গত বছর ৫ অগাস্ট বাংলাদেশ ছেড়ে পালিয়ে এসেছিলেন শেখ হাসিনা৷ সামরিক বিমানে বাংলাদেশ থেকে ভারতের দিকে রওনা দেন তিনি, সঙ্গে ছিলেন তাঁর বোন শেখ রেহানা ছাডা়ও বেশ কয়েকজন৷ সেদিন শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অধিকাংশ ভারতীয় এবং বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমই দাবি করেছিল, হাসিনার বিমান কলকাতার দিকেই উড়ে আসছিল৷ কিন্তু পরে জানা যায়, কলকাতার বদলে বিমানটি গাজিয়াবাদের বায়ুসেনা ঘাঁটিতে অবতরণ করেছে৷
advertisement
সেই সময় এর কারণ স্পষ্ট না হলেও এখন মনে করা হচ্ছে, গোপনীয়তা বজায় রাখতে এবং হাসিনার গতিবিধি যাতে সহজেই ফাঁস না হয়ে যায়, সেটাই ছিল তাঁকে কলকাতায় না নিয়ে আসার কারণ৷প্রাথমিক ভাবে হাসিনার বিমানের কলকাতার অভিমুখে রওনা দেওয়ার কারণ ছিল বাংলাদেশের আকাশসীমা ছেড়ে দ্রুত বেরিয়ে আসা৷ কিন্তু দিল্লি যেতে গেলে হাসিনার বিমানকে বাংলাদেশের আকাশসীমায় অনেকটা বেশি সময় উড়তে হত৷ যা হাসিনার নিরাপত্তার পক্ষে ঝুঁকির হতে পারত৷
আরও পড়ুন: চিন জল বন্ধ করলে শুকিয়ে যাবে ব্রহ্মপুত্র? হুঁশিয়ারি পাকিস্তানের, তথ্য দিয়ে জবাব দিলেন হিমন্ত
বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলনের জেরে চাপের মুখে পড়ে প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে পালিয়ে এসেছিলেন শেখ হাসিনা৷ সেদিন লক্ষ লক্ষ উন্মত্ত জনতা হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনের দিকে এগিয়ে আসছিল৷ এর পর গণভবনে ঢুকে পড়ে তাণ্ডব চালায় সেই বিক্ষোভকারীদের দল৷ হাসিনা সেখানে থাকলে তাঁর প্রাণ সংশয়ও হতে পারত৷ বাংলাদেশি সংবাদপত্র দ্য ডেইলি স্টার-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, হাসিনার ওই বিমানটিকে যাতে কোনওরকম নজরদারি থেকে আড়াল করা যায় তাই সেটিকে প্রশিক্ষণাধীন বিমান হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল৷
বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু বায়ুসেনা ঘাঁটি থেকে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দেয় হাসিনার বিমান৷ সেটির স্কুয়াওক কোড দেওয়া ৪১৩১৷ কলকাতা এটিসি-কেও বিমানটিকে চিহ্নিত করার জন্য এই কোড দেওায়া হয় কিন্তু ঢাকা থেকে আকাশে ওড়ার পরেই বিমানটির সবকটি ট্রান্সপন্ডার বন্ধ করে দেওয়া হয়৷ এর অর্থ বিমানটি স্কুয়াওক কোড, সেটি কত উচ্চতায় উড়ছে, সেটির গতি কত এই ধরনের কোনও তথ্যই তখন আর জানা সম্ভব হবে না৷ এমন কি ঢাকা এবং কলকাতা এটিসি-র র্যাডার থেকেও বিমানটি অদৃশ্য হয়ে যায়৷ শুধুমাত্র মৌখিক ভাবে নিরাপদে বিমানটি উড়িয়ে আনার জন্য কলকাতা এবং ঢাকা এটিসি-র সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখেন বিমানের পাইলট৷
বিমানটি পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তের কাছাকাছি আসার পরই সেটির ট্রান্সপন্ডারগুলি নিয়ম মেনে চালু করা হয়৷ যাতে কলকাতার এটিসি বুঝতে পারে যে বিমানটি কাছাকাছি চলে এসেছে৷ এই সময় থেকেই বাংলাদেশি বায়সেনার সি ১৩০৩২৭ বিমানটির উপরে নজর রাখতে শুরু করে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ৷ শেখ হাসিনার বিমানকে ভারতে অবতরণের অনুমতিও দ্রুত দিয়ে দেওয়া হয়৷ ততক্ষণে রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছে বাংলাদেশ৷ এর পর দীর্ঘসময় ধরে হাসিনার গতিবিধি নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়৷ হাসিনা কোথায় গেলেন তা জানাও যাচ্ছিল না৷ শেষ পর্যন্ত ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল জানিয়ে দেন, হাসিনা ভারতেই আশ্রয় নিয়েছেন৷