ওজন কমিয়েছিলেন তাপস পাল। বেশ অনেকটাই। ডায়েটিংও করেছিলেন, নিয়ম মেনেই! তখন ২০১২ কী ১৩... ইস্টার্ণ বাইপাসের ধারে চলছিল তাঁর যাত্রা 'মন বলছে কেউ আসবে'-র রিহার্সাল ! প্রথম এক ঝটকায় চেনা দায়, এই সেই তাপস পাল ? বেশ অনেকগুলো বছর বাদে এই যাত্রা দিয়েই মঞ্চে কামব্যাক করছিলেন একসময়ের সুপারডুপার হিট তাপস পাল-শতাব্দী জুটি! রিহার্সালের দিনগুলোর স্মৃতি এখনও তরতাজা যাত্রার লেখক পেলের মনে, '' যাত্রার রিহার্সাল করায় লেখক! সেইমতো প্রায় রোজই তাপস দা-র সঙ্গে দেখা হত! প্রচণ্ড বেশি সরল একটা মানুষ ছিলেন। অত্যধিক সারল্যের কারণে অনেকে ওঁকে বোকাও ভেবে ফেলত ! আমার মনে হয়, উনি যে বদনাম কুড়িয়েছেন, তাও কিন্তু অতিরিক্ত সারল্যের কারণেই। যাঁরা জটিল হন, তাঁরা ঠিক কোনও না কোনও বুদ্ধি খাটিয়ে পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে যান।'
advertisement
পুরনো দেরাজ খুলল, 'তাপস দার মুখস্থ বিদ্যা খুব কম ছিল। মাঝেমাঝেই ডায়ালগ ভুলে যেতেন। যাত্রায় যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের অনেকেই অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল। সেইসময় তাপস পাল সাংসদও ছিলেন। রিহার্সালে এসে প্রথম কাজ ছিল, সবার খোঁজ নেওয়া, কার মেয়ের পড়াশোনা ঠিকমত হচ্ছে না, কার বাড়িতে হাঁড়ি চাপল না... সব খবর রাখতেন ! বলতেন, ''আভিনয় করতে গেলে কিন্তু ঠিক করে খাওয়া-দাওয়া করতে হবে!' তাপসা দা'র আলাদা একটা অ্যাটিট্যুইউ ছিল! খুব খেতে ভালবাসতেন! খেতেও পারতেন! যদিও পরের দিকে খাওয়ার পরিমাণ অনেকটাই কমে গিয়েছিল! তবু বলতেন, আজ কী মাছ আছে ? চাড়াপোনা? একটু বেশি করে কপি দাও তো!''
তরুণ মজুমদারের চিত্রনাট্য লেখা তখন শেষ। হন্যে হয়ে একটি নতুন ছেলের খোঁজ করছেন। অনেকেই আসছেন, কাউকেই মনে ধরছে না পরিচালকের। একদিন শ্রীনিবাস চক্রবর্তী বছর কুড়ি-একুশের একটি ছেলেকে বগলদাবা করে ঢুকলেন। তরুণ মজুমদার কোনওকালেই খুব বেশি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতেন না, এখনও করেন না! কিন্তু সেদিন মনে মনে ভেবেছিলেন, এই ছেলেটিই ‘দাদার কীর্তি’র ফুলদা বা কেদার!
সেই শুরু...আর পিছন ফিরে দেখতে হয়নি তাপস পালকে! ‘চরণ ধরিতে দিয়ো গো আমারে’ গানটির একটি দৃশ্যেই আমবাঙালির হৃদয় জিতে নিলেন । ‘দাদার কীর্তি’ (১৯৮০) প্রচুর ব্যবসা করল বক্স-অফিসে ৷ ঠিক পরের বছরই বিজয় বসুর ‘সাহেব’ (১৯৮১)। তাপস পালকে দেখতে ভিড় জমালেন দর্শক। ছবিটিও বক্স-অফিসে সফল। টালিগঞ্জপাড়ায় চালু ছিল মহানায়ক উত্তমকুমারের সবচেয়ে সুন্দর হাসি তাপস পালের। সেই হাসির প্রশংসা করেছিলেন খোদ মাধুরী দীক্ষিতও! তাঁর প্রথম ছবি ‘অবোধ’ (১৯৮৪) -এর নায়ক তাপস পাল। মাধুরী বলেছিলেন, তাপস পাল আমার প্রথম নায়ক। খুব ভাল মানুষ। ওঁর হাসিটা খুব মিষ্টি।”
