শুধুমাত্র কেরিয়ারেই সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন এমনটা নয়, ব্যক্তিগত জীবনেও বেশ সাহসী ছিলেন পারভিন ববি। তৎকালীন রক্ষণশীল সমাজে ছোট পোশাক পরা থেকে শুরু করে প্রকাশ্যে ধূমপান কিংবা মদ্যপানও করা নিয়েও বহুবার সংবাদমাধ্যমে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিলেন। এমনকী লিভ-ইন রিলেশনশিপেও ছিলেন অভিনেত্রী। বলা ভাল, তাঁর জীবনের গল্প হার মানাবে পর্দার চলচ্চিত্রকেও।
গুজরাতের এক পাশতুন পরিবারে জন্ম অভিনেত্রীর। মাত্র ১০ বছর বয়সে হারিয়েছিলেন বাবাকে। মেধাবী পারভিনের পড়াশোনা কনভেন্টে। ১৯৭২ সালে মডেলিংয়ের দুনিয়ায় পা রাখেন পারভিন বাবি। আর তার পরের বছরেই ‘চরিত্র’ ছবির হাত ধরে প্রবেশ করেন রুপোলি দুনিয়ায়। ওই ছবিতে তাঁর বিপরীতে দেখা গিয়েছিল খ্যাতনামা ক্রিকেট তারকা সেলিম দুররানিকে।
advertisement
আরও পড়ুন-‘ভয়ঙ্কর মানুষ! ওর জেলে যাওয়া উচিত’, এই বিশেষ কারণেই রাজকে ডিভোর্স দিলেন পরী, ফাঁস হল কারণ
এরপর অবশ্য পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি পারভিনকে। একে একে নানা ধরনের চরিত্রে অভিনয় করে বলিউডে নিজের জমি শক্ত করেছিলেন। তাঁর ঝুলিতে রয়েছে ‘ত্রিমূর্তি’, ‘দিওয়ার’, ‘কালা সোনা’, ‘অমর আকবর অ্যান্টনি’, ‘চোর সিপাহি’, ‘শান’, ‘ক্রান্তি’, ‘কালিয়া’, ‘নমক হালাল’-এর মতো হিট ছবি। এর মধ্যে ক্রান্তি ছবিতে ‘মারা ঠুমকা’ গানে নাচের জাদু ছড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি। সেখানে ছবির প্রধান নায়িকা নৃত্য পারদর্শী হেমা মালিনীর নাচও ফিকে হয়ে গিয়েছিল। যাইহোক, ১৯৮৮ সালে পারভিন বাবি অভিনয় করেছিলেন ‘আকর্ষণ’ ছবি। এটাই ছিল তাঁর কেরিয়ারের শেষ ছবি।
আরও পড়ুন-বিছানায় শয্যাশায়ী জিনাত আমন! ১০ দিন ধরে ভয়ঙ্কর ফ্লু-তে আক্রান্ত, এখন কেমন আছেন অভিনেত্রী?
পেশাগত জীবন তো বটেই, তাঁর ব্যক্তিগত জীবনও ছিল রঙিন। ড্যানির সঙ্গে লিভ-ইন সম্পর্কে ছিলেন পারভিন। সেসব নিয়ে অবশ্য রাখঢাক ছিল না। এরপর কবির বেদীর সঙ্গেও সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন অভিনেত্রী। সেটাও খোলাখুলি জানিয়েছিলেন। এমনকী অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গেও পারভিনের ঘনিষ্ঠতা নিয়ে জোর চর্চা হয়েছে। অবশেষে পারভিনের জীবনে আসেন পরিচালক মহেশ ভাট। অভিনেত্রীর প্রেমে পাগল হয়ে স্ত্রী-সন্তানদেরও ছেড়েছিলেন মহেশ। তবে পারভিনের কিছু অদ্ভুত আচরণের কারণে তাঁকে ছেড়ে ফের নিজের সংসারে ফিরে যান তিনি। শোনা যায়, একবার রাস্তায় অর্ধনগ্ন অবস্থায় দৌড়চ্ছিলেন পারভিন। অনেক কষ্টে তাঁকে নিয়ন্ত্রণে এনে হাসপাতালে নিয়ে যান মহেশ। চিকিৎসক জানান, অভিনেত্রীর ‘প্যারানয়েড স্কিৎজোফ্রেনিয়া’ রয়েছে। ধীরে ধীরে পারভীনের অবস্থা খারাপ হতে থাকে।
এরপর শান্তির সন্ধানে অভিনেত্রী আধ্যাত্মিক গুরু ইউ.জি. কৃষ্ণমূর্তিকে নিয়ে বিদেশ ভ্রমণ শুরু করেন। এই সময় আমেরিকার জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়, কারণ তিনি নিজের নাগরিকত্বের কোনও প্রমাণ দিতে পারেননি। ভারতীয় দূতাবাসে খবর পৌঁছলে উদ্ধার করা হয় পারভিনকে। একটা সময় ছিল সৌন্দর্য-চেহারা সব কিছুই নষ্ট হয়ে যায় তাঁর, এমনকী মানুষও তাঁকে এড়িয়ে চলতে শুরু করে। নিভৃতেই থাকতেন এক সময় পর্দায় রাজত্ব করা অভিনেত্রী। অবশেষে ২০০৫ সালে তাঁর নিজের অ্যাপার্টমেন্টে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় পারভিনকে।