বুধবার দুপুর থেকে কলকাতার বুক দিয়ে যে ঝড় বইয়েছে শুক্রবারও তার ধ্বংসাবশেষ একই রকম ভাবেই রয়ে গেছে শহরের সর্বত্র। গাছ ভেঙে রাস্তা বন্ধ যেন খুব স্বাভাবিক ঘটনা। তার সঙ্গে নেই বিদ্যুৎ। স্বাভাবিকভাবেই জল নেই বাড়িতে। কার্যত বন্ধ মোবাইল পরিষেবা।
এই দুর্বিষহ পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ব্যবসা করতে নেমে পড়েছে কিছু মানুষ। বাঘাযতীন স্টেট জেনারেল হাসপাতাল ছাড়িয়ে কিছুটা এগোলেই আই ব্লকে খোঁজ পাওয়া গেল এ রকমই অমানবিক একটি ঘটনা। বুধবার আমফান কলকাতায় প্রবেশ করার সময় থেকেই বিদ্যুৎ বন্ধ এলাকায়। তার ওপর হাসপাতালের সামনে দুটি গাছ পড়েছে। বৈদ্যুতিক তারের ওপর গাছ দুটি পড়ে প্রায় উপড়ে ফেলেছে লাইট পোস্টগুলো। অত্যন্ত বিপজ্জনকভাবে ঝুলে রয়েছে তারগুলো। দুদিনেও দেখা মেলেনি পুরসভার বা সিইএসসির কোনও লোকের। এলাকায় রয়েছে বেশ কিছু বহুতল। পুরসভার জলের সরবরাহ চালু থাকলেও বিদ্যুৎ না থাকায় জল রিজার্ভার থেকে ট্যাঙ্কে তোলা সম্ভব হচ্ছে না।
advertisement
বৃহস্পতিবার সকালটা কোনও রকমে কাটলেও বেলার দিকে জলের ঘাটতি পড়ে সবার। তখন জেনারেটর ভাড়া করে মটর চালিয়ে জল তোলার পরিকল্পনা করা হয় পাড়া থেকে। কিন্তু জেনারেটরের ভাড়া শুনে চোখ কপালে ওঠার জোগাড় হয় ওখানকার বাসিন্দাদের। প্রতি ঘন্টায় কোথাও ৪০০ আবার কোথাও ৭০০ টাকা দাবি করা হয়। অর্থাৎ একটা বাড়িতে যদি এক ঘণ্টা সময় লাগে তাহলে তাদের ওই টাকা দিতে হবে। কোনও উপায় না দেখে তাতেই রাজি হন সকলেই। স্থানীয় বাসিন্দা অরূপ চক্রবর্তী বলেন, 'আমাদের কোনও উপায় নেই। বাড়িতে অনেক বয়স্ক মানুষ রয়েছেন বাচ্চারা রয়েছে। একে বিদ্যুৎ নেই তার ওপর যদি জল না থাকে তাহলে জীবনটাই থেমে যাবে। তাই বাধ্য হয়েই আমাদের এই টাকা গুনতে হচ্ছে।'
একই অবস্থা সন্তোষপুরের সার্ভে পার্ক অঞ্চলের। সেখানেও জল বিদ্যুৎ কিছুই নেই। রাস্তাজুড়ে পড়ে রয়েছে বড় বড় গাছ। তাতেই অবরুদ্ধ বাসিন্দারা। সার্ভে পার্কের বাসিন্দা শর্মিষ্ঠা সাহা বলেন, 'যে খাবার জল আমরা ৪০ টাকায় কিনতাম, এখন সেটা ১০০ টাকার কমে কথায় বলছে না।'