হোয়াটসঅ্যাপ কলে, সকাল সকাল এভাবেই কথা শুরু হল বাংলাদেশের জনপ্রিয় সিনে পরিচালক মোস্তফা সরওয়ার ফারুকির সঙ্গে ৷ ইন্টারনেটের জেরে তখন ভারত-বাংলাদেশ কানেক্টেড ৷ ঠিক যেমন তাঁর পরিচালিত ছবি ‘ডুব’ ৷ বাংলাদেশের গল্প ৷ ভারতের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনা ৷ আর এখন সেই ছবি অস্কারে পাড়ি ৷ সঙ্গে ‘ডুব’-এর হাত ধরে বিশ্ব মঞ্চে বাংলা ভাষা ৷
advertisement
অস্কার দৌড়ে ‘ডুব’ ৷ কতটা খুশি ?
খুবই খুশি ৷ বিশ্বের কাছে নিজের দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারছি ৷ এটা তো সত্যিই গর্বের ব্যাপার ৷ তবে এ ঘটনা আমার জন্য প্রথম নয় ৷ এর আগে ‘থার্ড পারসান সিঙ্গুলার নাম্বার’ ও ‘টেলিভিশন’ এই দুটো ছবি অস্কারে বাংলাদেশের তরফ থেকে অফিসিয়াল এন্ট্রি পেয়েছিল ৷ তবে এবার আমার অনুভূতিটা একেবারেই আলাদা ৷ আমার অন্যান্য ছবির থেকে ‘ডুব’ অনেকদিক থেকেই আলাদা ৷ বহু সিনেমা পরিচালক, আমার বন্ধু-বান্ধবও একথা আমাকে বলেছে, ‘ডুব’ নির্মাণের ক্ষেত্রে আমার শৈলিটা একেবারেই নাকি আলাদা ছিল ৷ আমিও সেটা অনুভব করেছি ৷ তার ওপর এই ছবি বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ প্রযোজনায় তৈরি ৷ বলিউড অভিনেতা ইরফানের সঙ্গে আমার প্রথম কাজ ৷ ‘ডুব’ খুবই স্পেশাল !
ইরফান খান খবরটা পেয়েছেন? আপনার সঙ্গে কথা হয়েছে ?
হ্যাঁ, ইরফান খান খবরটা পেয়েছেন ৷ কথাও হয়েছে ৷ ওঁর টিমের সঙ্গেও আমার কথা হয়েছে ৷ খুবই আপ্লুত ইরফান ৷ অন্যান্য সংবাদ মাধ্যমেই ইরফান জানিয়েছেন, ডুব অস্কারে যাওয়ার জন্য তাঁর আনন্দের কথা ৷
আপনার কথা হয় ইরফানের সঙ্গে ?
লন্ডনে ইরফান চিকিৎসাধীন ৷ মাঝে মধ্যে কথা হয় ৷ প্রার্থনা করি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক তিনি ৷
একসময় ‘ডুব’ ছবি বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হওয়ার কথা ছিল ৷ সেই ছবিই এখন অফিসিয়াল এন্ট্রি ৷ কেমন লাগছে ?
বিতর্ক ব্যাপারটা যে কোনও সিনেমা পরিচালকদের সঙ্গে প্রথম থেকেই সম্পর্কে আবদ্ধ ৷ সিনেমা নিয়ে নানারকম ঝড়, ঝঞ্ঝা ফেস না করলে, পরিচালক হয়তো ছবিই করতে ভুলে যাবে ৷ তবে এগুলো সবই বাইরের বিতর্ক ৷ আমার পুরো মনটাই থাকে ছবির অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে ৷ আশে-পাশে চলা প্রোপাগান্ডা নিয়ে আমি কখনই মাথা ঘামাই না ৷ তবে যাই হোক, ধন্যবাদ বাংলাদেশ ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজকে তাঁরা আমার ছবিকে ফের বেছে নিয়েছেন অস্কারে এদেশের হয়ে লড়াইয়ের জন্য ৷ বিশ্বমঞ্চে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে পারছি, এর থেকে আর ভালো কী হতে পারে ৷
কী মনে হয় ‘ডুব’ অস্কারের লড়াইয়ে জিততে পারবে?
সেটা তো বলা মুশকিল ৷ আসলে ব্যাপারটা একটা লম্বা প্রোসেস ৷ প্রচুর ছবি অস্কারের দৌড়ে সামিল হয় ৷ যার মধ্যে থেকে ৩০-৪০টি ছবি থাকে যাদের ঝুলিতে নানা পুরস্কার, দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যমে রিভিউ থাকে। এদের মাঝে যে কোনো পাঁচটা নমিনেটেড হওয়ার যোগ্যতা রাখে৷ তবে আমাদের ছবি ‘ডুব’-এর ঝুলিতেও ভালো রিভিউ রয়েছে ৷ পুরস্কার রয়েছে ৷ এবার দেখা যাক কতদূর টিকতে পারে !
ভারত ও বাংলাদেশের ছবি অস্কারে গিয়ে শেষ অবধি ছিটকে যাচ্ছে...
হ্যাঁ, এটা ঠিকই বলেছেন ৷ আমারও আগের দুটি ছবি দৌড়ে সামিল হলেও, শেষ অবধি টিকে থাকতে পারেনি ৷ আসলে বাংলাদেশে এমনিতেই কম ছবি তৈরি হয় ৷ যার মধ্যে ৩-৪টে ছবি আন্তর্জাতিক মানের অবশ্যই ৷
আর ভারতের ক্ষেত্রে বলতে পারি, একটা সময় অবধি ভারতীয় ছবিগুলো কোথায় যেন থমকে গিয়েছিল ৷ তবে এখন ছবি এগোচ্ছে ৷ যার মধ্যে অনেকগুলোই কিন্তু আন্তর্জাতিক মানের ৷
আর বাংলা ছবি?
ভারতে একটা নিউ ওয়েভ আসি আসি করছে। সেই ওয়েভে মারাঠি, মালায়ালাম বা এমনকী হিন্দি ভাষাও হাজির আছে। বাংলা ছবি সে অর্থে সেখানে হাজির নেই ৷ গত দশ বারো বছরের ভারতীয় ছবির ফেস্টিভ্যাল হিস্ট্রি আর ইন্টারন্যাশনাল ক্রিটিকদের রিভিউয়ের দিকে তাকালে বোঝা যাবে ব্যাপারটা। এর আগে দেশি-বিদেশি চলচ্চিত্র উৎসবে সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, ঋত্বিক ঘটক, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত-র ছবি চলতে দেখেছি ৷ আলোচনা হতে দেখেছি এই সব ছবি নিয়ে ৷ এখন কেন বাংলা ছবি সেই জায়গায় নেই এটা তো বাইরের মানুষ হিসাবে আমি বলতে পারব না।
আপনার কী মনে হয় বাংলা ছবির ভালোর জন্য দুই দেশের যৌথ প্রযোজনায় আরও বেশি ছবি হওয়া উচিত?
অবশ্যই হওয়া উচিত ৷ এটা তো আমি বার বারই বলে থাকি ৷ আসলে বলিউড খুব বড় একটা ইন্ডাস্ট্রি ৷ ওই ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে লড়তে একটা নিজস্ব মেকানিজম দরকার ৷ এটা সংস্কৃতির বাজার ৷ একটা নিজস্ব নিয়ম না নিয়ে চললে, টিকে থাকাটা মুশকিল ৷ আর এই কারণেই দুই বাংলাকে একসঙ্গে হয়ে কাজ করা উচিত ৷ এপারের গল্প ওপারে যাক, ওপারের গল্প এপারে আসুক ৷ তবেই তো সংস্কৃতির বদল ঘটবে ৷ তবেই তো চিন্তাভাবনার আদান-প্রদান ঘটবে ৷ হয়তো প্রথম প্রথম অল্প সংখ্যাক লোক এর সঙ্গে যুক্ত হবে ৷ তবে আমার মনে হয় দুই বাংলার সিনেমা নিয়ে উৎসাহটা তৈরি করতে হবে ৷
তাহলে আপনার নেক্সট ছবিটিও কি দুই দেশের যৌথ প্রযোজনায় তৈরি হচ্ছে?
আমার পরবর্তী ছবি ‘শনিবার বিকেল’ ৷ যার পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ চলছে ৷ এটি বাংলাদেশ ও জার্মানির যৌথ প্রযোজনায় তৈরি হয়েছে ৷ তবে পোস্ট প্রোডাকশনে ভারতীয় প্রযোজনা সংস্থা জড়িত হতে পারে ৷ বাংলাদেশের বতর্মান সময়, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়েই তৈরি হয়েছে এই ছবি ৷ এই ছবিটির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন ১২ টি দেশের কলাকুশলীরা ৷ ভারত থেকে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ও রয়েছেন ৷
গোটা বিশ্বে ওয়েব সিরিজ তো দারুণ জনপ্রিয় ৷ এই ওয়েব সিরিজ কী সিলভার স্ক্রিনকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ছে ?
আমি কিন্তু নিজেই ওয়েব সিরিজের দারুণ ভক্ত ৷ অন্তত, পরিচালক হিসেবে তো নিশ্চয়ই ৷ যে স্বাধীনতা আমাকে বড়পর্দা দেয় না , সেই স্বাধীনতা ওয়েব দিচ্ছে ৷ সেন্সর না থাকার কারণে, একজন পরিচালক একেবারে উন্মুক্ত মনে ছবি নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে পারছেন ৷ তবে একটাই আপত্তি ৷ আমি লক্ষ্য করেছি, ওয়েব সিরিজের নামে ‘সফট পর্ন’ অনেকেই তৈরি করছেন ৷ দ্রুত জনপ্রিয় হওয়ার জন্য হয়তো ৷ এই ব্যাপারটাকে খুব একটা সমর্থন করি না ৷ সিনেমায় যৌনতা আমারও খুব ভালো লাগে ৷ তবে সেটা যদি শৈল্পিকভাবে দেখানো হয়, তাতে ক্ষতি নেই ৷ কিন্তু সফট পর্ন কখনই নয় !
.quote-box { font-size: 18px; line-height: 28px; color: #767676; padding: 15px 0 0 90px; width:70%; margin:auto; position: relative; font-style: italic; font-weight: bold; }
.quote-box img { position: absolute; top: 0; left: 30px; width: 50px; }
.special-text { font-size: 18px; line-height: 28px; color: #505050; margin: 20px 40px 0px 100px; border-left: 8px solid #ee1b24; padding: 10px 10px 10px 30px; font-style: italic; font-weight: bold; }
.quote-box .quote-nam{font-size:16px; color:#5f5f5f; padding-top:30px; text-align:right; font-weight:normal}
.quote-box .quote-nam span{font-weight:bold; color:#ee1b24}
@media only screen and (max-width:740px) {
.quote-box {font-size: 16px; line-height: 24px; color: #505050; margin-top: 30px; padding: 0px 20px 0px 45px; position: relative; font-style: italic; font-weight: bold; }
.special-text{font-size:18px; line-height:28px; color:#505050; margin:20px 40px 0px 20px; border-left:8px solid #ee1b24; padding:10px 10px 10px 15px; font-style:italic; font-weight:bold}
.quote-box img{width:30px; left:6px}
.quote-box .quote-nam{font-size:16px; color:#5f5f5f; padding-top:30px; text-align:right; font-weight:normal}
.quote-box .quote-nam span{font-weight:bold; color:#ee1b24}
}