প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছিল, ফেসবুক- ইউটিউবের মতো সমাজমাধ্যমগুলির উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করার বিরুদ্ধেই পথে নেমেছে নেপালের তরুণ প্রজন্ম বা Gen Z৷ কিন্তু নেপালের সাধারণ মানুষের সরকার এবং প্রশাসনের উপরে রাগের কারণ আরও গভীরে নিহিত৷ যার সূত্রপাত হয়েছিল ১১ বছর বয়সি এক বালিকার পথ দুর্ঘটনায় আহত হওয়াকে কেন্দ্র করে৷
গত অগাস্ট মাসে এই দুর্ঘটনা ঘটেছিল নেপালের ললিতপুর জেলার হরিসিদ্ধিতে৷ সেখানে রাস্তা পারাপারের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা ১১ বছর বয়সি এক বালিকাকে ধাক্কা মারে নেপালের একজন প্রাদেশিক মন্ত্রীর গাড়ি৷ ওই বালিকাকে ধাক্কা মারার পরই গাড়িটি পালানোর চেষ্টা করে৷ যদিও জনতার হাতে ধরা পড়ে যান চালক৷
advertisement
শেষ পর্যন্ত অবশ্য প্রাণে বেঁচে যায় ওই বালিকা৷ কিন্তু অভিযুক্ত গাড়ির চালক এক দিনের মধ্যেই জেল থেকে ছাড়া পেয়ে যাওয়ায় ক্ষোভের আগুন ছড়ায়৷ তার উপর প্রধানমন্ত্রী ওলি এই ঘটনাকে ছোট দুর্ঘটনা বলায় আগুনে ঘি পড়ে৷
এর পরই দুর্ঘটনা আহত ওই বালিকার জন্য বিচার চেয়ে সমাজমাধ্যমে জোরদার প্রচার শুরু হয়৷ বেকারত্ব, দুর্নীতির মতো কারণে হতাশাগ্রস্ত নেপালের তরুণ প্রজন্মের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে এই ঘটনার মধ্যে দিয়ে৷ বালিকার দুর্ঘটনায় অভিযুক্তের শাস্তি সমাজমাধ্যমে গড়ে ওঠে জনমত৷ রাস্তায় রাস্তায় শুরু হয় মিছিল এবং প্রতিবাদ৷
সাধারণ মানুষের এই ক্ষোভ প্রশমনের চেষ্টা না করে উল্টে গত ৪ সেপ্টেম্বর সমাজমাধ্যমের উপরেই নিষেধাজ্ঞা জারি করে নেপালের ওলি সরকার৷ নিষিদ্ধ হয় ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ৷ জনরোষকে চাপা দেওয়ার এই মরিয়া প্রচেষ্টাই শেষ পর্যন্ত ওলি সরকারের জন্য ব্যুমেরাং হয়ে দাঁড়ায়৷ একজন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকের কথায়, সমাজমাধ্যমকে নিষিদ্ধ করার এই সিদ্ধান্ত যে তাঁর সরকারের পতন ডেকে আনবে, তা ভাবতেও পারেননি নেপালের সদ্য প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ওলি৷
ওলি সরকার সমাজমাধ্যমের উপরে নিষেধাজ্ঞা চাপালেও গোপনে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখছিল নেপালের Gen Z৷ পরিকল্পনা মতোই ৮ এবং ৯ সেপ্টেম্বর রাজধানী কাঠমান্ডু সহ নেপালের রাস্তার দখল নেয় তাঁরা৷ সংসদ ভবন, প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতির বাসভবনে চলে হামলা, হয় অগ্নিসংযোগ৷ নেপালের বর্তমান মন্ত্রীদের রাস্তায় তাড়া করে মারধর করে ক্ষিপ্ত জনতা৷ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী স্ত্রীকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করা হয়৷ শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেপালের সেনাবাহিনী দেশ পরিচালনার ভার সাময়িক ভাবে হাতে নিয়েছে৷ বিক্ষোভকারীদের দেওয়া হয়েছে কড়া বার্তা৷