তার পর পেরিয়ে গিয়েছে প্রায় পাঁচটি বছর৷ জনমানসে কতটুকু বোধগম্য হয়েছে 'কনসেন্ট (Consent) এর ধারণা? সম্প্রতি সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের একটি রিপোর্টে প্রকাশ পেয়েছে, 'না' বলার এই অধিকার থেকে এখনও যোজন দূরে মহিলারা। সারা বিশ্বের উন্নয়নশীল ৫৭টি দেশের মধ্যে মাত্র ৫৫ শতাংশ মহিলা তাঁদের পার্টনারের সঙ্গে যৌনতার ক্ষেত্রে 'নিজের ইচ্ছায়' লিপ্ত হতে পারেন। শুধু যৌনতা নয়, যৌনতা পরবর্তী গর্ভ-নিরোধন থেকে নিজেদের শরীর-স্বাস্থ্যের যত্ন, সবটুকুর ক্ষেত্রেই তাঁদের পুরুষ সঙ্গীর ইচ্ছে ও অনিচ্ছে প্রাধান্য পেয়ে থাকে।
advertisement
সারা বিশ্বের প্রায় এক চতুর্থাংশ দেশ জুড়ে চালানো এই সমীক্ষা অনু্যায়ী, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে মহিলাদের যৌনতার ক্ষেত্রে স্বকীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা সব চেয়ে কম। সাহারা প্রদেশ সম্পৃক্ত দেশগুলি যেমন-- মালি, সেনেগাল এবং নাইজার এই তিনটি দেশে মহিলাদের অবস্থা সব চেয়ে খারাপ। এই তিনটি দেশের ক্ষেত্রে বয়ঃসন্ধির সময়ে মাত্র ১০ শতাংশ মেয়ে যৌনতা অথবা গর্ভ-নিরোধনের ক্ষেত্রে নিজেদের ইচ্ছা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। মালির ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্ক মহিলাদের মধ্যে ৭৭ শতাংশ যৌনতা ও গর্ভনিরোধনের ক্ষেত্রে স্বকীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিলেও, মাত্র ২২ শতাংশ মহিলা নিজের মতো করে যৌনতা পরবর্তী সময়ে নিজেদের শরীর ও স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে পারেন৷ ইথিওপিয়ায় গর্ভনিরোধনের ক্ষেত্রে মহিলাদের স্বকীয়তার হার ৯৪ শতাংশ হলেও যৌনতার ক্ষেত্রে মাত্র ৫৪ শতাংশ মহিলা নিজের ইচ্ছেয় 'না' বলতে পারেন।
তবে যৌনতা ও যৌনতা সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ের ক্ষেত্রে মহিলাদের স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারার প্রশ্নটি আবার প্রাদেশিকভাবে ওঠা নামা-করে থাকে। পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বয়ঃসন্ধির দোড়গোড়ায় থাকা ৭৬ শতাংশ মহিলা যৌনতা, গর্ভ-নিরোধন ও তাঁদের শরীর স্বাস্থ্যের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের দেশগুলির ক্ষেত্রেও এই পরিসংখ্যান প্রযোজ্য। পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ৪০-৮১ শতাংশ, মধ্য প্রাচ্য ও দক্ষিণ প্রাচ্যের ৩৩-৭৭ শতাংশ ও লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের ৫৯-৮৭ শতাংশ মহিলারা যৌনতা, গর্ভনিরোধন ও নিজেদের শরীর-স্বাস্থ্যের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে জানিয়েছে জাতিপুঞ্জের ওই রিপোর্ট।
সব মিলিয়ে পরিস্থিতি বেশ উদ্বেগজনক। জাতিপুঞ্জের পপুলার ফান্ডের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর নাতালিয়া কানেমের গলায়ও হতাশার সুর। 'মহিলাদের শারীরিক স্বায়ত্তের প্রশ্নটিকে অস্বীকার আসলে তাদের মৌলিক মানবাধিকারের জায়গাটিকেই চূর্ণ করে, লিঙ্গবৈষম্যকে প্রতিষ্ঠা করে থাকে', বলছেন ড. কানেম।