তার দিকে তদন্তের নজর ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য এখন শিরোনামে একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ডাক্তারও। রবি জয়রাম নামে ওই ডাক্তারের জন্ম ইংল্যান্ডেই। তিনিও কর্মরত ছিলেন কাউন্টেস অব চেস্টার হাসপাতালে। এক রাতে ডিউটির সময় ইনকিউবেটরের পাশে চুপচাপ লুসিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ডাক্তারের প্রথম সন্দেহ হয়। তার পরই তিনি নজরে রাখতে শুরু করেন নার্স লুসিকে। পরবর্তীতে তদন্তে প্রকাশ পায় অসুস্থ নবজাতক বা সময়ের আগেই জন্ম নেওয়া শিশুদের নৃশংসভাবে খুন করত সে। অতিরিক্ত দুধ পান করিয়ে, হাওয়া ভরা সিরিঞ্জে ইঞ্জেকশন দিয়ে বা ইনসুলিন প্রয়োগ করে সে নিয়ে নিত শিশুদের প্রাণ। ২২ দিন ধরে টানা শুনানি চলার পর উত্তর ইংল্যান্ডের ম্যাঞ্চেস্টার ক্রাউন কোর্ট তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে।
advertisement
২০১৫-র জুন থেকে ২০১৬-র জুন মাস পর্যন্ত উত্তরপশ্চিম ইংল্যান্ডের কাউন্টেস অব চেস্টার হসপিটালে পর পর শিশুমৃত্যু হয় নিওনেটাল ইউনিটে। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, প্রতিবারই এমনভাবে খুন করত এই ঘাতক নার্স, যে অপরাধের প্রমাণ থাকত না। অসুস্থ বা নির্ধারিত সময়ের আগেই ভূমিষ্ঠ হয়ে যাওয়া শিশুদেরই সে নিশানা করত। যাতে মৃত্যুর কারণ হিসেবে অসুস্থতাই দায়ী হয়। ময়নাতদন্তের প্রশ্নও উঠত না স্বভাবতই।
এরকমও হয়েছে শিশুর পাশ থেকে বাবা মা সরে যাওয়া মাত্র হত্যালীলা চালিয়েছে ওই নার্স। বার বার তার শিফ্টেই শিশুমৃত্যু হওয়ায় সহকর্মীদের সন্দেহ হয়। কিন্তু তাদের নজর ঘুরিয়ে দিত অপরাধী। তার শেষ শিকার ছিল নবজাতক ট্রিপলেটের মধ্যে দু’টি শিশু। তৃতীয় নবজাতককেও খুন করার চেষ্টা করে সে। কিন্তু ব্যর্থ হয়। ২০১৬-র জুনে ছুটি কাটিয়ে হাসপাতালে লুসি যোগ দেওয়া মাত্র এই ঘটনা ঘটে। এর পরই টনক নড়ে কর্তৃপক্ষের। লুসিকে নার্সের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় কেরানির কাজে।
নবজাতক মৃত্যুর তদন্ত শুরু হওয়ার পর তাকে দু’বার ধরা হয়। কিন্তু প্রমাণাভাবে বেকসুর খালাস পেয়ে যায় লুসি। অবশেষে ২০২০ সালে তার বাড়ি থেকে একটি হ্যান্ডনোট উদ্ধার করে পুলিশ। সেখানে লেখা ছিল ‘আমি শয়তান। আমিই এটা করেছি।’ এটার সঙ্গে আরও সাক্ষ্যপ্রমাণ যোগাড় করে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ডাক্তার জয়রাম জানিয়েছেন তিনি যখন প্রথম লুসির দিকে আঙুল তুলেছিলেন তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিশ্বাসই করতে চাননি। কিন্তু পরবর্তীতে তদন্তের ফাঁদ এড়াতে পারেনি এই ঘাতক সেবিকা।
লুসির অপরাধ মনে করাচ্ছে ডাক্তার হ্যারল্ড শিপম্যান ও নার্স বেভারলি অ্যালিটের কথা। অতীতে পর পর রোগীহত্যা করে দোষী সাব্যস্ত হয় দু’জনেই। ২০০৪ সালে কারাগারে আত্মঘাতী হয় হ্যারল্ড। অ্যালিট দণ্ডিত যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে।