রেড রোডের সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "এটা একটা ইউনাইটেড স্টেজ। ইউনিস্কোর সাহায্যে আগামী দিনে একে আরও শক্তিশালি করতে হবে।" মমতা আরও বলেন, "আমরা ইউনাইটেড। এই দুর্গোৎসব শুধু বাংলায় নয়, বাংলাদেশ, ত্রিপুরা, অসম সর্বত্র হয়। আজ কলকাতায় যে উদযাপন হল, সেটা রাজ্যের সর্বত্র হবে।" এমনকি রেড রোডের অনুষ্ঠানকে ঐতিহাসিক অনুষ্ঠান বলেও দাবি করেন মমতা। কলকাতার সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশ্যাল সায়েন্সেসের অধিকর্তা তপতী গুহ ঠাকুরতা বলেন, "তিন মাস আগে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ইউনেস্কোকে সম্মান জানাবেন। কিন্তু, তা এত বড় মাপের হবে তা আমরা জানতাম না।"
advertisement
আরও পড়ুনঃ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা! কয়লাকাণ্ডে ফের তলব, আজ ইডি'র মুখোমুখি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়
স্বাভাবিক কারনেই, মমতার মিছিল ও সভার পরেই, ইউনেস্কোর স্বীকৃতি প্রদানে কৃতিত্ব আসলে কার, তা নিয়ে তরজা শুরু হয়ে যায় রাজনৈতিক মহলে। দিল্লির নির্দেশে রাজ্য বিজেপির তরফে তড়িঘড়ি সাংবাদিক সম্মেলন করে দাবি করা হয়, ইউনেস্কোর তালিকায় বাংলার দুর্গোৎসবের এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য মমতা বা রাজ্য সরকারের কোন কৃতিত্ব নেই। কেন্দ্রের পাঠানো চিঠির জবাবে রাজ্যের পযটন সচিবের দেওয়া চিঠিকে তুলে ধরে বিজেপির দাবি, তালিকায় নাম তোলার জন্য কেন্দ্রীয় সংস্থা সঙ্গীত নাটক একাডেমির তরফে ইউনেস্কোর কাছে যে দাবি জানানো হয়েছিল, সে বিষয়ে রাজ্য সরকার কোনও আপত্তি করেনি। রাজ্যের তরফে এটুকুই। তার বিনিময়ে ইউনেস্কোর তালিকায় বাংলার দুর্গোৎসব অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কৃতিত্ব দাবি করতে পারেন না মুখ্যমন্ত্রী বা রাজ্য সরকার।
যদিও, নবান্নের এক পদস্থ আমলার মতে, স্বীকৃতির জন্য দাবি জানিয়ে ইউনেস্কোকে চিঠি দেয় কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের অধীনস্থ সংস্থা। যেহেতু, বিষয়টি একান্তই রাজ্যের। তাই প্রথামাফিক এ বিষয়ে রাজ্যকে জানানো ও মতামত জানতে চায় কেন্দ্র। কেন্দ্রের এই উদ্যোগে রাজ্য তার সম্মতি বা আপত্তি জানানো ছাড়া আর কিই বা করতে পারে? বিষয়টি নিয়ে অযথা রাজনীতি করতে চাইছে বিজেপি বলেই মন্তব্য করেন ঐ পদস্থ আমলা।
আরও পড়ুনঃ আজ ফের অচল হবে কলকাতা! কলেজস্ট্রিটে SFI-র সর্বভারতীয় জাঠায় লক্ষাধিক জমায়েতের ইঙ্গিত
পর্যবেক্ষকদের মতে, রাজ্য সরকারের দুর্গাপূজো নিয়ে এই মাতামাতিকে খোলাখুলি বিরোধীতা করতে পারেনি বিজেপি। পাছে, দলীয় হিন্দু ভোট ব্যাঙ্কে আঘাত লাগে। তাই কৌশলে মমতার চাল, বানচাল করতে আসলে এই কৃতিত্ব যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির, সেটাই সামনে আনতে চেয়েছে বিজেপি। রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের দাবি, ''বিজেপি বা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কোনওদিনই এই কৃতিত্ব দাবি করেন নি। কিন্তু, ইউনেস্কোর তালিকায় বাংলার দুর্গোৎসবের নাম ওঠাকে নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, যেভাবে প্রচার করলেন, তাতে মনে হচ্ছে, ইউনেস্কো থেকে দুর্গোৎসবের স্বীকৃতি আনল কে, তৃণমূল আবার কে। ব্যাপারটা এ রকম হয়ে যাচ্ছে। রাজ্য সরকার ও তৃণমূলের এই বিভ্রান্তিকর প্রচারের আমরা বিরোধীতা করছি। "
যদিও, পাল্টা জবানে, তৃণমূল নেতা তাপস রায় বলেন, "মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেছিলেন, খেলা হবে। ওঁরা ভাবলেন, তৃণমূল সন্ত্রাস করবে। মমতার খেলাটা ওঁরা ধরতেই পারেনি। গোল খেয়ে পিছিয়ে পড়ে মাঠে নামলে যে অবস্থা হয়, বিজেপির অবস্থাটা এখন তেমনই। তাই এ সব কথা বলছে। আর, ইউনিস্কোর প্রতিনিধি ওদের মুখে ঝামা ঘষে দিয়ে বলে দিয়েছে, তাঁরা অভিভূত। এত বড় সম্মান তাঁদের জানানো হবে তারা ভাবতেই পারেননি।ফলে, মুখ রক্ষা করার মত ওরা আর কিছু পাচ্ছে না।"
ARUP DUTTA