দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ২০২৪ সালের অস্থিরতা কোনও শান্তিপূর্ণ ছাত্র আন্দোলন ছিল না। প্রথমে প্রকৃত ছাত্র আন্দোলন শুরু হলেও পরে চরমপন্থীরা সেই আন্দোলনকে সহিংস বিদ্রোহে রূপ দেয়। থানা জ্বালিয়ে দেওয়া, রাষ্ট্রীয় ও যোগাযোগ পরিকাঠামো ভাঙচুর—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি আইনশৃঙ্খলার সম্পূর্ণ ভাঙনের দিকে গিয়েছিল। তাঁর কথায়, তখন আর সেটি নাগরিক প্রতিবাদ ছিল না, ছিল হিংস্র জনতার তাণ্ডব।
advertisement
স্ত্রীর নামে পোস্টঅফিসে ১ লক্ষ টাকার ফিক্সড ডিপোসিট করলে ২ বছরে কত টাকা মিলবে?
শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত সহজ ছিল না, দেশে এখন চরমপন্থার দাপাদাপি।” তিনি জানান, মানুষ ও নাগরিকদের নিরাপত্তা তাঁর কাছে সর্বাগ্রে। সেই কারণেই অরাজতকতার মধ্যে পড়ে তিনি বাধ্য হয়ে দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বলেন, “এই সিদ্ধান্ত সহজ ছিল না, তবে আরও প্রাণহানি ঠেকানো এবং আশপাশের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এই পথ বেছে নিতে হয়।”
বাংলাদেশে ফেরার প্রসঙ্গে তিনি স্পষ্ট শর্ত রাখেন। তাঁর মতে, আগে সংবিধান ও আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। আওয়ামি লিগের উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, মিথ্যা মামলায় আটক রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি এবং প্রকৃত অর্থে অবাধ নির্বাচন—এই তিনটি বিষয় নিশ্চিত না হলে গণতান্ত্রিক বৈধতার প্রশ্নই ওঠে না। তিনি বলেন, জনগণের ভোটে নয়বার নির্বাচিত দলকে নিষিদ্ধ রেখে কোনও সরকার গণতান্ত্রিক দাবি করতে পারে না।
২০২৪ সালের আন্দোলন দমনে সরকারের ভূমিকা নিয়ে ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, প্রথম দিকে ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল এবং দাবিও মেনে নেওয়া হয়। কিন্তু পরে চরমপন্থীরা পরিস্থিতি বদলে দেয়। পুলিশ স্টেশন পোড়ানো ও রাষ্ট্রীয় সম্পত্তিতে হামলার মুখে যে কোনও সরকার যেমন ব্যবস্থা নেয়, তেমনই আইনশৃঙ্খলা ফেরাতে পদক্ষেপ করা হয়।
তিনি জানান, ২০২৪ সালের আগস্টে ঘটে যাওয়া মৃত্যুর তদন্তে একটি বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু ক্ষমতায় এসেই ইউনুস সরকার সেই কমিশন ভেঙে দেয়, দোষী সাব্যস্ত সন্ত্রাসীদের মুক্তি দেয় এবং যাদের ‘জুলাই যোদ্ধা’ বলে মহিমান্বিত করা হচ্ছে, তাদের কার্যত দায়মুক্তি দেয়। তাঁর অভিযোগ, সত্য উদ্ঘাটিত হবে বলেই ওই তদন্ত বন্ধ করা হয়েছে।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সম্পর্কে শেখ হাসিনার বক্তব্য, ইউনূস জনগণের একটিও ভোট না পেয়ে ক্ষমতায় বসেছেন। তাঁর অভিযোগ, মন্ত্রিসভায় চরমপন্থীদের জায়গা দেওয়া হয়েছে, দোষী সন্ত্রাসীদের ছাড়া হয়েছে এবং সংখ্যালঘুদের উপর হামলা রুখতে সরকার ব্যর্থ। আওয়ামি লিগের আমলে যে অর্থনীতি চারগুণ বেড়েছিল, তা এখন কার্যত থমকে গিয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রস্তাবিত নির্বাচন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামি লিগ নিষিদ্ধ থাকলে কোনও নির্বাচনই বৈধ হতে পারে না। তাঁর আশঙ্কা, চরমপন্থীরা ইউনুসকে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক মহলে গ্রহণযোগ্য মুখ দেখিয়ে দেশের ভিতরে প্রতিষ্ঠানগুলিকে মৌলবাদী করে তুলছে। তবু বাংলাদেশের মানুষের গণতন্ত্রে অটল বিশ্বাসের উপর আস্থা রাখছেন তিনি।
নিজের শাসনকালে গণতান্ত্রিক পরিসর নিয়ে বিতর্ক প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, নব্বইয়ের দশকে তাঁর দলই দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছিল। সামরিক শাসনের অভিজ্ঞতা থেকেই গণতন্ত্রের গুরুত্ব উপলব্ধি করেছিলেন তাঁরা। তাঁর দাবি, আওয়ামি লিগের আমলে বিরোধী রাজনীতির সুযোগ ছিল, যদিও কিছু দল নির্বাচন বয়কট করে সাধারণ মানুষের পছন্দের সুযোগ কমিয়েছিল।
বর্তমান সরকারের আন্তর্জাতিক অবস্থান নিয়েও কড়া সমালোচনা করেন শেখ হাসিনা। তাঁর বক্তব্য, পশ্চিমি সমর্থনে ক্ষমতায় এলেও এখন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি ইউনুস সরকারের পদক্ষেপের নিন্দা করছে, মন্ত্রিসভার সদস্যরা পদত্যাগ করছেন, সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে এবং নির্বিচারে গ্রেফতার চলছে। এর ফলে দীর্ঘদিনের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, সব প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্ক থাকা জরুরি হলেও ১৯৭১ সালের গণহত্যার স্বীকৃতি না দেওয়া পাকিস্তানের সঙ্গে ইউনূস সরকারের তড়িঘড়ি ঘনিষ্ঠতা উদ্বেগজনক। তাঁর মতে, কোনও নির্বাচিত ম্যান্ডেট ছাড়া এমন কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে বৈধ সরকার গঠিত হলেই বাংলাদেশের বিদেশনীতি জাতীয় স্বার্থের ভিত্তিতে পুনর্গঠিত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
সাক্ষাৎকারঃ অরুণ আনন্দ
