করোনার প্রথম ঢেউ তেমন কোনও প্রভাব ফেলতে না পারলেও, দ্বিতীয় ঢেউ কেড়ে নিয়েছে বহু প্রাণ। যার ফলে বহু পুজো কমিটির এ বার পুজোয় মন নেই। শহরের ছোট, বড় পুজো কমিটির অনেকেই করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। অনেক পুজো কমিটির উদ্যোক্তাদের অনেকেও জীবিত নেই। ফলে বাকিদের মন ভেঙে গিয়েছে। ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের সাধারণ সম্পাদক শাশ্বত বসু বলেন, 'কলকাতায় আড়াই হাজারের বেশি পুজো হয়। সব মিলিয়ে ধরলে কম করে ৫০০ জন পুজো উদ্যোক্তা প্রাণ হারিয়েছেন করোনায়।'
advertisement
শহরের প্রায় সব পুজো কমিটি করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বেসামাল। উত্তর কলকাতার অন্যতম বড় পুজো হাতিবাগান সর্বজনীন। এ বার উদ্যোক্তাদের মধ্যে ১১ জন করনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। একই অবস্থা দক্ষিণ কলকাতার চেতলা অগ্রণী এবং ত্রিধারার। ত্রিধারার এ বারে ৭৫তম বছর। সেই নিয়ে অনেক পরিকল্পনা ছিল উদ্যোক্তাদের। কিন্তু তার কিছুই হচ্ছে না। ত্রিধারার লাল্টু মুখপাধ্যায় বলেন, 'অবস্থা এমন হয়েছিল যে ক্লাব ঘরটা সেফ হোম তৈরি করতে হয়েছিল। তাই ঠিক হয়েছে মাথার ওপর ছাউনি দিয়ে শুধুমাত্র পুজো টুকু করব।'
দক্ষিণের মুদিয়ালি পুজো কমিটির ছ'জন সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন করোনায়। মুদিয়ালির অন্যতম উদ্যোক্তা মনোজ সাউ বলেন, 'এই মানসিক অবস্থা নিয়ে পুজো করা যায় না। তবুও মায়ের আরাধনা হবে। কিন্তু যে জন্য মুদিয়ালির পুজোকে মানুষ জানে সে সব এ বার কিছুই হবে না।' ৬৬ পল্লীর পুজোপাগল রজত সেনগুপ্তকেও কেড়ে নিয়েছে করোনা। ৬৬ পল্লীর উদ্যোক্তাদের অন্যতম প্রদ্যুম্ন মুখোপাধ্যায় বলেন, "পুজো হবে কিন্তু একেবারেই ছোট করে। পুজোর আসল লোকটাই নেই।"
উত্তর কলকাতার কাশী বোস লেন দুর্গাপুজো সমিতির সাধারণ সম্পাদক সোমেন দত্ত বলেন, 'করোনাই আমাদের দু'জন চলে গিয়েছেন। কিন্তু মায়ের পুজো তো আর বন্ধ থাকতে পারে না। সবই হবে কিন্তু আড়ম্বর হবে না।' গৌরিবাড়ির মন্টা মিশ্র বলেন, 'প্রথম ঢেউয়ের সময় মাত্র একজন আক্রান্ত হয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় ঢেউয়ে চার জন প্রাণ হারিয়েছেন করোনাই। তার মধ্যে অন্যতম সহ-সভাপতি অনীশ দেব। তারপরও আমরা পুজো করব, শুধুমাত্র মায়ের পুজো বন্ধ করা যায় না বলে।'
