#কলকাতা: ঠিকানা কি জিনিস তা বিলক্ষণ বোঝেন আব্দুর শুকুর এবং আনোয়ারা বিবি। মায়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা দম্পতি। বছর তিনেক আগে বসিরহাটে আসতে গিয়ে ধরা পড়েন। অনুপ্রবেশের কারণে জেলবন্দি হতে হয় দুজনকে। তারপর থেকেই দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে বন্দীদশায় ছিলেন স্বামী-স্ত্রী। কিছুদিন আগেই তাঁদের দু-বছরের কারাদণ্ডের মেয়াদ শেষ হয়েছে। জেল কর্তৃপক্ষ আর কোনভাবেই তাদের রাখতে রাজি নয়। কোন পদক্ষেপ করতে গেলে তা আইনের চোখে বেআইনি হয়ে যাবে। এইরকম অবস্থায়, রাজ্য কূটনৈতিক চ্যানেল মারফত রোহিঙ্গা দম্পতিকে মায়ানমারে ফেরানোর উদ্যোগ শুরু করে।
advertisement
এখানেই শুরু হয় সমস্যা ৷ উদ্যোগের কথা জানতে পারার পর থেকে মায়ানমারে ফেরার আতঙ্কে ঘুম উড়ে যায় দম্পতির। আব্দুর শুকুর এবং তাঁর স্ত্রী আনোয়ারা বিবি কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন। আদালতের কাছে তাঁদের কাতর আর্তি, মায়ানমারে রোহিঙ্গা দম্পতি ফিরলে প্রাণ খোয়াতে হবে অর্থাৎ অলিখিত মৃত্যুদণ্ড ঝুলছে তাঁদের ভাগ্যে। এই অবস্থায় ভারতবর্ষে থেকে যাওয়ার আবেদন তাঁদের।
মঙ্গলবার মামলাটির শুনানি করেন বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য। রাজ্যের আইনজীবীর উদ্দেশ্যে তাঁর মন্তব্য, ‘এনআরসি, সিএএ নিয়ে যখন রাজ্যে এতকিছু ঘটছে তখন এই রোহিঙ্গা দম্পতির আবেদন উড়িয়ে দেওয়া যায় না।’ বিচারপতি ভট্টাচার্য, রোহিঙ্গা দম্পতিকে ভারত ছাড়ার পদক্ষেপের ওপর অন্তর্বর্তী নিষেধাজ্ঞা আদেশ জারি করেছেন। পাশাপাশি, সংশোধনাগারে রোহিঙ্গা দম্পতির সঙ্গে তাদের আইনজীবীর সাক্ষাতের নির্দেশও দিয়েছেন। পরবর্তী শুনানির তারিখ ২০ জানুয়ারি ৷
রোহিঙ্গা দম্পতির আইনজীবী ইন্দ্রজিৎ দেব জানিয়েছে, " নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে রাষ্ট্রপুঞ্জের শরণার্থী হয়েছেন রোহিঙ্গা দম্পতি। মায়ানমারে ফিরলে দুজনেরই প্রাণ সংশয় রয়েছে। হাইকোর্ট মানবিকভাবে বিষয়টি দেখে অন্তর্বর্তী নির্দেশ দিয়েছে। আদালতের উপর ভরসা রাখছি আশা করি রোহিঙ্গা দম্পতির ভালো কিছু ব্যবস্থা হবে। "
নতুন নাগরিক আইন নিয়ে গোটা দেশ এখন উত্তাল। নাগরিকত্ব আইনে, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের কথা উল্লেখ রয়েছে। এই দেশগুলি থেকে মুসলমানরা ভারতে এলে নাগরিকত্ব প্রশ্নে নতুন ফরমান জারি হবে। যদিও মায়ানমারের উল্লেখ নেই এই নতুন আইনে। রাষ্ট্রপুঞ্জের শরণার্থী তালিকায় থাকা রোহিঙ্গা দম্পতির ঠিকানা কি থাকবে দমদম সেন্ট্রাল জেল ? নাকি নতুন ঠিকানা পাবে তাঁরা? সংশোধনাগারের চার দেওয়ালের মধ্যে থেকে, এই প্রশ্নের উত্তর হাতরে বেড়ায় এখন আব্দুর শুকুর ও তাঁর সহধর্মিনী।