দিল্লি থেকে ম্যানেজমেন্ট পড়াশোনা। কিন্তু মন পড়েছিল রাজনীতিতে। শেষমেশ ২০১১-তে ৩৪ বছরের বাম সরকারের অবসান ঘটিয়ে ক্ষমতায় এলেন মমতা। এরপরই তৃণমূলে তৈরি হল 'যুবা'। যুব সংগঠনের পাশাপাশি তৈরি হল সমান্তরাল সংগঠন। সেই সংগঠনের দায়িত্ব পেলেন অভিষেক। সংগঠনের কাজ করতে-করতেই ২০১৪ সালে ডায়মন্ড হারবার থেকে প্রথম লোকসভার টিকিট পেলেন অভিষেক। আর সংসদীয় রাজনীতির শুরুতেই কার্যত ছয় মেরে ইনিংস শুরু করলেন তিনি। কিন্তু মমতার 'ভাইপো' হওয়ার সুবাদেই অভিষেকের টিকিট-প্রাপ্তি বলে সমালোচনাও হল নানাস্তরে। যে 'ভাইপো' বিতর্ক তাঁকে তাড়া করে বেড়িয়েছে এই সেদিন পর্যন্তও।
advertisement
অভিষেক অবশ্য বারংবার বলেছেন, দলনেত্রীর ভাইপো হওয়ার জন্য কোনও আলাদা সুবিধে পাননি তিনি। পেলে লোকসভা ভোটে দক্ষিণ কলকাতা থেকে টিকিট পেতেন, 'কঠিন' ডায়মন্ড হারবার থেকে নয়। নিউজ 18 বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারেও সেই প্রসঙ্গ তুলেছিলেন তিনি। ২০১৮ সালের লোকসভায় সবচেয়ে কমবয়সী সাংসদ ছিলেন অভিষেক। আর সাংসদ হতেই অভিষেকের উপর বর্তাল আরও দায়িত্ব। শুভেন্দু অধিকারীর পরিবর্তে অভিষেকের হাতেই তুলে দেওয়া হল তৃণমূল যুব সংগঠনের দায়িত্ব। যে ক্ষোভ এখনও বয়ে বেড়াচ্ছেন শুভেন্দু। এমনকী এবারের ভোট প্রচারে বিজেপির হয়ে বারবার সেই প্রসঙ্গ তুলে এনেছেন তিনি।
সংঘাত অবশ্য শুধু শুভেন্দুর সঙ্গে নয়, মুকুল রায়ের সঙ্গেও বেঁধেছিল অভিষেকের। তৃণমূলে দ্বিতীয় ক্ষমতাশালী কে, সেই প্রশ্নের মীমাংসার আগেই দল ছেড়ে বিজেপিতে চলে যান মুকুল। কিন্তু তাতেও তৃণমূল ভেঙে পড়েনি। এমনকী কোনও প্রতিক্রিয়াও দেননি অভিষেক। বরং দলের সংগঠনে বুঁদ হয়েছিলেন তিনি। বারবার আক্রমণ এসেছে, পরিবারতন্ত্রের খোঁচাও এসেছে তাঁর দিকে। কিন্তু তিনি তাতে আমোল দেননি। এমনকী এবারের বিধানসভা নির্বাচনে অভিষেককে সরাসরি নিশানা করেছেন নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহরা। মাঝে ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে তৃণমূলের খারাপ ফলের জন্যও আতসকাঁচের তলায় পড়েছিল অভিষেকের ভূমিকা। কিন্তু তিনি 'ঠেকে শিখেছিলেন'।
সম্পর্কে পিসি হলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে 'দিদি' বলেই ডাকেন অভিষেক। সেই 'দিদির' থেকেই রাজনীতির পাঠ নিয়েছেন অভিষেক। এবারের নির্বাচন তাঁর কাছে ছিল অ্যাসিড টেস্টের মতো। গোটা রাজ্যে মমতার থেকেও বেশি সভা-মিছিল করেছেন তিনি। এমনকী তাঁর বাড়িতে হানা দিয়েছে সিবিআই। কিন্তু তাতেও প্রতিহত করা যায়নি অভিষেককে। নিজের লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন তিনি। বলেছেন, 'আমি এসবের জন্য প্রস্তুত আছি। আমার পরিবারকেও বলেছি, এগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নিতে।'
কিন্তু ২ মে, বোঝা গেল 'ম্যাজিক' করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এল তৃণমূল। রাজনৈতিক মহলের মতে, মমতার পর এই জয়ের কৃতিত্ব যদি কারও থেকে থাকে, তার নাম অভিষেক। অবশেষে সেই পরিশ্রমের ফল পেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের হলেও দলের আস্থাভাজন সৈনিক। প্রবীণ তৃণমূল নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলছেন, 'অভিষেক যে পরিশ্রম করেছে, যেভাবে দলকে তুলে ধরেছে, তাতে এই দায়িত্ব ও ভালোভাবেই সামলাতে পারবে।' রাজ্য জয় সারা হয়েছে, এরপরের লক্ষ্য 'দিদি'কে দিল্লি পৌঁছে দেওয়া। টার্গেটে অবিচল রয়েছেন তৃণমূলের দ্বিতীয় 'শক্তিধর'।
----কমলিকা সেনগুপ্ত
