হোয়াইট হাউজ ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কার্বি সংবাদমাধ্যমের কাছে বলেন, ইজরায়েলি বাহিনীর গাজা পুনর্দখল ইজরায়েলের জন্য একেবারেই ভাল নয়। এমনকী তা ইজরায়েলে বসবাসকারীদের জন্যও ঠিক নয়। এমনটাই বিশ্বাস করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিনি আরও বলেন, “সেক্রেটারি (অ্যান্টনি) ব্লিঙ্কেন ওই অঞ্চলে যে আলাপ-আলোচনা করেছেন, তার মধ্যে অন্যতম হল যুদ্ধের পরে গাজার অবস্থা কেমন থাকবে? আর ওই সময় গাজার শাসনব্যবস্থাই বা কেমন থাকবে। কারণ সে অবস্থা যা-ই হোক না কেন, তা তো আর গত ৬ অক্টোবর, ২০২৩ তারিখের আগের অবস্থা থাকবে না। আর হামাসের শাসনও এখানে থাকবে না।”
advertisement
আরও পড়ুন: এটা কী! দিঘার সমুদ্রে ‘দানব’, মাথায় হাত সকলের! ছোটাছুটি লেগে গেল পর্যটকদের মধ্যে
নেতানিয়াহু সোমবার সংবাদমাধ্যমের কাছে বলেছিলেন যে, গাজায় তাদেরই শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়া উচিত, যারা এই দেশের শাসন হামাসের পথে চালিত করবে না। সেই সঙ্গে ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী এ-ও বলেন যে, আমার মনে হয়, ইজরায়েল পারবে অনির্দিষ্ট কালের জন্য। সেখানকার সামগ্রিক নিরাপত্তার দায়-দায়িত্ব নিতে পারবে ইজরায়েল। কারণ আমরা ইতিমধ্যেই দেখেছি শাসন না থাকার ফলে সেখানে কী ঘটেছে। এর পরেই আমেরিকার তরফ থেকে এসেছে সাবধানবাণী।
আরও পড়ুন: উচ্চ প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগে প্রথম সারির চাকরিপ্রার্থীরাই কাউন্সিলিংয়ে অনুপস্থিত! নিলেন না চাকরি
গত মাসেই বাইডেন জানিয়েছিলেন যে, গাজা দখল করা ইজরায়েলের জন্য সবথেকে বড় ভুল হবে। এই যুদ্ধ ১ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলার ফলে আমেরিকা এবং ইজরায়েলের মধ্যে ব্যবধানও বেড়েই চলেছে। যাতে বন্দি এবং নাগরিকরা গাজা ছাড়তে পারেন এবং সেখানে প্যালেস্তাইনিদের জন্য সাহায্য প্রবেশ করতে পারে, তার জন্য গত সপ্তাহেই মানবিকতার খাতিরে বিরতির উপর জোর দিয়েছিলেন ব্লিঙ্কেন। এদিকে মঙ্গলবার ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ত বলেছেন যে, ওই যুদ্ধের অবসান ঘটলে ইজরায়েল গাজা উপত্যকায় যে কোনও পরিস্থিতিতে প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য সম্পূর্ণ স্বাধীনতা বজায় রাখবে।
মঙ্গলবার স্টেট ডিপার্টমেন্ট স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে, গাজা উপত্যকায় দীর্ঘমেয়াদি ইজরায়েলি দখলের ধারণাকে সমর্থন করে না। একটি সংবাদিক সম্মেলনে স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বলেন, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী, এই সিদ্ধান্তের পুরোভাগে রয়েছেন প্যালেস্তাইনিরা। আর গাজা হল প্যালেস্তাইনের জমি, যা প্যালেস্তাইনেরই থাকবে। তিনি আরও বলেন, সাধারণ ভাবে বলতে গেলে আমরা গাজার পুনর্দখলকে একেবারেই সমর্থন করি না। আর ইজরায়েলকেও নয়। আর এটা সেক্রেটারি ব্লিঙ্কেন তাঁর সফরকালে স্পষ্ট করে দিয়েছেন।
১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধে ইজরায়েল দখল করেছিল গাজা উপত্যকা। ২০০৫ সালে ইজরায়েল তা প্রত্যাহার করে নেয়। তবে পরে ওই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ হামাসের হাতে চলে আসার পরে সেখানে অবরোধ জারি করে তারা। প্যাটেলের বক্তব্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মত দিয়ে জানিয়েছে, গত ৬ অক্টোবরের আগের অবস্থায় ফেরা মুশকিল। প্রসঙ্গত এর পরের দিনই হামাস বিশাল এক হামলা চালিয়েছিল। প্যাটেলের কথায়, ইজরায়েল এবং ওই অঞ্চলটি অবশ্যই নিরাপদ হতে হবে। গাজাকে ইজরায়েলের জনসাধারণ কিংবা অন্য কারও বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী হামলা চালানোর জন্য একটি ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।
সংবাদমাধ্যমের মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং এর পশ্চিমী জোট কয়েক সপ্তাহ ধরে তাদের ইজরায়েলি প্রতিপক্ষকে বলে আসছে যে, হামাসকে হেয় করার ক্ষেত্রে ইজরায়েলের স্পষ্ট উদ্দেশ্য থাকা উচিত। সেই সঙ্গে গাজা উপত্যকার দীর্ঘমেয়াদি দখলও এড়ানোর চেষ্টা করা উচিত। হোয়াইট হাউসের শীর্ষস্তরের আধিকারিকরা বলেন, তাঁদের প্রশাসন এবং ইজরায়েলি সরকারের মধ্যে স্পষ্ট ব্যবধান থাকা সত্ত্বেও বাইডেন সোমবার নেতানিয়াহুর সঙ্গে একটি কল চলাকালীন ইজরায়েলের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছিলেন।
তিনি আরও বলেন যে, প্রেসিডেন্ট ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কাছে যে বিষয়গুলো স্পষ্ট করেছেন, তার মধ্যে অন্যতম হল যে, আমরা ইজরায়েলের পাশে দাঁড়াচ্ছি। আর আমরা এটাও নিশ্চিত করতে চলেছি যে, তাদের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা, সরঞ্জাম, অস্ত্র সহায়তা যেন থাকে। যাতে তারা হামাসকে পিছনে ফেলে দিতে পারে। গত ৭ অক্টোবর থেকে তা পরিবর্তিত হয়নি এবং ভবিষ্যতেও এর কোনও পরিবর্তন হবে না।