শনিবার রাজভবনে যান বঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের সঙ্গে দু’ঘণ্টা বৈঠক হয় সুকান্ত মজুমদারের। বৈঠকের পর সুকান্ত মজুমদার দাবি করেন, ‘‘দুর্নীতির সঙ্গে যুক্তদের রেহাই নয় বলে আশ্বাস দিয়েছেন রাজ্যপাল। উনি বলেছেন জিরো টলারেন্স টু কোরাপশন। এই নীতি নিয়ে তিনি চলছেন। শুধু তাই নয় কোরাপশনের সঙ্গে যুক্ত কোনও ব্যক্তিকে কোনও ভাবে রেহাই দেওয়া হবে না।’’
advertisement
সুকান্তর দাবির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কড়া বিবৃতি জারি রাজভবনের। দুর্নীতি থেকে পঞ্চায়েত ভোট। লোকাযুক্ত নিয়োগ থেকে উপাচার্য। একাধিক ইস্যুতে কড়া বিবৃতি। রাজভবনের তরফে দেওয়া বিবৃতিতে যেমন লেখা হয়েছে, দুর্নীতির বিষয়ে জিরো টলারেন্স পলিসি রাজ্যপালের।পঞ্চায়েত নির্বাচনে হিংসা বরদাস্ত নয়। নির্বিঘ্নে ভোট পরিচালনার জন্য রাজ্যপাল সচেষ্ট। জগদীপ ধনখড় রাজ্যপাল থাকাকালীন রাজভবন এবং নবান্নের সংঘাত অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দেয়। সেই ধনখড়কে এখনও 'মিস' করে বিজেপি। তাদের আশা ছিল সি ভি আনন্দ বোসও রাজ্যপালের চেয়ারে বসে জগদীপ ধনখড়ের মতোই রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে নানা ইস্যুতে সরব হবেন। কিন্তু, বঙ্গ বিজেপির আশায় বারবার জল ঢেলে দেন সি ভি আনন্দ বোস।
রাজ্যপাল হয়ে আসার পর থেকেই তাঁর মুখে শোনা গিয়েছে রাজ্য সরকারের প্রশংসা। আবার কখনও বা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা। এতে রীতিমতো বিড়ম্বনায় পড়ে বঙ্গ বিজেপি। যা বাড়ে সরস্বতী পুজোর দিন। সেদিন রাজভবনে বাংলায় হাতেখড়ি দেন রাজ্যপাল। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যে জয় বাংলা স্লোগান বারবার শোনা যায় তৃণমূলের মুখে, রাজ্যপালের মুখেও সেদিন শোনা গিয়েছিল সেই জয় বাংলা। বিজেপির অস্বস্তি আরও বাড়ে রাজ্যপালের মুখে মুখ্যমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যকে কটাক্ষের সুরে এও বলতে শোনা গিয়েছিল যে, রাজ্যপালের হাতেখড়ির পাশাপাশি মনে হয় অন্নপ্রাশনও হয়ে গেছে।
সব মিলিয়ে রাজভবনের কড়া বিবৃতির পর প্রাক্তন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের ‘জমানা’ ফেরার বিষয়ে আশাবাদী বঙ্গ পদ্ম শিবির। শাসকদ লের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে পদ্ম শিবির বলছে, ‘‘যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোতে মুখ্যমন্ত্রী কিংবা সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় থাকুক রাজ্যপালের এটা আমরা চাই। কিন্তু তৃণমূল ভেবেছিল রাজভবনকে দলীয় কার্যালয় এবং সরকারি দফতরের একটি অংশ হিসেবে ব্যবহার করবে। কিন্তু রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান বুঝিয়ে দিয়েছেন কোনও রকম অন্যায়ের সঙ্গে আপস তিনি করবেন না।’’ এক কথায় রাজভবনের কড়া বিবৃতিতে বঙ্গ বিজেপি- রাজ্যপাল সংঘাতের আবহতে ইতি পড়ল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। যদিও তৃণমূলের একাংশের দাবি, ‘‘রাজ্যপালের ওপর চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে সরকার তথা শাসক দলকে অস্বস্তিতে ফেলার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি।’’
ভেঙ্কটেশ্বর লাহিড়ী