বার বার তাঁকে খুনের চেষ্টা করেছে দুনিয়ার বৃহত্তম শক্তি আমেরিকা। খরচ করেছে এক বিলিয়নেরও বেশি মার্কিন ডলার। পারেনি। শেষ পর্যন্ত নব্বই বছর বয়সে রোগের কাছে হার মানলেন ফিদেল কাস্ত্রো।
জন্মেছিলেন ১৯২৬-র ১৩ই আগস্ট। হাবানা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়ার সময়েই রাজনীতিতে হাতেখড়ি । সেটা গত শতাব্দীর চল্লিশের দশকের মাঝামাঝি। সেই সময়ে তিনি জড়িয়ে পড়েন গেরিলা রাজনীতির সঙ্গে। ১৯৫৩ সালে মনকাদা অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত করতে চান কিউবার সামরিক শাসক বাতিস্তাকে। পারেননি । ধরা পড়ে জেল হয়।
advertisement
জেল থেকে ছাড়া পেয়ে গা ঢাকা দিয়ে ফিদেল চলে যান মেক্সিকোয়। সেখানেই পরিচয় চে গুয়েভারার সঙ্গে। চলল প্রস্তুতি। ১৯৫৬ সালের নভেম্বরে দুঃসাহসিক অভিযান। লক্ষ -কিউবা। বারোজনের নৌকায় চড়ে বসেন ফিদেল , তাঁর ভাই রাউল , চে-সহ বিরাশিজন। সমুদ্র টপকে পৌঁছে যান কিউবার সিয়েরা মায়েস্ত্রায়। সেখানকার পাহাড়ে ঘাঁটি গেড়েই শুরু হয় গেরিলা লড়াই। লক্ষ আমেরিকার মদতে চলা বাতিস্তা সরকারকে সরানো।
১৯৫৯ সালের ১লা জানুয়ারি। রাজধানী হাভানার দখল নেয় ফিদেলের বাহিনী । পালালেন সেনাশাসক বাতিস্তা । শুরু হল নতুন এক অধ্যায়। ১৯৫৯ থেকে ছিয়াত্তর , প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। ১৯৭৩ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে সমাজতান্ত্রিক কিউবার কর্ণধার হয়ে ওঠেন ফিদেল কাস্ত্রো।
আমেরিকার নাকের ডগায়, মাত্র নব্বই মাইল দূরে দশকের পর দশক ধরে চলে আমেরিকার অর্থনৈতিক অবরোধ। তার মধ্যেই চলে কিউবার বেঁচে থাকার লড়াই। বার বার ফিদেলকে খুনের চেষ্টা করে আমেরিকা। চেষ্টা করে গতিচ্যুত করার। পারেনি । উল্টে দুনিয়া জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে তাঁর নেতৃত্বের দ্যুতি।
দারিদ্র সত্ত্বেও শিক্ষা ও স্বাস্থ্যক্ষেত্রে কিউবার নজরকাড়া সাফল্য। দুনিয়াজুড়ে ঠাণ্ডা যুদ্ধের পর্বে সোভিয়েত ইউনিয়ন বা মার্কিন কোনও জোটেই না গিয়ে ফিদেল ছিলেন জোট নিরপেক্ষ নীতির পক্ষে। সঙ্গী ভারত। ১৯৬০-য়েই কিউবাকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দেয় ভারত। আর বরাবর রাষ্ট্র সংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের স্থায়ী সদস্যপদের দাবিতে সরব থাকে ফিদেলের কিউবা।