একুশের নির্বাচনে রাজ্যে ক্ষমতা দখলের কথা বলে মমতার রাজনৈতিক কৌশলের কাছে গোহারা হতে হয়েছিল মোদী - শাহদের। দিন কয়েক চুপ থেকেই, আগামী ২৪-এর লোকসভা ভোটে রাজ্যে ২৫টি আসন জেতার কথা বলতে শুরু করেছেন অমিত শাহরা। রাজ্যে ১৮ আসন ধরে রাখাই যখন চ্যালেঞ্জ দলের কাছে, তখন ২৫ আসন জিততে হলে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে বড় মাপের সাফল্য দরকার। সেই সাফল্য এ রাজ্যে ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি দিয়ে সম্ভব হবে না বুঝেই ভিন্ন কৌশল নিয়েছে বিজেপি।
advertisement
আরও পড়ুন: 'প্রায়শ্চিত্ত করছেন মমতা, এবার কাণ্ডের দিকে যাওয়া হবে', দিলীপ ঘোষের মন্তব্যে তুমুল আলোড়ন
কৌশল মূলত দুটি। এক - পঞ্চায়েত ভোটের আগে একশো দিনের কাজের মত কেন্দ্রীয় প্রকল্পের বরাদ্দ টাকা আটকে দেওয়া। যার ফলে, রাজ্যের গ্রামীণ এলাকার গরীব মানুষকে খেপিয়ে তুলে ফায়দা তোলা। দুই - পঞ্চায়েতের দুর্নীতির জন্য শাসক দলকে কাঠগড়ায় তুলে নির্বাচনে পরিবর্তনের ডাক দেওয়া। বেশ কিছু দিন ধরেই কেন্দ্রীয় প্রকল্পের নাম পরিবর্তন নিয়ে সরব বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। রাজ্যে প্রধানমন্ত্রী সড়ক যোজনা বা জল জীবন মিশনের নাম বদলকে হাতিয়ার করে কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের বরাদ্দ টাকা আটকে দেওয়ার দাবি জানানোর পর এবার উৎসবের মরশুমে সস্তায় রেশন নিয়েও সরব শুভেন্দু।
আরও পড়ুন: ঘুষ দিয়েও চাকরি না পেয়ে আত্মঘাতী যুবক, ইনসাফ চাইতে অভিনব নিদান মীনাক্ষীর
এবার, একশো দিনের কাজের টাকাও বন্ধ করে রাজ্যকে বেকায়দায় ফেলতে চাইছে বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রী নিজে দিল্লি গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে একশো দিনের কাজের বরাদ্দ টাকা দেওয়ার আর্জি জানিয়ে এলেও, রাজ্য বিজেপির চাপে কেন্দ্র গড়িমসি করে চলেছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্য বিজেপির এই কৌশল প্রকাশ্যে এসে গিয়েছে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কথায়। নন্দীগ্রামে বিজয়া সম্মিলনীর অনুষ্ঠানে শুভেন্দু বলেছেন, ''কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা থেকে ঘুষের ভাগ না দিলে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার টাকা পায়নি গরীব মানুষ। তাই রাজ্যের মানুষ এই দুর্নীতিগ্রস্ত পঞ্চায়েতের পরিবর্তন চায়।''
কিন্তু, কেন্দ্রের কাছে দরবার করে রাজ্যের বরাদ্দ টাকা আটকে দেওয়া নিয়ে ইতিমধ্যে সরব তৃণমূল। আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে এই প্রচারকে হাতিয়ার করলে তাতে গরীব মানুষের কাছে দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগকে উড়িয়ে পালের হাওয়া কেড়ে নিতে পারে তৃণমূল। এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে না বিজেপি'ও। তবে, তৃণমূলের প্রচারকে রুখতে পাল্টা কৌশলও স্থির করে ফেলেছে বিজেপি। রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক ও সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের মতে, ''কেন্দ্র তো টাকার হিসাব চেয়েছে। দুর্নীতিগ্রস্ত তৃণমূল তা দিতে পারেনি বলেই রাজ্যের বরাদ্দ আটকে গেছে। রাজ্যের মানুষ এত বোকা নন। তাঁদের কাছে আমরাও পাল্টা এ কথাই বলব।''
তবে, লকেট বা শুভেন্দু যাই বলুন কেন, রাজনৈতিক মহলের মতে, সিপিএম বা কংগ্রেস তৃণমূলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হলেও রাজ্যের বকেয়া আটকে দেওয়াকে সমর্থন করেনি। সেদিক থেকে এই ইস্যুতে বিজেপিকে একঘরে করতে তৃণমূলের সুবিধাই হবে। তাছাড়া, দুর্নীতির অভিযোগে গরীব মানুষের টাকা আটকে দিয়ে গরীব মানুষের সহানুভূতি কীভাবে পাবে বিজেপি, সেটাও একটা বড় প্রশ্ন।