন এবং নস্টালজিয়া হলুদ ট্যাক্সি।ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অফ ট্যুর অপারেটরস এর আধিকারিক দেবজিৎ দত্ত জানিয়েছেন যে," শুধুমাত্র কলকাতাবাসীর কাছেই নয় এই হলুদ ট্যাক্সি অত্যন্ত প্রিয় অন্যান্য রাজ্যের এবং বিদেশি পর্যটকদের কাছে। তাই যে’কটা হলুদ ট্যাক্সি এখনও মহানগরের রাস্তায় চলে তাদেরকে হেরিটেজ তকমা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে পর্যটক দপ্তর।" হলুদ ট্যাক্সি কলকাতার ঐতিহ্য বহন করে চলেছে।