যদিও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশজুড়ে ন্যাশনাল গার্ড ও মেরিন সেনা মোতায়েন করেছেন এবং শুধু লস অ্যাঞ্জেলেস থেকেই প্রায় ২০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তারপরও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে।
লস অ্যাঞ্জেলেস ছাড়াও, অন্যান্য শহরে দেখা গেছে বিক্ষোভকারীরা “ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (ICE)” এর বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছেন, সাইনবোর্ড বহন করছেন এবং শহরের কেন্দ্রস্থলে রাস্তা অবরোধ করছেন, ফেডারেল অফিসগুলোর সামনেও জট তৈরি করছেন অনেক মানুষ। যদিও অনেক জায়গায় বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ ছিল, কিছু জায়গায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষও হয়। পুলিশ কেমিক্যাল স্প্রে ব্যবহার করে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে এবং গ্রেফতার চালায়।
advertisement
আরও পড়ুন: WW3-এর প্রস্তুতি! রাশিয়ার ভয়ে কাঁপছে জার্মানি, বাঙ্কার তৈরিতে খরচ করছে কোটি কোটি ইউরো
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী দিনগুলোতে আরও বড় পরিসরের বিক্ষোভের পরিকল্পনা চলছে। আগামী শনিবার “নো কিংস” নামের দেশব্যাপী আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছে, যেটি ট্রাম্পের ওয়াশিংটনে নির্ধারিত মিলিটারি প্যারেডের দিনেই আয়োজন করা হবে।
এদিকে ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছে, বিক্ষোভ সত্ত্বেও ইমিগ্রেশন অভিযান ও বিতাড়নের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। লস অ্যাঞ্জেলেসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মঙ্গলবার রাতে কারফিউ জারি করা হয়েছিল। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই বিক্ষোভগুলোকে “বিদেশি শত্রুর হামলা” বলে উল্লেখ করেছেন।
প্রতিবাদের নামে লস অ্যাঞ্জেলেসের কেন্দ্রস্থলে লুটপাট, ভাঙচুর, আগুন লাগানোসহ একাধিক হিংসাত্মক ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। যে বিক্ষোভগুলি সকালে শান্তিপূর্ণ বলা হয়েছিল, সেগুলিরই রং পাল্টে যায় রাতে। ভয়ঙ্কর হিংসার আগুন ছড়িয়ে পরে দাউ দাউ করে।
আরও পড়ুন: ৪৮ ঘণ্টায় ২০টিরও বেশি ভূমিকম্প পাকিস্তানের এই শহরে! ভয়ঙ্কর ভূমিকম্পের আশঙ্কা, ঘটনায় তীব্র আতঙ্ক…
সাংবাদিকদের সামনে লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র ক্যারেন ব্যাস বলেন, “আমি শহরে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছি এবং শহরের কেন্দ্রস্থলে কারফিউ জারি করেছি যাতে লুটপাট, ধ্বংস বন্ধ করা যায়।” তিনি জানান, শহরের মোট ৫০০ বর্গমাইল এলাকার মধ্যে এক বর্গমাইল অঞ্চল সকাল ৬টা পর্যন্ত (১৩০০ GMT) সাধারণ নাগরিকদের জন্য বন্ধ থাকবে, শুধুমাত্র বাসিন্দা, সাংবাদিক ও জরুরি পরিষেবার কর্মীরা চলাফেরা করতে পারবেন।
লস অ্যাঞ্জেলেসে এই অবৈধ অভিবাসী নিয়ে ৬ জুন থেকে ছোট আকারে শুরু হওয়া প্রতিবাদে কয়েক হাজার মানুষ রাস্তায় নামেন। রাতে কিছু দল আগুন লাগানো, দেওয়ালে গ্রাফিতি করা এবং জানালার কাচ ভাঙার মতো কাজ করে।
AFP-এর খবর অনুযায়ী, সোমবার রাতে অন্তত ২৩টি দোকানে লুটপাট চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (ICE)-এর অভিযানের বিরুদ্ধে চলমান বিক্ষোভের মধ্যেই লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র ক্যারেন ব্যাস মঙ্গলবার রাতে শহরের ডাউনটাউন এলাকায় কারফিউ জারি করেন। এই কারফিউ মঙ্গলবার রাত ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। এর আগে শহরের প্রায় ২৩টি ব্যবসায় লুটপাট এবং সহিংসতার খবর পাওয়া যায়।
বিক্ষোভ পঞ্চম দিনে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই বিক্ষোভকে “শান্তি ও জনশৃঙ্খলার উপর আক্রমণ” বলে অভিহিত করেন এবং আরও সেনা মোতায়েনের নির্দেশ দেন। যদিও ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসাম এর বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন, তবুও ক্যালিফোর্নিয়ার সম্মতি ছাড়াই লস অ্যাঞ্জেলেসে ইতোমধ্যে ন্যাশনাল গার্ড এবং ইউএস মেরিন মোতায়েন করা হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প লস অ্যাঞ্জেলেসে ৪,০০০ ন্যাশনাল গার্ড এবং প্রায় ৭০০ মেরিন মোতায়েন করেন, যার উদ্দেশ্য ছিল ফেডারেল সম্পত্তি, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নিরাপত্তা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা। এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে গভর্নর গ্যাভিন নিউসাম আদালতের হস্তক্ষেপ চান। নিউসাম বলেন, “এই মোতায়েন গণতন্ত্রের উপর আক্রমণ। ক্যালিফোর্নিয়া লড়াই চালিয়ে যাবে। আমরা ন্যাশনাল গার্ডকে সম্মান করি, কিন্তু তাদের লস অ্যাঞ্জেলেসে থাকা উচিত নয়।”
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ট্রাম্প প্রশাসনের নির্দেশে মোট ৪,০০০ ন্যাশনাল গার্ড লস অ্যাঞ্জেলেসে মোতায়েন করা হয়েছে। এক মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার পর্যন্ত গ্রেটার লস অ্যাঞ্জেলেস এলাকায় প্রায় ২,১০০ ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন ছিল। পেন্টাগন আরও জানিয়েছে, শহরের কেন্দ্রে ৭০০ মেরিন মোতায়েন করা হয়েছে যারা ফেডারেল ভবন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে রক্ষা করার জন্য প্রস্তুত অবস্থায় রয়েছে।
লস অ্যাঞ্জেলেসে এই প্রথমবারের মতো মেরিন সেনা মোতায়েন করা হচ্ছে, এবং এটি গত তিন দশকে যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে সিভিল আনরেস্টে সেনা মোতায়েনের প্রথম ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।