বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের দাবি, ইসলাম ধর্ম নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করার অভিযোগে দীপুকে লক্ষ্য করা হলেও সেই অভিযোগের পক্ষে কোনও প্রমাণ মেলেনি। তবুও তাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, হত্যার পর দীপুর দেহ নগ্ন করে একটি গাছে বেঁধে আগুন লাগানো হয়। অভিযোগ উঠেছে, পুলিশের কয়েকজন কর্মী এবং কারখানার ফ্লোর ম্যানেজারের উপস্থিতিতেই দীপুকে জনতার হাতে তুলে দেওয়া হয়।
advertisement
ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ফের ছড়িয়ে পড়ে, যখন সেটি শেয়ার করেন লেখিকা তসলিমা নাসরিন। ইসলামপন্থী গোষ্ঠীর হুমকির জেরে যাঁকে বাংলাদেশ ছাড়তে হয়েছিল। নাসরিনের দাবি, ধর্মীয় কারণে নয়, পুরনো শত্রুতার জেরেই দীপুকে নিশানা করা হয়ে থাকতে পারে।
এক্স-এ (প্রাক্তন টুইটার) ভিডিওটি শেয়ার করে নাসরিন লেখেন, “হিন্দু-বিদ্বেষী মুসলিমরা দীপুকে সরাসরি কারখানা থেকে তুলে নিয়ে যায়। দীপু কোনও অপরাধ করেনি। জিহাদি শ্রমিকদের ছড়ানো গুজবের কারণে ফ্লোর ম্যানেজার তাকে পদত্যাগে বাধ্য করে। বাইরে যে হিংস্র জনতা অপেক্ষা করছে তা জেনেও পুলিশকে না জানিয়ে দরজা খুলে দেওয়া হয়। তার পরই ওরা তাকে ছিঁড়ে খায়।”
নাসরিন তাঁর মন্তব্যে আরও উল্লেখ করেন ২০২৪ সালের এপ্রিলের একটি ঘটনা। খুলনা জেলায় ইসলাম অবমাননার অভিযোগে হিন্দু যুবক উৎসব মণ্ডলকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল। পরে থানার বাইরে জনতা জড়ো হয়ে তাকে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি তোলে। নাসরিনের দাবি, শেষ পর্যন্ত পুলিশই উৎসবকে জনতার হাতে তুলে দেয় এবং পুলিশের সামনেই তার চোখ উপড়ে নেওয়া হয়।
নাসরিন লেখেন, “দেশে দিন দিন জিহাদিদের প্রভাব বাড়ছে। হিন্দুদের প্রতি ঘৃণা বাড়ছে। কৌশল, প্ররোচনা আর পরিকল্পনার মাধ্যমে তারা হিন্দুদের হত্যা করতে চায়। তাদের বিশ্বাস, হিন্দু হত্যা করলেই নাকি স্বর্গের দরজা খুলে যাবে।”
সিসিটিভি ফুটেজের টাইমস্ট্যাম্প অনুযায়ী, ঘটনাটি ঘটে ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ। এই ঘটনায় বাংলাদেশ সরকারের র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বা Rapid Action Battalion এখনও পর্যন্ত ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে। সংস্থাটির দাবি, দীপু চন্দ্র দাস ইসলাম ধর্ম নিয়ে কোনও আপত্তিকর মন্তব্য করেছিলেন—এমন কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, ১৮ ডিসেম্বর রাতে ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার দুবলীপাড়া এলাকার পায়োনিয়ার নিট কম্পোজিট কারখানার কর্মী দীপু চন্দ্র দাসকে জনতা পিটিয়ে হত্যা করে। পরে তার দেহ ঢাকা–ময়মনসিংহ জাতীয় সড়কে নিয়ে গিয়ে নগ্ন অবস্থায় আগুন লাগানো হয়। তদন্ত চলছে, তবে ঘটনাটি বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলে দিল।
