গত বছর আজকের দিনেই শেষ হয়েছিল লড়াই। সে চুপ হয়েছিল, শব্দহীনও হয়েছিল। শুধু ‘আয়ু লেখা’ হল হয়নি তাঁর৷ মৃত্যু তো হেরেই গিয়েছিল তার কাছে৷ কিন্তু আবার ফিরে এসেছিল৷ এবার আরও নিষ্ঠুর হয়ে৷
এবারের ছবিটা আগের দুবারের মতো হল না আর৷ মিথ্যে হল প্রার্থনা, বিজ্ঞান৷ মিথ্যে হল না কেবল মৃত্যু৷ জীবনের সবচেয়ে অপ্রিয়, অথচ সবচেয়ে কঠিন সত্যির সামনে দাঁড়াতে হল আজ৷ আর ফিরলেন না ঐন্দ্রিলা৷ এতদিনে ঐন্দ্রিলা শর্মার নামটা অজানা খুব কম মানুষের কাছে৷ কারও কাছে লড়াইয়ের সমার্থক ঐন্দ্রিলা, কারও কাছে ঐন্দ্রিলার অর্থ প্রাণশক্তি৷ অল্পে হেরে যাওয়া, হাঁফিয়ে ওঠা, আশা ছেড়ে দেওয়া মানুষগুলোকে নিজের অজান্তেই বাঁচতে শিখিয়েছিলেন ঐন্দ্রিলা৷ বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, ‘এভাবেও ফিরে আসা যায়৷’
advertisement
প্রার্থনা করেছিল সবাই- এ লড়াই থামুক জীবনের জয়ে৷ ঐন্দ্রিলা হয়ে উঠেছিল কত অচেনা অজানা মানুষের মেয়ে৷ তার সঙ্গে একই আকাশের নীচে বাঁচতে চেয়েছিল কত হেরে যাওয়া মানুষ৷ ঐন্দ্রিলা নিজেও বিশ্বাস করতেন, এত আনন্দ আয়োজন সবই বৃথা আমায় ছাড়া৷ আজ সবটাই শেষ হয়তো৷ পরপর দুবার ক্যানসার, ব্রেন স্ট্রোক, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, হৃদরোগের কাছে হেরেই গেল সব প্রার্থনা, নিরলস চিকিৎসা৷
‘আমি ভালবাসি যারে, সে কী কভু আমা হতে দূরে যেতে পারে…’ সব্যসাচীর মতো আমরাও ভেবেছিলাম এমনই৷ সব্যসাচী ঐন্দ্রিলার মধ্যে থাকা আরও একটা প্রাণশক্তির নাম৷ প্রেমিক শব্দটা বোধ হয় বড়ই ছোট তাঁর জন্য বলার৷ বরং ঐন্দ্রিলার সহযোদ্ধাই ছিলেন তিনি৷ তাঁর বিশ্বাস ছিল নিজের হাতে ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন ঐন্দ্রিলাকে৷ লড়াই চালাতে চালাতে প্রার্থনা করেছিলেন অলৌকিকেরও৷ “আমার ঐন্দ্রিলা আছে, প্রচন্ডভাবে আছে… ঠিক ফিরে আসবে৷ ওর একা থাকতে বিরক্ত লাগে৷” তাঁর এক একটা লেখায় ভরসা পাচ্ছিল কত লক্ষ কোটি মানুষ৷ কিন্তু সেই বিশ্বাসও ফুরলো৷ ফুরলো কি? হয়তো, ফুরায় শুধু চোখে…
অন্ধকারেই হারিয়ে গেল একটা জীবন্ত আলো৷ চলে তো যেতেই হয়, সবাইকে একদিন৷ কিন্তু মাত্র ২৪টা বসন্ত দেখা একটা প্রাণবন্ত মেয়ের চলে যাওয়াকে অমোঘ সত্যির মতো করে মেনে নেওয়ার ক্ষমতা কারই বা আছে৷ ঐন্দ্রিলা নিজেও চেয়েছিলেন বাঁচতে৷ প্রাণভরে পৃথিবী দেখতে৷ উদযাপন করেছিলেন নিজের ফিরে আসা৷ যেতে নাহি দিব, যেতে নাহি দিব… এমনইতো ভেবেছিল সবাই, আঁকড়ে ধরা হাত ছেড়েই গেল শেষে৷ তবুও সময় হল শেষ, তবু হায় যেতে দিতে হল…