গত ৭ অক্টোবর ইজরায়েলের উপর আক্রমণ শানায় গাজার হামাস শাসক। তারই প্রেক্ষিতে শুরু হয় যুদ্ধ। আশা ছিল, ১৯৩টি দেশের সাধারণ পরিষদ বিশাল হলে কোনও সমাধান বেরোবে। বৃহস্পতিবার ফিলিস্তিনি অঞ্চলে ইজরায়েলি কর্মকাণ্ডের উপর আলোচনার জন্য বিশেষ জরুরি অধিবেশন শুরু হয়েছে। সেখানে জাতিসংঘে ইজরায়েলের রাষ্ট্রদূত গিলাদ এরদান ছাড়া, যুদ্ধবিরতি আহ্বানকে সমর্থন করেছেন সকলেই।
advertisement
ইজরায়েলের দাবি, যুদ্ধবিরতি মানেই হামাস ফের সশস্ত্র হওয়ার জন্য সময় দেওয়া, যাতে তারা আবার গণহত্যা করতে পারে। ইজরায়েল ও ইহুদিদের ধ্বংস করার অঙ্গীকার হিসেবে হামাসের বেশ কয়েকটি বিবৃতি উদ্ধৃত করেন এরদান। তার পর তিনি বলেন, যুদ্ধবিরতির যেকোনও আহ্বান শান্তির প্রচেষ্টা নয়। এটি ইজরায়েলের হাত বেঁধে রাখার একটি প্রচেষ্টা।
তবে বৃহস্পতিবার বহু রাষ্ট্রই যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে। গাজায় ক্রমাগত ইজরায়েলি বোমা হামলার সামনে ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা এবং প্রয়োজনীয় খাদ্য, জল, ওষুধ এবং জ্বালানী সরবরাহের কথা উঠে এসেছে বার বার। হামাসের হামলায় প্রায় ১,৪০০ ইজরায়েলি নিহত হয়েছেন বলে অনুমান। কিন্তু গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, ইজরায়েলের প্রতিশোধমূলক বিমান হামলায় ৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
এই বিষয়ের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু ছিল ইজরায়েল থেকে ২২০ জনেরও বেশি অপহৃত বেসামরিক নাগরিক। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, হামাস বেসামরিক বন্দীদের মুক্তি দিতে প্রস্তুত। আবার ইজরায়েলে বন্দী ৬,০০০ ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্ত করার দায়িত্ব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের।
কাতার এবং তুর্কির সঙ্গে ইরান এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মানবিক প্রচেষ্টায় তার ভূমিকা পালন করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন হোসেইন আমিরাবদুল্লাহিয়ান।
ইরান হামাসের প্রধান সমর্থক। অন্যদিকে কাতার ইতিমধ্যেই চার ইজরায়েলি বেসামরিক নাগরিকের মুক্তির ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করেছে। ইজরায়েলের দূত এরদান বলেছেন, আরব-ইজরায়েল সংঘাত বা ফিলিস্তিন প্রশ্নের সঙ্গে তাঁর দেশের পদক্ষেপের কোনও সম্পর্ক নেই। তিনি বলেন, এটা ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে যুদ্ধ নয়, গণহত্যাকারী জিহাদি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হামাসের সঙ্গে যুদ্ধ।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মনসুর বলেছেন, গাজায় নিহতদের ৭০ শতাংশই শিশু ও নারী। এই যুদ্ধ কী রক্ষা করা যাবে? এগুলো অপরাধ। তিনি বলেন, এটা বর্বরতা। যাদের জীবন আমরা এখনও বাঁচাতে পারি তাদের জন্য এটি বন্ধ করুন।
ইজরায়েল এবং প্যালেস্তাইন উভয় পক্ষই এদিন নিজের নিজের বক্তব্যে তুলে ধরেছে তাদের দেশের মর্মান্তিক পরিস্থিতি। জর্ডনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদিও আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তিনি ২২টি দেশের আরব গোষ্ঠীর পক্ষে কথা বলতে গিয়ে, ইজরায়েলি বোমা হামলায় ধ্বংস হওয়া বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নীচে মারা যাওয়া শিশুদের কথা বলেন। তিনি দাবি করেন, এখনও কিছু শিশু জীবিত। তাদের বের করা যাচ্ছে না। বাবা-মা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাঁরা অসহায়ভাবে শিশুদের সঙ্গে কথা বলে চলেছেন। অথচ, বাতাস ক্রমশ ফুরিয়ে আসছে।
ইজরায়েলি রাষ্ট্রদূতকে তীব্র তিরস্কার করে তিনি বলেন, আপনাদের দেখানোর মতো ভিডিও আমার কাছে নেই। এই যুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের জীবন ছিন্নভিন্ন হওয়ার বিষয়ে একটি কথাও না বলার জন্য সাফাদি এরদানের সমালোচনা করেন। জর্ডনের মন্ত্রী ইজরায়েলকে আরও বলেন যে, বেসামরিক নাগরিক, হাসপাতাল, স্কুল, বাড়ি এবং অন্য অবকাঠামো সুরক্ষিত রাখার জন্য আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলা উচিত।
তিনি জোর দেন, আত্মরক্ষার অধিকার মানেই হত্যার অনুমোদন নয়। সাফাদি যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদেরও নাম না করে সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে অনেকেই বিশ্বাস করে যে তারা ইজরায়েলের যুদ্ধে সমর্থন দিয়ে সাহায্য করছে। কিন্তু এটা না করে তারা বরং ইজরায়েলে অস্ত্র পাঠানোর পরিবর্তে, শান্তির জন্য একটি অবিলম্বে এবং কার্যকর পথ খোলার জন্য প্রতিনিধি দল পাঠান। এভাবেই তারা ইজরায়েলকে সাহায্য করতে পারে।
ইরানের আমিরাবদুল্লাহিয়ান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করেছেন এবং একে তিনি ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা বলেও দাবি করেছেন। তিনি বলেন, গাজায় গণহত্যা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। তিনি তেল আভিভ সরকারকে হোয়াইট হাউসের সীমাহীন আর্থিক, অস্ত্র এবং অপারেশনাল সহায়তার অনিয়ন্ত্রিত পরিণতির বিরুদ্ধে সতর্ক করেছিলেন যা গাজায় ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের মারাত্মক বোমাবর্ষণ এবং হত্যার সঙ্গে যুক্ত করেছে। জরুরি সাধারণ পরিষদের সভা শুক্রবার সকালে আবার শুরু হয়। সেখানে বক্তব্য রাখেন প্রায় 100 জন অবশীষ্ট বক্তা।
শুক্রবার বিকেলে মনসুর যে রেজল্যুশনের কথা বলেছেন তাতে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হয়েছে। গাজা উপত্যকায় খাদ্য, পানীয় এবং ওষুধ-সহ প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করতে হবে। পাশাপাশি ইজরায়েলকে উত্তর থেকে দক্ষিণে সরে যাওয়ার জন্য, সর্বাধিক সংযম এবং সমস্ত বেসামরিক নাগরিকদের মুক্তি দিতে হবে।
ঘটনা হল নিরাপত্তা পরিষদের মতো সাধারণ পরিষদে কোনও ভেটো নেই। এর রেজুলেশনও আইনত বাধ্যতামূলক নয়। তবে এটি সারা বিশ্বের মতামতকে প্রতিফলিত করে। তা থেকেই বোঝা যায়, ফিলিস্তিনিদের পক্ষে ব্যাপক সমর্থন রয়েছে। কিন্তু ইজরায়েলের এরদান অভিযোগ করেছেন এই রেজল্যুশনে হামাসের উল্লেখ নেই। সেটা কলঙ্কজনক।