বিদেশের মাটিতে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করার জন্য দিল্লির আমলা মহলে সুনাম রয়েছে জে পি সিং-এর৷ বর্তমানে বিদেশের মাটিতে সঙ্কটের সময়ে ভারতের ত্রাতাও বলা চলে তাঁকে৷ জে পি সিং-এর কূটনৈতিক কেরিয়ারে সবথেকে উল্লেখযোগ্য ঘটনা নিঃসন্দেহে পাকিস্তান থেকে ভারতীয় তরুণী উজমা আহমেদের উদ্ধারপর্ব৷ যে ঘটনাকে নিয়ে ‘দ্য ডিপ্লোম্যাট’ নামে ছবিও তৈরি হয়েছে বলিউডে৷ জে পি সিং-এর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন জন আব্রাহাম৷
advertisement
২০১৭ সালে পাকিস্তানে যান ভারতীয় তরুণী উজমা আহমেদ৷ উজমার মেয়ে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত ছিল৷ মেয়ের জন্য সাহায্যের আশ্বাস দিয়েই উজমাকে পাকিস্তানে যাওয়ার টোপ দেয় তাহের আলি নামে এক পাকিস্তানি যুবক৷ কিন্তু তাহেরকে ভরসা করে পাকিস্তানে যাওয়ার পরেই উজমাকে জোর করে বিয়ে করে নেয় ওই যুবক৷ আগে থেকেই বিবাহিত ছিল তাহের, তার সন্তানও ছিল৷ এর পরই উজমা নামে ওই তরুণী ইসলামাবাদে ভারতীয় দূতাবাসে এসে সাহায্য চান৷ নিজের বিপদের কথা খুলে বলেন সেই সময় ইসলামাবাদের ভারতীয় দূতাবাসের অন্যতম শীর্ষ আধিকারিক জে পি সিং-কে৷ এর পরই উজমাকে ইসলামাবাদের ভারতীয় দূতাবাসে আশ্রয় দেওয়া হয়৷ আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ভারতীয় দূতাবাস ভারতীয় ভূখণ্ড হিসেবেই গণ্য করা হয়৷ উজমাকে ভারতে ফেরানোর লড়াই শুরু করেন জে পি সিং৷ এ নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সংঘাতও শুরু হয় ভারতের৷ তবে কোনও চাপের কাছেই নতি স্বীকার করেননি জে পি সিং৷ শেষ পর্যন্ত উজমাকে ভারতে ফিরিয়ে আনতে সফল হন তিনি৷
এই ঘটনা নিয়েই বলিউডে তৈরি হয় ‘দ্য ডিপ্লোম্যাট’ নামে একটি ছবি৷ বড়পর্দায় জে পি সিং-এর ভূমিকায় অভিনয় করেন জন আব্রাহাম৷
ইজরায়েলে ভারতের দশম রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিযুক্ত করা হয় জে পি সিং-কে৷ অতীতে এই দায়িত্ব সামলেছেন জয়শঙ্কর মেননের মতো কূটনীতিক৷ পরবর্তী সময় যাঁকে মনমোহন সিং সরকারের আমলে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার দায়িত্ব দেওয়া হয়৷ এ বছরের শুরুতেই জে পি সিং ইজয়ারায়েলে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব নেন৷ তার আগে ভারতের বিদেশমন্ত্রীর চিফ অফ স্টাফ হিসেবে দায়িত্ব সামলান এই আইএফএস অফিসার৷
তবে জে পি সিং যেখানেই যান, তাঁর জন্য নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করে থাকে৷ যুদ্ধ পরিস্থিতি, সামরিক সংঘাতের মধ্যে থেকে কাজ করা তাঁর কাছে নতুন কিছু নয়৷ ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানের কাবুলে ভারতের ফার্স্ট সেক্রেটারি হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন জে পি সিং৷ এর দু বছর পর তাঁকে পাকিস্তানে ভারতের উপ রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিযুক্ত করা হয়৷ ২০১৪ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত ইসলামাবাদে ছিলেন সিং৷ মাঝে ইস্তানবুল কনসাল জেনারেল এবং বিদেশমন্ত্রকের দায়িত্ব সামলানোর পর এ বছরের শুরুতে জে পি সিং-কে ইজরায়েলে পাঠানো হয়৷
কাবুলে যে সময় জে পি সিং নিযুক্ত ছিলেন, তখন তালিবানদের হামলায় বার বার কেঁপে উঠেছে আফগানিস্তানের রাজধানী৷ এমন কি, ক্ষমতা দখলের পর যে সিনিয়র কূটনীতিকদের উদ্যোগে তালিবানদের সঙ্গে দিল্লির কথাবার্তা শুরু হয়, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন জে পি সিং৷ ভারতের প্রতিনিধি হিসেবে তিনিই প্রথম তালিবান শাসিত আফগানিস্তানের বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে দেখাও করেন৷
এবার ফের ইজরায়েলে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি জে পি সিং৷ তেল আভিভের সঙ্কটেও এখন জে পি সিং-এর হিমশীতল মস্তিষ্ক এবং পোড় খাওয়া অভিজ্ঞতাই ভারতের ভরসার কারণ৷ ঝুঁকি নিয়েই তেল আভিভে রাস্তায় নেমে আটকে থাকা ভারতীয় পড়ুয়া এবং নাগরিকদের উদ্ধারের দায়িত্ব এখন জে পি সিং-এর হাতে৷