খড়, মাটি, রঙ থেকে ধীরে ধীরে নানাবিধ অলংকারে সাজিয়ে তোলা হবে দেবীকে। কিন্তু কালী পুজোর আগে পরিচিত এই ছবিটাই দেখা গেল না গোপালনগরে। পূর্ব বর্ধমান জেলার মন্তেশ্বর ব্লকের অন্তর্গত একটি গ্রাম গোপালনগর। পুরনো প্রথা অনুযায়ী, এই গ্রামে মাটির প্রতিমা তৈরিতে রয়েছে নিষেধাজ্ঞা।
আরও পড়ুনঃ কোলেস্টেরল-উচ্চ রক্তচাপ-সুগারের মতো হাজার রোগ সারে, শুধু এই পদ্ধতিতে উচ্ছে খেলেই কেল্লাফতে
advertisement
তবে কী আলোর উৎসবে মেতে ওঠে না এই গ্রামের গ্রামবাসীরা? জানা গিয়েছে, পুজো হয়। তবে তা কোনও মাটির প্রতিমায় নয়। বরং শতাব্দী প্রাচীন দেবীর প্রস্তর মূর্তিতে পুজো পান দেবী কালী। মন্তেশ্বরের গোপালনগর গ্রামের গ্রাম্য দেবী-দেবী কালী, মনসা। একই মন্দিরে প্রস্তর মূর্তি রূপে পাশাপাশি পুজিতা হন এই দুই দেবী। জানা যায়, কয়েকশো বছর আগে গ্রাম সংলগ্ন একটি জায়গা থেকে লাঙ্গলের ফালে একটি প্রস্তর মূর্তি ওঠে। পরবর্তীকালে বর্ধমান রাজ পরিবারের তরফে প্রদান করা হয় আরও একটি প্রস্তর মূর্তি। মন্দিরে আজও পুজিতা হন সেই মূর্তি।
আরও পড়ুনঃ কালীপুজোয় ফের আবহাওয়া বদল? হাওয়া অফিসের বড় আপডেট! কী হতে চলেছে জেলায়?
আরও জানা গিয়েছে, গ্রাম্য দেবীর সেবায়েত হিসেবে গ্রামে আসে ভট্টাচার্য পরিবার। তারপর থেকে দেবীর পূজা-অর্চনা ও ভোগের দায়িত্বে রয়েছে তারাই। এই প্রসঙ্গে সেবায়েত পরিবারের এক সদস্য, “এই মূর্তিই শুধুমাত্র আমাদের গ্রামে পুজো হয় । কোনও মাটির প্রতিমা আসে না। কেউ আনার চেষ্টা করলে তাদের ক্ষতি হয়, এটা আমাদের শোনা কথা । বহুদিন ধরে এই রীতি চলে আসছে।”
কার্তিক মাসে দীপালিকা কালীপুজোর দিন বেশ কিছু রীতিনীতি মেনে পুজো হয় এখানে। পুজোর উপাচারে চালের প্রদীপ দেওয়া হয়। লক্ষ্মী, অলক্ষ্মী পুজোর পর হয় কালীর আরাধনা। তবে কালী পুজোর পাশাপাশি এই দেবীর মূল পুজো অনুষ্ঠিত হয় আষাঢ় নবমী তিথিতে। বছরে একমাত্র ওই দিনই মন্দির থেকে বের করে আনা হয় দেবীর প্রস্তর মূর্তি। অঙ্গরাগের পর বহুবিধ অলংকারে সাজিয়ে রথে করে গ্রামে প্রদক্ষিণ করানো হয় দেবী মূর্তি।
সেবায়েত পরিবারের এক গৃহবধূ শুভলক্ষী ভট্টাচার্যের কথায় কারও জমি, পুকুরে সবজি মাছ হলে, প্রথম তা নিবেদন করা হয় গ্রাম্য দেবীর কাছে।বিভিন্ন নিয়ম-রীতি মেনে নানা ভোগ নিবেদন করা হয় দেবীকে।দেবীরভোগ, পুজো ঘিরে ব্যস্ততায় দিন কাটে পরিবারের মহিলাদের। এ ভাবেই নিজস্ব রীতি রেওয়াজ মেনে কয়েকশো বছর ধরে পুজো হয়ে আসছে গোপালনগরে। দেবীর মৃন্ময়ী রূপের পরিবর্তে প্রস্তর মূর্তির আরাধনা নিয়েই মেতে ওঠেন গ্রামবাসীরা।
বনোয়ারীলাল চৌধুরী