বুধবারের ঘটনার পটভূমি, বিধানসভার লবি। আম্বেদকরের প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন অনুষ্ঠান। মুকুল রায়কে পিএসি চেয়ারম্যান করার জেরে বিধানসভায় সরকারি অনুষ্ঠানে শাসক দলের সঙ্গে একসঙ্গে না থাকাটা প্রথা করে ফেলেছে বিজেপি। কিন্তু, বুধবার দলের সেই লক্ষ্মণরেখা পেরিয়ে বিধানসভার লবিতে আম্বেদকরের ছবিতে মালা দিয়ে প্রণাম করেন বিজেপির গোঘাটের বিধায়ক বিশ্বনাথ কারক। আম্বেদকরের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের পর, সেখানে উপস্থিত স্পিকারকেও নমস্কার করেন কারক। প্রতি নমস্কার জানান স্পিকারও। এখানেই শেষ নয়।
advertisement
লবি থেকে বিধানসভার পোর্টিকোর দিকে পা বাড়াতে গিয়ে মুখোমুখি হলেন পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেবের সঙ্গে। আবার, ফিরে এল এক টুকরো সৌজন্যের ছবি। শোভনদেবের সঙ্গে হাত মেলালেন বিশ্বনাথ। সাময়িক আড়ষ্টতা ভেঙে দুজনেই সহাস্য মুখে ছবি তুললেন। পারস্পরিক কুশল বিনিময় করলেন তাঁরা। যদিও, সামান্য হলেও, তাল কাটছিল, মুঠোফোনের ক্যামেরায় 'যুগলবন্দি' হওয়া ছবিতে ধরা পড়ার পর।
আরও পড়ুন: দিনের শুরু থেকেই ত্রিশঙ্কুর ইঙ্গিত হিমাচলে, এবার কি তবে আরও বড় নাটকের অপেক্ষা?
পরে, অবশ্য পরিস্থিতি সহজ করতে বিশ্বনাথ বলেন, "শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় যে দলেরই হোন না কেন, একজন অন্য রকমের মানুষ। বিধানসভায় বামফ্রন্ট প্রধান বিরোধীদল থাকার সময়, বামফ্রন্টের মুখ্য সচেতক ছিলাম আমি। সে সময় সরকারি দলের মুখ্য সচেতক হিসাবে শোভনদেবের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। রাজনৈতিক পরিচয়ই শেষ কথা নয়, সবার উর্ধ্বে আমরা একজন মানুষ।" তাঁর কথাকে সমর্থন করতে বিশ্বনাথের পিঠ চাপড়ে দেন শোভনদেব। শীতের বিধানসভার পোর্টিকোয় শোভনদেবের হাত ধরে বিশ্বনাথ যখন এসব বলছিলেন, অনেকটা স্বগতোক্তির মতো, তখন শোভনদেবের মুখেও হাসি। চোখের ওপর ভাসছিল, কিছুক্ষণ আগেই যখন তৃণমূলের পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেবের হাত ধরে মুঠোফোনের ক্যামেরার মুখোমুখি হতে গিয়ে একটু আড়ষ্ট হয়ে পড়েছিলেন বিজেপির বিধায়ক বিশ্বনাথ, তখন কার্যত তাঁর হাত ধরে নিজের পাশে টেনে নিয়ে শোভনদেব বলেন, "কী আছে? আমি তৃণমূল করি বলে বিজেপির বিধায়কের সঙ্গে একসাথে দাঁড়াতে পারব না? আমরা যে দল, যে রাজনীতিই করি না কেন, এই সৌজন্যটুকু আমাদের মধ্যে থাকবে না কেন?"
আরও পড়ুন: ভারত জুড়ছেন রাহুল, গুজরাতে খা খা করছে রাজীব গান্ধি ভবন! ভবিতব্য় জানতেন কংগ্রেস নেতারাও
যদিও, পর্যবেক্ষকরা বলছেন, গোঘাটের বিধায়ক বিশ্বনাথ কারকের বিধানসভায় স্পিকারের উপস্থিতিতে শ্রদ্ধা জানাতে আসা এটাই প্রথম নয়। তবু, যখন বিধানসভার বাইরে রাজ্যের দুই যুযুধান রাজনৈতিক দল তৃণমূল আর বিজেপির মধ্যে সংঘাত ক্রমশই বাড়ছে, সভা, পাল্টা সভায় রাজনীতির পারদ চড়ছে দ্রুত গতিতে, তখন, ডিসেম্বরের বিধানসভা উপহার দিল শাসক - বিরোধী সৌজন্যের এক বিরল ছবি। যার স্থায়িত্ব যত অল্পই হোক না কেন, রাজনীতির ভবিষ্যতের জন্য খুবই জরুরি।