তবে সাধারণভাবে মধুমেহ রোগ বোঝা না গেলেও পরীক্ষা করার পরেই তা বোঝা সম্ভব। মধুমেহ রোগ সারাতে জীবনযাত্রায় বেশ কিছু পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। খাদ্যাভাস এবং সচেতন থাকলে মধুমেহ রোগ থেকে দূরে থাকা সম্ভব। এর পাশাপাশি বিশেষজ্ঞরা নিয়মিত শরীরচর্চারও পরামর্শ দেন।
বিগত দুই দশকে টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েছেন অনেকে। এই নিয়ে যথেষ্ট চিন্তার কারণ রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। মূলত যাঁদের বয়স ৫০ বছরের বেশি তাঁরাই সব থেকে বেশি এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে মহিলা এবং পুরুষ উভয়েরই ডায়াবেটিস ২-এ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
advertisement
প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক টাইপ ২ ডায়াবেটিস কী?
‘টাইপ ২ ডায়াবেটিস মূলত একটি ক্রনিক সমস্যা। শরীরে ইনসুলিন হরমোনের কার্যক্ষমতা কমে গেলে এই সমস্যা দেখা দেয়। ইনসুলিন হরমোন মূলত শরীরে রক্তের শর্করার মাত্রা বজায় রাখে। ইনসুলিনের মাত্রায় হেরফের কেন হয়? দু'টি কারণের জন্য এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
প্রথমত শরীরে ইনসুলিন তৈরি স্বাভাবিকের থেকে কম হয় অথবা ইনসুলিন কোষগুলি সঠিক মাত্রায় কাজ করতে পারে না। রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পেলে হার্ট, চোখ, কিডনি সহ একাধিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকী স্নায়ুতন্ত্রের উপরও প্রভাব পড়তে পারে। সব থেকে কঠিন বিষয়, মধুমেহ রোগের উপসর্গগুলি থেকে সাময়িক স্বস্তি পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু পুরোপুরি ভাবে সারিয়ে তোলা সম্ভব হয় না।
কী কী উপসর্গ দেখা দিতে পারে?
টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে যে যে উপসর্গগুলি দেখা দিতে পারে তা হল-
অত্যধিক বেশি তৃষ্ণা অনুভব করা
মূত্রের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া
চোখে আবছা দেখা
মুড সুয়িং
হাত ও পায়ে অসাড় অনুভব হওয়া
দ্রুত হারে ওজন কমে যাওয়া।
টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে সাধারণত এই উপসর্গগুলি প্রকাশ পায়।
কাদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি?
মধ্যবয়সী এবং যাদের বয়স বেশি তাদের টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে অল্প বয়সে যাঁরা ওবেসিটি-র সমস্যায় ভুগছেন তারাও এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। যদি পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে তুলনা করা হয় তাহলে মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে প্রায় দ্বিগুণ। এই সমস্যার অন্যতম কারণ শরীরে অতিরিক্ত মেদ। অতিরিক্ত ফ্যাটজাতীয় খাবার খেলে শরীরে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত মেদ জমতে থাকে। যার ফলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস দেখা দিতে পারে।
এই নিয়ে বেশ কিছু গবেষণা হয়েছে। তাতে জানা গিয়েছে, মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমে। সেই কারণে তাদের টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। অন্য দিকে, মহিলাদের ক্ষেত্রে সাধারণত হিপ এবং পায়ে মেদ জমে।
মেদ মূলত দুই প্রকার হয়। প্রথমটি হল সাবকিউটেনিয়াস ফ্যাট। যা মহিলাদের পায়ে এবং হিপে জমা হয়। অন্য দিকে, আর এক প্রকার ফ্যাট হল অভ্যন্তরীন ফ্যাট। যা মূলত ক্ষতিকারক। শরীরে অভ্যন্তরীন ফ্যাটের আধিক্য দেখা দিলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
যে সব মহিলা ওবেসিটি-তে ভুগছেন তাঁদের ক্ষেত্রেও টাইপ ২ ডাযাবেটিস দেখা দিতে পারে। যদি পুরুষ এবং মহিলা উভয়েরই বডি মাস ইনডেক্স বা BMI সমান থাকে তাহলেও মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এছাড়াও মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের অ্যালকোহল গ্রহণ এবং ধূমপানের মাত্রা অনেক বেশি। সেই কারণেও তাঁদের টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
কী কী সমস্যা তৈরি হতে পারে?
স্ট্রোক, কিডনির সমস্যা, হার্টের সমস্যা সহ একাধিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষজ্ঞদের একাংশ একে সাইলেন্ট কিলারও বলেন। এর পিছনে তাঁদের যুক্তি, সেই ভাবে কোনও উপসর্গ প্রকাশ না করে একাধিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকল করে দেয় টাইপ ২ ডায়াবেটিস। তাই সঠিক সময়ে সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।
কী ভাবে রক্ষা পাওয়া সম্ভব?
টাইপ ২ ডায়াবেটিস থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য খাওয়ার দিকে নজর দিতে হবে। জাঙ্ক ফুড, অতিরিক্ত শর্করা জাতীয় খাবার, মদ্যপান বর্জন করতে হবে। কারণ এতে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। এছাড়াও নিয়মিত শরীরচর্চা করা প্রয়োজন।
টাইপ ২ ডায়াবেটিস থেকে বাঁচতে কী কী খাবেন?
অনেকেই মধুমেহ রোগে আক্রান্ত হলেও কী কী খাবেন সে নিয়ে ধন্দে থাকেন। বুঝে উঠতে পারেন না কোন ধরনের খাবার খাওয়া উচিত এবং কোন খাবার খাওয়া উচিত নয়। এই বিষয়ে জেনে নেওয়া যাক এক ঝলকে-
যে যে ফল মধুমেহ রোগীরা খেতে পারবেন তা হল- আপেল, কমলা লেবু, আঙুর, তরমুজ, পিচ এবং শশা।
সবজির মধ্যে মোটামুটি সব ধরনের সবজি খাওয়া যেতে পারে। তবে যে যে সবজি অবশ্যই খাদ্য তালিকায় রাখা দরকার তা হল ব্রোকোলি, ফুলকপি, স্পিনাচ ইত্যাদি। শাক খাওয়া যেতে পারে। দানা শস্যের মধ্যে ওটস, ব্রাউন রাইস ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে।
এছাড়াও খাদ্যতালিকায় যে খাবারগুলি অবশ্যই রাখা দরকার তা হল রুটি, বিনস, আমন্ড, ওয়াল নাট, চামড়া ছাড়িয়ে নেওয়া চিকেন, সামুদ্রিক মাছ। সামান্য পরিমাণে খাসির মাংস খেতে পারেন আক্রান্তরা। তবে রেড মিট যতটা সম্ভব না খাওয়া শরীরের পক্ষে ভালো। তেলের ক্ষেত্রে অলিভ অয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে। এর পাশাপাশি মিষ্টিজাতীয় পানীয় সম্পূর্ণ বর্জন করতে হবে। চিনি ছাড়া চা, চিনি ছাড়া ব্ল্যাক কফি, জল পান করতে পারেন।
কোন কোন খাবার সম্পূর্ণ বর্জন করতে হবে?
পর্ক, বিফ, চামড়া সমেত মুরগির মাংস খাওয়া সম্পূর্ণ বর্জন করতে হবে। যে কোনও রকম মিষ্টি খাওয়া বন্ধ করতে হবে। এতে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। আইসক্রিম খাওয়া বন্ধ করা দরকার। নরম মিষ্টিযুক্ত পানীয় পান করা বন্ধ করতে হবে। চিপস এবং মাইক্রোওয়েভে তৈরি পপকর্ন খাওয়া বন্ধ করা দরকার। প্রসেসড ফুড খেলেও শরীরে ক্ষতি হতে পারে। মধু বা এই জাতীয় কোনও মিষ্টি খাবার খাওয়া বন্ধ করতে হবে।
সঠিক আহার গ্রহণ করলে এবং নির্দিষ্ট কিছু খাবার খাওয়া সম্পূর্ণ বর্জন করলে মধুমেহ রোগ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।