কিন্তু আচমকাই তার মধ্যে পৃথক রাঢ়বঙ্গ বা জঙ্গলমহলের দাবি তুলে বিজেপি-র উত্তরবঙ্গ কৌশলে কার্যত জল ঢেলে দিলেন বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ৷ গত দু' দিনে এই দাবিতে সংবাদমাধ্যমে বার বার সরব হয়েছেন তিনি৷ এমন কি রাজ্য নেতৃত্ব এই মতের শরিক না হলেও তাতে গুরুত্ব না দিয়ে এ দিন পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের দাবি জানিয়ে বসেছেন সৌমিত্র৷ এতে প্রবল অস্বস্তিতে পড়েছে বিজেপি৷ শোনা যাচ্ছে, বিষ্ণুপুরের সাংসদের উপরে দল এতটাই ক্ষুব্ধ যে তাঁকে ডেকে পাঠিয়েছেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা৷
advertisement
সূত্রের খবর, রাজ্য ভাগের মতো স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে দলের দুই সাংসদ সরব হওয়ায় রীতিমতো চাপে পড়ে গিয়েছিল বিজেপি রাজ্য নেতৃত্ব৷ কারণ বিজেপি বাংলা ভাগ করার চক্রান্ত করছে বলে পাল্টা সরব হয়েছে তৃণমূল৷ এর পরেই দলের রাজ্য নেতৃত্বের তরফে জন বার্লা এবং সৌমিত্র খাঁকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়, রাজ্য ভাগের মতো স্পর্শকাতর ইস্যু নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও বিবৃতি দেওয়া যাবে না৷ আপাতত দুই সাংসদের মুখে লাগাম পরিয়ে বিষয়টা কিছুটা থিতিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন দলের রাজ্য নেতারা৷ কিন্তু সৌমিত্র সেই পরামর্শের ধার ধারেননি৷ দলের সতর্কবার্তার পর প্রথমে নিজের বক্তব্যকে ব্যক্তিগত মত বলার পরেও ফের রাঢ়বঙ্গের জন্য কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের দাবিতে সরব হন তিনি৷ আর এতেই চরম অসন্তুষ্ট হয় দলের শীর্ষ নেতৃত্ব৷ এর পরেই বিষ্ণুপুরের সাংসদকে তলব করেন জে পি নাড্ডা৷ এ দিন রাত ৮.১৫ মিনিটে সৌমিত্রকে ডেকে পাঠানো হয়৷ তলব পেয়েই ছুটে গিয়েছেন বিষ্ণুপুরের সাংসদ৷
তবে বৈঠকে যাওয়ার আগে নিউজ এইট্টিন বাংলার কাছে সৌমিত্র দাবি করেছেন, তিনি বিজেপি-র রাজ্য যুব মোর্চার সভাপতি৷ দলের নানা দায়িত্ব পালন করতে হয় তাঁকে৷ সেই কারণেই সম্ভবত আলোচনার জন্য তাঁকে ডাকা হয়েছে৷ যদিও বিজেপি সূত্রের খবর, বিষ্ণুপুরের সাংসদের একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্যে বীতশ্রদ্ধ দল। সেই কারণেই তাঁকে তলব করেছেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি।
রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, উত্তরবঙ্গ নিয়ে জন বার্লা বা বিভিন্ন বিধায়করা যে দাবি করছিলেন, তাতে দল কিছুটা অস্বস্তিতে পড়লেও এর পিছনে অন্য কৌশল ছিল৷ কারণ এই মুহূর্তে উত্তরবঙ্গে নিজেদের পায়ের তলার মাটি ধরে রাখা বিজেপি-র কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ আর তা করতে গেলে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে উত্তরবঙ্গের জন্য পৃথক সত্তার জিগিড় তুলতে পারলে তা রাজনৈতিক ভাবে বিজেপি-কে ডিভিডেন্ড দেবে৷ কারণ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন অংশে দীর্ঘদিন ধরে এই ধরনের দাবি রয়েছে৷ দলের মতামত চাপিয়ে দিয়ে সেখানকার সাংসদ, বিধায়কদের দমিয়ে রাখলেও হিতে বিপরীত হতে পারে৷ ফলে উত্তরবঙ্গ নিয়ে নির্দিষ্ট কৌশলেই এগোচ্ছিল দল৷ কিন্তু আচমকা সৌমিত্র খাঁ পৃথক রাঢ়বঙ্গের দাবিতে এতটাই সরব হলেন যে উত্তরবঙ্গের বঞ্চনা বা পৃথক সত্ত্বার দাবি কার্যত পিছনের সারিতে চলে গিয়েছিল৷ উল্টে বিজেপি-কে আক্রমণ করার অস্ত্র পেয়ে যায় তৃণমূূল কংগ্রেস৷ সেই কারণেই জন বার্লা প্রথম পৃথক উত্তরবঙ্গের দাবিতে সরব হলেও সৌমিত্রের উপরই চটেছে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব৷
উত্তরবঙ্গের বিধায়ক, সাংসদদের একাংশ অবশ্য মনে করেন, এই ইস্যুটি উত্তরের নিজস্ব নাগরিক ইস্যু৷ ফলে এর বাস্তবায়ন নির্ভর করছে জনমতের উপরেই৷