ভারত-সহ সারা বিশ্বের সঙ্গে শুল্কযুদ্ধে জড়িয়ে থাকা ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই লড়াই থেকে কোনও বিশ্বাসযোগ্যতা মিলছে না। উল্টে দেশে তার নীতির বিরুদ্ধেই উঠছে গুরুতর প্রশ্ন। আমেরিকা থেকে পাওয়া সমস্ত তথ্য সরাসরি ট্রাম্পকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছে। এরই মধ্যে আমেরিকার আদালতও একের পর এক তার সিদ্ধান্ত বাতিল করছে। সেইসঙ্গে নতুন এক রিপোর্ট তার দুশ্চিন্তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। মার্কিন শ্রমবাজার একেবারেই দুর্বল হয়ে পড়েছে। মার্কিন শ্রম দপ্তরের সর্বশেষ রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, আগস্ট মাসে মাত্র ৮০,০০০ নতুন চাকরি তৈরি হয়েছে, যা আগের মাসের ৭৩,০০০ থেকে সামান্য বেশি।
advertisement
সংখ্যাতত্ত্বে ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫: দেখে নিন কেমন যাবে আজকের দিন? জানাচ্ছেন জ্যোতিষী চিরাগ দারুওয়ালা
ডেটা সংস্থা ফ্যাক্টসেট-এর এক সমীক্ষা বলছে, বেকারত্বের হার স্থির রয়েছে ৪.২ শতাংশে। এই পরিসংখ্যান ইঙ্গিত দিচ্ছে যে মার্কিন শ্রমবাজার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে, আর নিয়োগকর্তারা বড় আকারে চাকরি দেওয়া বা ছাঁটাই—কোনোটাই করছেন না।
২০২৫ সালে মার্কিন অর্থনীতিতে চাকরি বৃদ্ধির হার একেবারেই ধীর। এ বছর এখন পর্যন্ত মাসিক গড়ে ৮৫,০০০ নতুন চাকরি যুক্ত হয়েছে, যা ২০২৪ সালের ১,৬৮,০০০ এবং কোভিড-পরবর্তী ২০২১-২৩ সালের ৪ লক্ষের তুলনায় অনেক কম। এর কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে ২০২২ ও ২০২৩ সালে ফেডারেল রিজার্ভের ১১ বার সুদের হার বৃদ্ধি এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধের নীতি। এসব কারণে ম্যানেজাররা নতুন নিয়োগে দ্বিধায় ভুগছেন।
নেভি ফেডারেল ক্রেডিট ইউনিয়নের প্রধান অর্থনীতিবিদ হিদার লং বলেছেন, শ্রমবাজারে ফাটলের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। আপৎকালীন অবস্থা এখনও হয়নি, তবে কোম্পানিগুলি ছাঁটাই শুরু করছে, এমন সংকেত বাড়ছে। মার্কিন শ্রম দপ্তর জানিয়েছে, গত সপ্তাহে বেকারভাতা চেয়ে আবেদনকারীর সংখ্যা জুনের পর সর্বাধিক, যদিও তা এখনও তুলনামূলকভাবে সুস্থ মাত্রায় রয়েছে।
এছাড়া চাকরিচ্যুতি সংক্রান্ত সংস্থা চ্যালেঞ্জার গ্রে অ্যান্ড ক্রিসমাস জানিয়েছে, আগস্ট পর্যন্ত ২০২৫ সালে মার্কিন নিয়োগকর্তারা ৮,৯২,০০০-এরও বেশি চাকরি কাটছাঁট করেছেন, যা ২০২৪ সালের মোট ৭,৬১,০০০-এর তুলনায় বেশি। নতুন চাকরির প্রায় ৮০ শতাংশই স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক সেবা খাতে, যেমন হাসপাতাল থেকে ডে-কেয়ার সেন্টার পর্যন্ত। যা ইঙ্গিত করছে, চাকরি বৃদ্ধির সুযোগ সীমিত ও অস্থির।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের রোষ
জুলাই মাসের দুর্বল চাকরির রিপোর্ট প্রকাশের পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চাকরি দপ্তরের প্রধান এরিকা ম্যাকএনটায়ারকে বরখাস্ত করেন এবং তার জায়গায় ইজে আঁতোয়ানকে বসান, যদিও তাকে এখনও সিনেট অনুমোদন দেয়নি। ট্রাম্প দাবি করেন, জুলাইয়ের রিপোর্ট রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। তবে বিশেষজ্ঞরা তথ্যের নির্ভরযোগ্যতাকে সমর্থন করেছেন। বর্তমানে দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কমিশনার হিসেবে দায়িত্বে আছেন উইলিয়াম উইয়াত্রোভস্কি, যিনি একজন অভিজ্ঞ কর্মচারী।
জুলাই রিপোর্টে মে ও জুনের চাকরি বৃদ্ধির সংখ্যায় বড় সংশোধন হয়—২,৫৮,০০০ চাকরি বাদ দেওয়া হয়, ফলে মাসিক গড় নিয়োগ নেমে দাঁড়ায় মাত্র ৩৫,০০০-এ। এ ধরনের সংশোধন স্বাভাবিক, কারণ অনেক সংস্থা দেরিতে তথ্য জমা দেয় বা পুরোনো তথ্য ঠিক করে। তবে বড় সমস্যা হলো, কোম্পানিগুলির সাড়া দেওয়ার হার কমে যাওয়া। এক দশক আগে ৬০ শতাংশ কোম্পানি জরিপে সাড়া দিত, এখন তা মাত্র ৪০ শতাংশে নেমে এসেছে।