লাই চি ওয়াই (Lai Chi-wai)। হার না এই মানুষটি শারীরিক প্রতিবন্ধকতা জয় করে প্রায় ১০ ঘণ্টার বেশি ঝুলে থেকে ধীরে ধীরে হংকংয়ের গগনচুম্বী নিনা টাওয়ারের ২৫০ মিটারের বেশি উচ্চতায় উঠে পড়েন। তবে ৩০০ মিটার উচ্চতায় পৌঁছাতে পারেননি। লাই জানান, তিনি আসলে ভয় পাচ্ছিলেন। কেন না, পাহাড়ে চড়ার সময় ছোট ছোট গর্ত, পাথরকে আঁকড়ে ধরে ওঠা যায়। কিন্তু কাচের বিল্ডিংয়ের ক্ষেত্রে সেই উপায়ও নেই। এই পুরো ইভেন্ট জুড়ে প্রায় ৫.২ মিলিয়ন হংকং ডলার অনুদান হিসেবে উঠে এসেছে। যা পৌঁছে যাবে স্পাইনালে কর্ডের সমস্যায় ভোগা রোগীদের চিকিৎসায়।
advertisement
তবে, ২০১১ সালে পরিস্থিতি অন্য রকম ছিল। রক ক্লাইম্বিং সেগমেন্টে চারবার এশিয়া চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে ফেলেছিলেন লাই। এক সময়ে বিশ্বের সেরা রক ক্লাইম্বারদের মধ্যে অষ্টম স্থানে ছিলেন তিনি। বছর দশেক আগের একটা গাড়ি দুর্ঘটনায় সব বদলে যায়। লাইয়ের শরীরের নিচের অংশ এখন আর কাজ করে না। তবে প্রতিভা আর প্রচেষ্টাকে আটকানো মুশকিল। তাই হুইলচেয়ার চড়েই পুলে সিস্টেমকে (চাকার মধ্যে দড়ি লাগিয়ে একটি নির্দিষ্ট দিকে যাওয়া) কাজে লাগিয়ে ফের ক্লাইম্বিং শুরু করেন। বছর পাঁচেক আগে হুইলচেয়ার নিয়েই হংকংয়ের ৪৯৫ মিটার দীর্ঘ লায়ন রক মাউন্টেনে চড়তে শুরু করেন।
এক অদম্য ইচ্ছে যেন লাইকে তাড়া করে বেড়ায়। তাঁর কথায়, শুধুমাত্র বেঁচে থাকা যথেষ্ট নয়। আরও অনেক কিছু আছে। অনেক ইচ্ছে থাকে। তাদের পিছু নেওয়াই যেন তাঁর কাজ। তাই হুইলচেয়ার নিয়েও অভিযান শুরু করে দেন তিনি। পাহাড় চড়তে চড়তে এক সময়ে ভুলে যান যে, তিনি বিশেষ ভাবে সক্ষম। তাই এখনও স্বপ্ন দেখেন। আর যা ইচ্ছে হয়, সেটা করার চেষ্টা করেন।
লাইয়ের কথায়, এখনও সমাজে অনেক মানুষ রয়েছেন, যাঁরা সামগ্রিক পরিস্থিতি বুঝতে পারেন না। সমাজের বিশেষ ভাবে সক্ষম মানুষজনের প্রতিবন্ধকতা বা সমস্যাগুলি বুঝতে পারেন না। কিছু মানুষ আবার একটি গতানুগতিক ধারণা নিয়ে চলেন। তাঁদের মনে হয় লাইয়ের মতো মানুষরা বরাবরই খুব দুর্বল। তাঁদের সাহায্যের দরকার। সহানুভূতির দরকার। আসলে সহমর্মী মানুষের সংখ্যা যে খুবই কম, সেটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে লাইয়ের বক্তব্যে।
লাইয়ের স্পষ্ট বক্তব্য, সর্বদা পরিস্থিতি একই রকম থাকে না। মানুষের এই গতানুগতিক ধ্যান-ধারণায় একদিন পরিবর্তন আসবে। আজকাল এই বিশেষ ভাবে সক্ষম মানুষজনরাই নানা ক্ষেত্রে একাধিক পদক্ষেপ করছে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে নানা কাজে এগিয়ে আসছে। তাই তাঁদের এভাবে দুর্বল হিসেবে দেখার কোনও মানে হয় না। কারণ সমাজের এই বিশেষ ভাবে সক্ষম মানুষজনও আশার আলো দেখাতে পারেন পরিস্থিতি বিশেষে, অন্যের পাশে দাঁড়াতে পারেন। তাই সব সময়ে তাঁদের অসহায় ভাবাটা ভুল- জানাচ্ছেন তিনি।