এখনও পর্যন্ত এই হামলায় বিএলএ-এর হামলাকারীদের হাতে ৩০ জন পাক সেনার মৃত্যুর খবর মিলেছে৷ পণবন্দিদের ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে বেশ কিছু দাবিও জানিয়েছে তারা৷ তার মধ্যে অন্যতম প্রধান দাবি পাকিস্তানের বিভিন্ন জেলে বন্দি থাকা বালোচ আন্দোলনকারীদের মুক্তি৷ দাবি পূরণের জন্য পাকিস্তান সরকারকে ৪৮ ঘণ্টা সময় দিয়েছে বিএলএ৷ যদিও পাক সরকার এবং সেনা এখনও নমনীয় হওয়ার কোনও ইঙ্গিত দেয়নি৷ বরং পণবন্দিদের উদ্ধার করতে পাল্টা অভিযান শুরু হয়েছে৷ তবে আকাশপথে হামলা বন্ধ না হলে তার পরিণতি ভয়ঙ্কর হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে বিএলএ৷
advertisement
পাকিস্তানের বালোচ কাঁটা
দীর্ঘ কয়েক দশক ধরেই বালোচিস্তানের বাসিন্দা এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে পাকিস্তানের সেনা এবং সরকারের সংঘাত চলছে৷ বালোচিস্তানের বাসিন্দারা পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আলাদা রাষ্ট্রের দাবি জানিয়ে আসছেন৷ তাঁদের অভিযোগ, বালোচ জনজাতির মানুষেক কোণঠাসা করে রেখেছে পাকিস্তান সরকার৷ বালোচিস্তানের বহু বাসিন্দাকে পাক সরকার এবং সেনা গুম করে দিয়েছে বলেও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও অভিযোগ উঠেছে৷
দ্য ভয়েস অফ বালোচ মিসিং পার্সনস-এর দাবি অনুযায়ী, ২০০১ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে বালোচিস্তানের ৫২২৮ জন বাসিন্দা নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন৷
চিনের উপরেও ক্ষোভ বালোচিস্তানের মানুষের
সম্পদে ঠাসা বালোচিস্তানের উপর নজর পড়েছে চিনেরও৷ তাই চিনের উপরেও রাগ বালোচিস্তানের বাসিন্দাদের৷ তাঁদের অভিযোগ, বিভিন্ন পরিকাঠামো তৈরির প্রকল্পের নামে বালোচিস্তানের বাসিন্দাদের উপরে নজরদারি চালানোর ব্যবস্থা করেছে চিন৷ চিনা সাহায্যে বালোচিস্তানে যে প্রকল্পগুলি শুরু হয়েছে, তাতে পরিবেশেরও ক্ষতি হচ্ছে বলে অভিযোগ৷ এই প্রকল্পগুলির কারণে বালোচিস্তানের বহু বাসিন্দাকে অন্যত্র চলে যেতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ৷ বালোচিস্তানের সম্পদ ব্যবহার করে বহিরাগতরা আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছে বলে অভিযোগ বালোচিস্তানের বাসিন্দাদের৷
১৯৪৮ সালে বালোচিস্তানকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিল পাকিস্তান৷ তার পর থেকেই অর্থনৈতিক শোষণ, বঞ্চনার অভিযোগে বালোচিস্তানের বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়৷ যার থেকে জন্ম থেকে একাধিক বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী৷ দশকের পর দশক ধরে যাদের সঙ্গে পাক সেনার সংঘাত চলছে৷
বালোচিস্তানের ভৌগলিক অবস্থান
পাকিস্তানের দক্ষিণ পশ্চিম অংশে অবস্থিত বালোচিস্তান৷ পাকিস্তানের স্থলভাগের প্রায় ৪৪ শতাংশ রয়েছে বালোচিস্তানের মধ্যে৷ বালোচিস্তানের সঙ্গে তালিবান নিয়ন্ত্রিত আফগানিস্তানের দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে৷ আবার আরব সাগরের দীর্ঘ উপকূলও রয়েছে বালোচিস্তানে৷ যদিও পাকিস্তানের জনসংখ্যার মাত্র ৬ শতাংশ মানুষ বালোচিস্তানে বাস করেন৷
পসতুনদের পরে পাকিস্তানে বালোচ জনজাতির মানুষের সংখ্যা বালোচিস্তানে সবথেকে বেশি৷ গ্যাস, খনিজ সম্পদে ঠাসা বালোচিস্তান প্রদেশকে কেন্দ্র করেই চিন পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরও গড়ে উঠছে৷ চিনের সহযোগিতায় গদারে গভীর সমুদ্র বন্দরও গড়ে তোলা হয়েছে৷