আদালত সূত্রে খবর, অভিযুক্ত সিভিক পুলিশের আইনজীবী পবিত্র বিশ্বাস আদালতে আবেদন জানান , 'he' বলতে কে? সিভিক না অন্য কেউ? 164 অর্থাৎ গোপন জবানবন্দী হয়ে গিয়েছে। সিভিক পুলিশ কিছু করেনি। FIR-এ কোথাও 'they' লেখা নেই। সরকারি আইনজীবী পাল্টা জানান, উনি যা বলছে তা সত্যি না। শ্লীলতাহানি করেছে দু'জন মিলে। সিভিক গাড়ি চালাচ্ছিল বললে হবে না। বিচারক শান্তনু গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, 'he' টা কে? খুব সচেতন আপনি (সিভিক এর উদ্দেশ্যে বলেন )? আপনার কোথায় পোস্টিং? সিভিকের আইনজীবী জানান, ট্রাফিকে । বিচারকের পাল্টা প্রশ্ন, কখন ডিউটি শেষ হয়? রাত ১০ টা নাকি দুপুর ১ টা? তদন্তকারী অফিসার জানান, ASI-র ডিউটি ছিল সকাল ৬ টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত। তাঁর সঙ্গে সিভিক ছিল।
advertisement
বিচারকের প্রশ্ন, '' তারপরও আপনি( সিভিক ) ইউনিফর্ম-এ ছিলেন? ডিউটির পরেও? আপনি সচেতন ( concious ) ছিলেন। আপনার ডিউটি দুপুরে শেষ হয়ে যাওয়ার পর কেন ইউনিফর্ম খোলেননি? রাত ১০ টা তেও কেন খোলেননি? '' সিভিকের আইনজীবী জানান, '' ধু সাদা প্যান্ট পরে ছিল । সিভিক বলে সাদা প্যান্ট পড়ে থাকা যাবে না?'' বিচারকের পাল্টা প্রশ্ন, '' ডিউটি শেষ যখন কেন পুলিশের প্যান্ট- ইউনিফর্ম পালটাননি? যাঁদের সারদিন ফাইন করে বেড়ান, সেই ট্রাফিক সেখানে দুজনকে নিজের বাইকের পিছনে কি করে বসালেন? নিজে তো নিয়ম ভেঙেছেন।'' সিভিকের আইনজীবী জানান, '' কার নির্দেশে সিভিক বাইক চালাচ্ছিল?''বিচারকের প্রশ্ন,''আপনি ড্রেস পড়ে থাকলেন ডিউটি পরও?বিচারক - যাকে 'he' বলছেন সে কি ড্রেস-এ ছিল? যতদূর জানি উনি সিভিল এ ছিল। অর্থাৎ আপনি ( সিভিক ) পুলিশের ইউনিফর্ম পড়ে ছিলেন। সেই ইউনিফর্মই বার্তা দিয়েছিল ভিক্টিমকে আপনি ডিউটিতে পুলিশের লোক। আপনি ডিউটি পর বাধ্য নন ASI-র কথা শুনতে।
বিচারক বলেন , '' আপনি বাইকের পিছনে দুজনকে বসিয়ে ট্রাফিক রুল ভেঙেছেন।'' বিচারকের মন্তব্য, '' দুটো বাইক ছিল, আপনি ড্রেস-এ ছিলেন।( পুলিশের সাদা প্যান্ট এ civic এর উদ্দেশ্যে বলেন )।'' সিভিকের আইনজীবী জানান, সিভিকের পিছনে ASI সন্দীপ ছিল। তরুণী বসেননি। সন্দীপের পিছনে বসেছিল তরুণী। বিচারক পালটা জানান, '' প্রথমে সিভিকের পিছনে তরুণী বসে । ওই ASI অন্য বাইকে ছিল। কিছু দূর গিয়ে ASI নেমে আসে। এরপর সিভিকের বাইকে পিছনে বসে ASI, বলবেন না যে সিভিকের পিছনে কখনই তরুণী বসেইনি।'' ক্ষুব্ধ বিচারক প্রশ্ন করেন, '' টাইম ক'টা? পিছনে কখন বসালেন?'' সিভিকের আইনজীবী জানান, '' রাত ১.২৮ হবে।'' বিচারকের প্রশ্ন, '' গাড়ি থেকে কখন নামালেন?''সিভিক পুলিশের আইনজীবী জবাব দেন, '' ওভাবে টাইম বলা যায়? ১০ মিনিট হয়তো হবে।''
বিচারক তির্যক সুরে জানান, '' মিলছে না টাইম। যেখানে নামলেন আর যখন থেকে উঠালেন ১০ মিনিট মোটেও না ।'' সিভিকের আইনজীবী জানান, '' মোবাইলে সিভিক অভিষেকের কাছে রিকভারি কিছু নেই। সন্দীপের মোবাইল রিকভারির জন্য আবেদন করা হয়েছে।Reconstruction বা পুনরুদ্ধারের জন্য সিভিকের দরকার নেই। আপনি যদি মনে করেন সিভিক পালিয়ে যেতে পারে, তাহলে তার সব এডুকেশন সার্টিফিকেট, কেরিয়ার সংক্রান্ত সবকিছু জমা রাখুন।'' জামিন-এর আবেদন রাখা হয় আদালতের কাছে। পালটা সরকারি আইনজীবী জানান, '' রিকনস্ট্রাকশন, রিকভারি এগুলো দরকার। আলাদা করে করলে রিকনস্ট্রাকশন ঠিক করে হবে না। অভিযুক্তদের দুজনকে একসঙ্গে দরকার।''
সিভিকের আইনজীবীর প্রশ্ন, '' ঘটনা ১১ তারিখ হল, আর ১৭ তারিখ মনে পড়ল পুলিশি হেফাজতে নেওয়ার কথা?'' বিচারক মন্তব্য করেন, '' টি আই প্যারেড আগে না করে কীভাবে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করা হবে?'' ধৃত ASI-র পক্ষের আইনজীবী সন্দীপ কুমার পাল জানান, '' পুলিশি হেফাজত চাওয়া হয়েছে মোবাইল ও ঘটনার পুনর্নির্মাণের জন্য। ইলেকট্রনিক কমপ্লেক্স থানা ইতিমধ্যেই সিভিক সফিকুল ও সাব ইন্সপেক্টর প্রভাস ঘোষের মোবাইল নিয়ে নেয় অভিযুক্ত সন্দীপের থেকে। বৃহস্পতিবার জেলে তদন্তকারী অফিসার গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তাহলে পুলিশি হেফাজত চাওয়ার কারণ কী?''
ধৃত সিভিকের আইনজীবী জানান, '' FIR- এ লেখা তারা মত্ত ছিলেন।দুজনের মেডিকেল রিপোর্টে কি আছে?'' ক্ষুব্ধ বিচারক প্রশ্ন করেন, '' ১১ তারিখ রাতে ঘটনা ঘটে। ১২ তারিখ ২টো ৫৫ মিনিটে গ্রেফতার! এত দেরি কেন?'' সরকারি আইনজীবী সাবির আলী জানান, '' ম্যারাথন জেরা হচ্ছিল।বিভিন্ন কথায় অসংগতি থাকায় গ্রেফতার করা হয়।'' সিভিকের আইনজীবী জানান, '' সিসি ক্যামেরার ফুটেজ আছে।তাহলে কেন ঘটনার পুনর্নির্মাণ দরকার?'' বিচারকের প্রশ্ন, '' সিসি ক্যামেরা-এ আছে সব?'' ধৃত ASI- এর আইনজীবী জানান, '' সিসি ফুটেজ ও একটি মোবাইল ভিডিও বানিয়েছিল অভিযোগকারী। অভিযোগকারী সে কথা FIR- এ লেখেননি। তার মানে সুযোগ ছিল ভিডিও করার।'' সরকারি আইনজীবীর পালটা দাবি, '' একটা সিসি ক্যামেরা এখানে আরেকটা ওখানে। সব জায়গার ছবি নেই। ফলে ঘটনার পুনর্নির্মাণ দরকার। নতুন এই তদন্তকারী অফিসার মনে করছেন ঘটনার পুনর্নির্মাণ ও মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত দরকার তাই তিন দিনের পুলিশ হেফাজত দরকার। বাইক বাজেয়াপ্ত কিন্তু সিজার লিস্টে মোবাইল নেই।'' ASI-র আইনজীবী জানান, '' এটা ইন জেনারেল কেস।''বিচারক ক্ষুব্ধ হয়ে জানান, ''এটা ইনজেনারেল কেস না, এক্সসেপশনাল কেস। দু'পক্ষের সওয়াল-জবাব শুনে তিন দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেয় বিধাননগর আদালত। ASI সন্দীপ কুমার পাল ও সিভিক অভিষেক মালাকারকে আগামী ২০ ডিসেম্বর ফের পেশ করা হবে আদালতে। ইতিমধ্যে তরুণীর গোপন জবানবন্দী নেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে অভিযুক্তদের জেল হেফাজত থেকে এবার পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিল বিধাননগর আদালত।
Arpita Hazra