TRENDING:

Fathers day 2020|বাবাকে ভয় পেতেন ফ্রানৎস কাফকা ! চিঠির মাধ্যমে বাবার মন ছুঁতে চেয়েছিলেন তিনি !

Last Updated:

কাফকা তাঁর বাবাকে বেশ কিছু চিঠি লিখেছিলেন। সেই চিঠি পরে বই আকারে প্রকাশিত হয়। 'লেটার টু হিস ফাদার'।

impactshort
ইমপ্যাক্ট শর্টসলেটেস্ট খবরের জন্য
advertisement
#কলকাতা: ফ্রানৎস কাফকা। নামটা শুনলেই মনে ভেসে ওঠে কেন্দ্রচ্যুত এক পৃথিবী, যেখানে মানুষ পরিবার থেকে, পরিবেশ থেকে, এমনকি নিজের থেকেও বিচ্ছিন্ন। কাফকার বেড়ে ওঠার মধ্যে এক যন্ত্রণা ছিল। যা ধরা পড়েছে তাঁর লেখায়। তাঁকে ছাড়া আধুনিক সাহিত্যর আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া মুশকিল। ১৯১৫ সালে প্রকাশিত তাঁর 'মেটামরফোসিস' কথাসাহিত্য সর্বকালের সেরা হয়ে রয়ে গিয়েছে। ৩৪ বছর বয়সে যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হন কাফকা৷ বলা যায়, তাঁর প্রায় সারাটি জীবনই কেটেছে অসুস্থতাজনিত বিষণ্ণতা এবং সামাজিক উদ্বেগের মধ্য দিয়ে৷ মারা যান ৪১ বছর বয়সে৷ মৃত্যুর পর তাঁর বেশির ভাগ লেখা প্রকাশিত হয়। কাফকার বাবার প্রতি ছিল সংঘাতিক ভয়। ছোটবেলায় তাঁর বাবার কতৃত্ব ছিল তাঁর ওপর অনেকটাই বেশি। কাফকা তাঁর বাবাকে বেশ কিছু চিঠি লিখেছিলেন। সেই চিঠি পরে বই আকারে প্রকাশিত হয়। 'লেটার টু হিস ফাদার'। চিঠি লিখে বাবার মনের কাছে পৌঁছতে চেয়েছিলেন কাফকা।
advertisement

কাফকা বাবাকে লিখছেন, " প্রিয় বাবা, আপনি আমাকে জিজ্ঞাসা করেছেন যে আমি আপনার প্রতি আমার ভয়টাকে কেন এখনও নিজের মনে বাঁচিয়ে রেখেছি? যথারীতি, আমি আপনার এই প্রশ্নের কোনও উত্তর খুঁজে পায়নি। কিন্তু এখন ভাবলে হয়তো বুঝি আপনাকে ভয় পাওয়ার হয়তো বেশ কিছু কারণ ছিল আমার। আংশিকভাবে যে কারণে আমি আপনাকে ভয় পেয়েছি, তা যদি আমি এখন লিখে জানাই তাও যে খুব সঠিক হবে, তা নয়। আমি হয়তো লেখার সময়ও গুছিয়ে উঠতে পারবো না। আমার স্মৃতিতে বেশ কিছু ভয় আছে। তার সঙ্গে মিলে মিশে যাচ্ছেন আপনি।

advertisement

আপনার কাছে যে বিষয়টি সহজ ছিল, আমার কাছে ততটাই কঠিন ছিল। আপনি আপনার সারা জীবন কঠোর পরিশ্রম করেছেন, আপনার বাচ্চাদের জন্য সমস্ত কিছু উৎসর্গ করেছেন, সর্বোপরি আমার জন্য, ফলস্বরূপ আমি উচ্চ এবং সুদর্শন জীবনযাপন করেছি, যা খুশি তাই শিখতে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা পেয়েছি এবং বৈষয়িক উদ্বেগের কোনও কারণ ছিল না আমার জীবনে। আর এত কিছু করার জন্য আপনি কখনও কোনও কৃতজ্ঞতা প্রত্যাশা করেননি। আপনি এসবের বদলে আমার জীবনে বেশ কিছু নিয়ম বেধে দিয়েছিলেন। যা থেকে আমাকে পালাতে হত। আপনাকে না জানিয়েই আমি লুকিয়ে অনেক কিছু করতে চেয়েছি। আপনার ভয়ে আমি লুকিয়ে থেকেছি বইয়ের মাঝে। আমার ঘরে। বন্ধুদের সঙ্গে। তবে আপনি আমাকে সব সময় দোষারোপ করেছেন। অনেক কিছু নিয়েই। যা আমি করিইনি। বদলে আমাকে শাস্তি দিয়েছেন। আপনি আমার ওপর প্রতিনিধিত্ব করতে চেয়েছিলেন। একজন বাবা হিসেবে যদি ভাবি তাহলে হয়তো আপনাকে দোষী বলা যাবে না। তবে আমিও সমান ভাবে নির্দোষ। কারণ আমার মন যে অন্য কিছু চাইতো।

advertisement

আমি যদি সত্যিই আপনার দোষ নিয়ে ভাবি তাহলে এক জীবনে ভেবে হয়তো শেষ করতে পারবো না। আমার মনে হয় আমাদের দু'জনেরই একটা নতুন জীবন দরকার। তবে আমাদের কারও কাছেই আর সেই বয়স নেই, সময় নেই, আর একটা সুন্দর জীবন বাঁচার! তবুও বলবো এটাই শান্তির। আমাদের এই দূরত্বটাই সুখের।"

এভাবেই চিঠির মাধ্যমে কাফকা তাঁর বাবার সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন। কাফকা তাঁর চিঠিতেই বাবাকে লিখেছেন, " এখন হয়তো বয়সের ভারে আপনি একজন শান্ত ও নরম মনের মানুষ। তবে আমি যার কথা বলছি, সেও আপনি। যে আমার ছোটবেলার স্মৃতিতে আজও ভয়ঙ্কর। যা আমি কখনও ভুলতে পারি না। তবে আপনার দিক থেকেও হয়তো আপনি সঠিক ছিলেন। আপনি যেভাবে বড় হয়েছিলেন ঠিক সেভাবেই আমাকে ভয় দেখিয়ে, বকা দিয়ে, নিয়ম বেধে দিয়ে বড় করতে চেয়েছিলেন। কারণ আপনিও চাইতেন যাতে আমি একজন সাহসী ছেলে হই।"

advertisement

কাফকা তাঁর চিঠিতে আরও লিখেছেন, " আমি সেই সময় হয়তো আপনার কাছে একটু উৎসাহ, একটু বন্ধুসুলভ ব্যবহার চাইতাম। চাইতাম আপনি আমার জন্য যে রাস্তা গুলো বন্ধ করে দিয়েছেন সেগুলো খুলে দিন। আমি মন থেকে বেঁচে উঠি। আপনি যে পথ আমার জন্য ঠিক করেছিলেন, সে পথে হাঁটা আমার হয়নি। আমি আজ এবং তখনও আপনার কাছে একটু উৎসাহ আশা করেছিলাম নিজের জন্য। আপানার নিজের বেশ কিছু বিষয়ে জোড়ালো মতবাদ ছিল। আপনি চাইতেন তা আমার ওপর চাপিয়ে দিতে।" তবে কাফকা তাঁর চিঠিতে না বলা কথা লিখতে গিয়ে বাবার প্রতি ভালবাসার কথাও লেখেন।"আমি অনেক সময় সামলাতে না পেরে আপনাকে কষ্ট দিয়েছি। যা পরে আমাকে অনেক বেশি ভাবাত। কষ্ট দিত। কিন্তু আপানাকে কখনো দেখিনি কোনো কিছু নিয়ে কষ্ট পেতে। আপনি সব সময় নিজের কথাতেই দৃঢ় ছিলেন। আমি কখনই আপনার মতো হতে পারিনি। হতে চায়নি। তবে আপনি আমার খারাপ চাইতেন না জানলেও, আপনার প্রতি ভয় আজও কাটেনি আমার। বাবা শব্দটা আমার কাছে ভয় মেশানো একটা ভালবাসার মানুষ। যার মনের কাছে আমি কখনই পৌঁছতে পারিনি।"

advertisement

সেরা ভিডিও

আরও দেখুন
১৭ রাজ্য পাড়ি দিয়ে শান্তির বার্তা — স্কুটিতে একা অভিযানে বর্ধমানের শিক্ষিকা
আরও দেখুন

ছোটবেলা ভয়ের মধ্যে কাটলেও কাফকা চেয়েছিলেন বাবার সঙ্গে একাত্ব হতে। বাবা তাঁকে বুঝবেন তাও চাইতেন। তাঁর বাবা কষ্ট করে বড় হয়েছিলেন। চরম বাস্তববাদী ছিলেন। আর কাফকা ছোট থেকেই ভাবুক ও লেখক মনের মানুষ। এই দুইয়ের মিল হওয়া যে চট করে সম্ভব নয়।

বাংলা খবর/ খবর/ফিচার/
Fathers day 2020|বাবাকে ভয় পেতেন ফ্রানৎস কাফকা ! চিঠির মাধ্যমে বাবার মন ছুঁতে চেয়েছিলেন তিনি !
Open in App
হোম
খবর
ফটো
লোকাল