দু'বছর করোনার শঙ্কা কাটিয়ে এ বারের উৎসব একটু বেশি আবেগের এবং উন্মাদনার। স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে শুরু করেছে দিনযাপন। এ বার সেই উৎসবে যেন অনেকটা শ্বাস নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে উৎসব প্রিয় বাঙালি। নীলকণ্ঠ পাখি উড়িয়ে বিসর্জনের রীতি ছিল শতাব্দী প্রাচীন বৌবাজারের দত্তবাড়ির পুজোয়।
আরও পড়ুনঃ সাবধান! আর কিছুক্ষণের মধ্যেই বৃষ্টিতে ভাসবে ৩ জেলা, হলুদ সতর্কতা জারি
advertisement
কালের নিয়মে পুজোর পরিধি ছোট হয়ে এলেও বৌবাজারের দত্তবাড়ির পরিচিতি আজও যথেষ্ট। পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা শ্রী সরোজেন্দ্রনাথ দত্ত ছিলেন মেডিক্যাল কলেজের তৎকালীন চিকিৎসক, যিনি ম্যালেরিয়ার প্রতিষেধক আবিষ্কার করে স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন।
আদি বাড়ি মালদহে। সেখান থেকে তাঁর বংশধর দত্তরা পরবর্তীতে বৌবাজারে বসবাস শুরু করেন। আনুমানিক ১৯৫০ সালে দুর্গোৎসবের সূচনা হয়েছিল এই দত্তবাড়িতে। পুজোমণ্ডপের সামনে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রচলন এঁরাই প্রথম করেন। অতীতের সেই ঐতিহ্য আজ আর নেই। একে একে পরিবারের সকলেই কর্মসূত্রে কলকাতা ছেড়েছেন। পুজোয় পরিবারের কেউ আর আজ আসেন না৷ আজ আড়ম্বরহীন ভাবেই পূজিত হন দেবী দুর্গা।
আরও পড়ুনঃ সপ্তমীর সন্ধ্যায় হঠাৎ আবহাওয়া বদল! ওলোট-পালট অষ্ঠমী-নবমী-দশমী! জানুন জরুরি আপডেট
ফাস্ট ফরওয়ার্ড ৭০ বছর।
সেই পরিবারের বংশধর ঋত্বিক দত্ত কর্মসূত্রে কানাডার বাসিন্দা। অতিমারী এ জীবন যখন স্ট্যান্ডস্টিল, ওয়ার্ক ফ্রম হোম করতে করতে হঠাৎ করেই সিদ্ধান্ত নেন পারিবারিক সেই দুর্গাপুজোর ঐতিহ্য কানাডায় বহন করে আনলে কেমন হয়! যেমন ভাবা তেমন কাজ, কলকাতা থেকে তড়িঘড়ি ফাইবার গ্লাস প্রতিমা আনিয়ে দত্ত বাড়ির পুজো শুরু হয় ২ বছর আগে।নিয়ম বিধি মেনে ১০ জনের স্লট করে টরন্টোর বন্ধুদের নিয়ে বাড়িতে দুর্গাপুজো প্রথম শুরু হয়েছিল ২০২০ সালে।
আরও পড়ুনঃ পুজোয় আজ থেকে সারারাত চলবে মেট্রো, জেনে নিন সময়সূচি
এ বছর সেই পুজো তৃতীয় বছরে পা দিল। ঢাক, কাঁসর ঘণ্টার শব্দ বুঝিয়ে দিয়েছিল দুর্গাপুজো আদতেই বিশ্বজনীন। ষষ্ঠী থেকে দশমী, পুজোয় বাদ যায়নি কোনও আচার-অনুষ্ঠান। করোনার চোখরাঙানিতেও গত দু’বছরের শারদোৎসব ফিকে হয়নি একটুও। রীতি মেনে নবপত্রিকা, সন্ধিপুজো, সন্ধ্যাআরতি, দর্পণ বিসর্জন, সিঁদুর খেলা সবই হয়েছিল। আজ দত্ত পরিবারের পুজো বন্ধুদের মিলে সর্বজনীন পুজোর রূপ নিয়েছে। ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে পুজো। ফলে কানাডার মাটিতে এখন শুধুই পুজো পুজো গন্ধ। পাট ভাঙা শাড়ি-পাঞ্জাবি নেমেছে দেরাজ থেকে। সবাই মিলে সেজেগুজে চলছে দেদার আড্ডা।
এ বছর পুজোর থিম চণ্ডীমণ্ডপ থেকে ম্যাডক্স স্কোয়ার। সেজে উঠেছে পুজোমণ্ডপ। খড়ের চালা দেওয়া চণ্ডীমণ্ডপ সঙ্গে কাশ ফুলের বিদেশের বুকে। উৎসবের দিনগুলিতে কার্যত মিলনক্ষেত্রে পরিণত হয় দত্ত বাড়ির পুজো প্রাঙ্গন। প্রাণের উৎসব মিলিয়ে দিয়েছে সবাইকে। কলকাতার ম্যাডক্স স্কোয়ারের পুজো যেন কানাডায় হাজির। দেদার আড্ডা, সন্ধ্যের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সঙ্গে চপ, সিঙাড়া, ঘুঘনি, নারকেলের নাড়ু, ফুচকার অমোঘ হাতছানি। দত্ত বাড়ির পুজো মানেই যেন কানাডার বুকে এক টুকরো কলকাতা। অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় পরও প্রবাসের মাটিতে একইরকম বনেদিয়ানার আবেদন ধরে রেখেছেন মালদহের দত্তরা।