৪.৫ ট্রিলিয়ন ডলারের কর ছাড়ের এই প্যাকেজটি আদতে ট্রাম্পের ক্ষমতায় আসার মূল প্রচারের অন্যতম প্রতিশ্রুতি ছিল। অনেকের মনে থাকতে পারে ২০১৭ সালে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের সময়ে ট্যাক্স কাটের কথা ছিল, যা ২০২৫ সালের শেষ দিকে এসে শেষ হওয়ার কথা। তবে নতুন ‘বিগ, বিউটিফুল বিল’ অবশ্য বেশ কিছু নতুন কর সুবিধাও প্রবর্তন করেছে আমেরিকায়৷ বিলে দেওয়া হচ্ছে কর্মীদের টিপস এবং ওভারটাইম বেতন বাদ দেওয়ার অনুমতি এবং অনেক বয়স্কদের জন্য $৬,০০০ ছাড় প্রদান করা।
advertisement
তবে, একাধিক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিকে কম গুরুত্ব দিয়ে এই ট্যাক্স কাট পুষিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন ডেমোক্র্যাটদের একাংশ। বিলটিতে মেডিকেড এবং খাদ্য সহায়তা কর্মসূচিতে (SNAP) প্রায় ১.২ ট্রিলিয়ন ডলারের কাট অন্তর্ভুক্ত রয়েছে৷ নির্দলীয় কংগ্রেসনাল বাজেট অফিস (CBO) অনুমান করে যে, এই ট্যাক্স কাটের ফলে ২০৩৪ সালের মধ্যে আরও ১.১৮ কোটি আমেরিকান নাগরিক তাঁদের স্বাস্থ্য বিমা হারাতে পারেন।
বিলের একটি বড় অংশ, প্রায় ৩৫০ বিলিয়ন ডলার, ট্রাম্পের সীমান্ত ও জাতীয় নিরাপত্তা এজেন্ডার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। এই তহবিলের মধ্যে রয়েছে মার্কিন-মেক্সিকো সীমান্ত প্রাচীর নির্মাণের জন্য প্রায় ৪৬ বিলিয়ন ডলার এবং অভিবাসী আটক কেন্দ্রে ১০০,০০০ শয্যার জন্য ৪৫ বিলিয়ন ডলার। ২০২৯ সালের মধ্যে অতিরিক্ত ১০,০০০ ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) এজেন্ট নিয়োগের জন্য আরও বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে, যা ট্রাম্পের মার্কিন ইতিহাসের বৃহত্তম গণ-নির্বাসন প্রচেষ্টা পরিচালনার লক্ষ্যের সঙ্গে স্পষ্টতই সামঞ্জস্যপূর্ণ। আইনটি সামরিক ব্যয়ের জন্য উল্লেখযোগ্য তহবিলও প্রদান করছে, যার মধ্যে গোল্ডেন ডোম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য ২৫ বিলিয়ন ডলার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
মার্কিন কংগ্রেসের মধ্য দিয়ে বিলটির পাস হওয়ার যাত্রাপথ অবশ্য বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। মঙ্গলবার, ১ জুলাই, ২০২৫ তারিখে সোনেট ৫১-৫০ ভোটে এই বিলটি পাস করে, যার ফলে ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সকে টাই-ব্রেকিং ভোট দিতে হয়। এরপর বৃহস্পতিবার প্রতিনিধি পরিষদে তীব্র রোল কল ভোট অনুষ্ঠিত হয়, যা ২১৮-২১৪ ভোটে পাস হয়, যেখানে দুই রিপাবলিকান ডেমোক্র্যাটদের বিরোধী দলে যোগ দেন। ডেমোক্র্যাটরা বিলটির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হন এবং এটিকে শ্রমিক শ্রেণীর পিঠে ছুরিকাঘাত, সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণদের উপর করের বোঝা চাপানো এবং ধনীদের জন্য কর ছাড় বলে সমালোচনা করেন, যার প্রতিবাদে হাউস মাইনরিটি লিডার হাকিম জেফ্রিস প্রায় নয় ঘণ্টা বক্তৃতা দেন।
জাতীয় ঋণের উপর বিলের প্রভাব নিয়ে রিপাবলিকানদের উদ্বেগের কারণও রয়েছে, সিবিও আগামী দশকে ঘাটতিতে $৩.৩ ট্রিলিয়ন যোগ করবে এবং সামাজিক কর্মসূচিতে গভীর কাটছাঁট করবে। যাই হোক, পার্টি শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতিকে তাঁর যুগান্তকারী আইন পাসের জন্য একত্রিত হয়েছে। বিলটি এখন রাষ্ট্রপতি ট্রাম্পের স্বাক্ষরের জন্য তাঁর ডেস্কে গিয়েছে, ঠিক ৪ জুলাই স্বাধীনতা দিবসের ছুটির দিনে।
আর এই প্রসঙ্গেই আবার উঠে আসবে এলন মাস্কের কথা। ১ জুলাই, ২০২৫ তারিখে সেনেটে বিলটি পাস হওয়ার পর পরই, মাস্ক তাঁর X সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে লিখেছিলেন যে যদি এই পাগলাটে ব্যয় বিলটি পাস হয়, তাহলে পরের দিনই আমেরিকা পার্টি গঠিত হবে। ধনকুবেরের অভিমত এই যে দেশের ডেমোক্র্যাট-রিপাবলিকান ঐক্যবদ্ধ দলের একটি বিকল্প প্রয়োজন যাতে জনগণ সত্যি সত্যি নিজেদের একটি কণ্ঠস্বর পায়। সবার নজর এখন সে দিকেই, দেখা যাক এলন মাস্ক একটি নতুন রাজনৈতিক দল তৈরির তাঁর প্রতিশ্রুতি পালন করবেন কি না!