মনে করা হচ্ছে, পাকিস্তানের সেনাপ্রধান যে কোনও মূল্যে ভারতের সঙ্গে সামরিক সংঘাত বা যুদ্ধ শুরু করতে মরিয়া৷ দ্য ইকোনমিক টাইমস-এর একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের মধ্যে দেশের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ দিন দিন বাড়ছে৷ আম পাকিস্তানিদের সমর্থন হারাচ্ছে পাক সেনা৷ এই অবস্থা থেকে সেনাবাহিনীর পায়ের তলার মাটি শক্ত করতেই ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ জিগিড় তুলছেন মুনির৷
advertisement
কিন্তু পাকিস্তানেই সমর্থন হারাচ্ছে পাক সেনা?
বাস্তবিকই অত্যন্ত কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে পাক সেনা৷ কারণ পাক সেনাবাহিনীর জেনারেল সহ শীর্ষ কর্তারা যেভাবে রাজনৈতিক বিষয়ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন, তা মানুষ ভাল ভাবে নিচ্ছেন না৷ এই প্রথম পাক সেনার শীর্ষ কর্তারা রাজনৈতিক বিষয়ে জড়াচ্ছেন এমন নয়, কিন্তু আম পাকিস্তানিরা সেনা কর্তাদের এই ভূমিকার বিরুদ্ধে সুর চড়াচ্ছেন, এমন ঘটনা আগে ঘটেনি৷ প্রকাশ্যেই সাধারণ মানুষে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন৷ সাধারণ মানুষের সমর্থন কমতে থাকায় পাক সেনার মনোবলও তলানিতে গিয়ে ঠেকছে৷ তার উপর সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানে যেভাবে সেনা জওয়ানরা জঙ্গি আক্রমণের শিকার হয়েছেন, তাতে পাক সেনার নিচুতলায় ক্ষোভ এবং আতঙ্ক দানা বাঁধছে৷
আরও পড়ুন: কলকাতায় জন্ম, ৩৪ বছরের চাকরি জীবনে ৫৭ বার বদলি! বুধবারই অবসর নিচ্ছেন আপোসহীন আইএস অফিসার অশোক খেমকা
এরই মধ্যে গত সোমবার সমাজমাধ্যমে ভাইরাল একটি চিঠির সূত্র ধরে দাবি করা হয়, উপরমহলে বিরুদ্ধে ক্ষোভ এবং মানসিক চাপের কারণে গণইস্তফা দিতে শুরু করেছেন পাক সেনা জওয়ান এবং অফিসাররা৷ যদিও পাকিস্তানের প্রথমসারির সংবাদপত্র ডন এই খবরকে মিথ্যে বলে দাবি করেছে৷ ভারতীয় সমাজমাধ্যম থেকে এই ভিত্তিহীন খবর ছড়ানো হচ্ছে বলে দাবি করেছেন পাক সেনার পেশোয়ার কর্পস-এর এক সেনাকর্তাও৷
গণইস্তফার এই খবরকে যদি ভিত্তিহীন বলে ধরেও নেওয়া হয়, তা সত্ত্বেও পাক সেনার অন্দরে যে সবকিছু ঠিক নেই, তা স্পষ্ট৷ বহু দেশেই সেনাবাহিনীকে কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হয়৷ কিন্তু পাক সেনা এই মুহূর্তে এমন উভয় সঙ্কটে পড়েছে, যা নজিরবিহীন৷ একদিকে দেশের ভিতরেই জঙ্গিরা মরিয়া হয়ে পাক সেনার উপরে যখন তখন হামলা চালাচ্ছে, আবার দেশের মানুষও পাক সেনার উপরে আস্থা হারিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন৷ এই পরিস্থিতির বদল আনতেই কাশ্মীরে জঙ্গিদের মদত দিয়ে পাক সেনাপ্রধান জেনারেল মুনির দেশবাসীর নজর ঘুরিয়ে দিতে মরিয়া চেষ্টা করছেন বলেই মত ভারতীয় গোয়েন্দা এবং কূটনীতিকদের৷
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের গ্রেফতারির পর থেকেই সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জনমত গড়ে উঠতে থাকে পাকিস্তানে৷ ইমরান খানের গ্রেফতারির পরই তাঁর দল পিটিআই-এর সমর্থকরা পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রান্তে সেনা কার্যালয়ে ঢুকে পড়ে বিক্ষোভ দেখায় এবং ভাঙচুর করে৷ রাওয়ালপিণ্ডিতে সেনা সদর দফতর, লাহোরে সেনার শীর্ষ কর্তার বাসভবনে হামলা হয়৷ সেনা- বিক্ষোভকারী সংঘর্ষে একাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে৷ প্রায় ৩২০০ বিক্ষোভকারীর বিরুদ্ধে মামলা শুরু করে পাক সেনা৷ তাঁদের মধ্যে প্রায় ২৫ জনকে ২ থেকে ১০ বছরের কারাদণ্ডের সাজা দেওয়া হয়েছে৷ পাকিস্তানের মিলিটারি কোর্ট থেকেই এই শাস্তি দেওয়া হয়৷
সেনা আদালতে সাধারণ মানুষের বিচার কেন হবে, তা নিয়েও পাকিস্তানের আম জনতার মধ্যে ক্ষোভ জন্মেছে৷ এই ঘটনাকে সেনার ক্ষমতার অপব্যবহার এবং অগণতান্ত্রিক পদ্ধতি বলেই মনে করেন পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের একটা বড় অংশ৷
সেনার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যেই বিক্ষোভে দেখিয়েছে ইমরানের দল পিটিআই৷ সাধারণ মানুষও সেনার দমনমূলক নীতির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যেই মুখ খুলেছেন৷ সমাজমাধ্যমেও পাক সেনা বিরোধী প্রচার চলছে৷ তার উপরে পাক সেনার অন্দরেই ইমরান খানের বিপুল সংখ্যক সমর্থক রয়েছে৷ ফলে ইমরান এবং তাঁর দলের বিরুদ্ধে পাক সেনার শীর্ষকর্তারা যে পদক্ষেপ করছেন, তা ভাল ভাবে নাও নিতে পারে বাহিনীর নিচুতলার সদস্যরা৷ ফলে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বের সঙ্গে নিচুতলার জওয়ানদের মতপার্থক্য তৈরি হওয়ার আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে পাক সেনার অন্দরে৷